গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে হরিপুর-চিলমারী ঘাটে নির্মাণাধীন তিস্তা সেতুর সংযোগ সড়ক ও নদী শাসনের জন্য ব্লক তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও প্রকল্পের মালামাল রাখার জন্য সেতু এলাকায় জমি ভাড়া নিলেও সেই টাকা পরিশোধ না করার অভিযোগ আছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
সূত্র মারফত জানা গেছে, সুন্দরগঞ্জের হরিপুর থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী ঘাট পর্যন্ত তিস্তা নদীর ওপর প্রায় দেড় হাজার মিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয় গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে।
৭৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বরাদ্দে নির্মাণ হবে তিস্তা সেতু। এর মধ্যে ২৭৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে। সড়ক নির্মাণে ব্যয় হবে ১০ কোটি ২৫ লাখ টাকা, নদী শাসনে আট কোটি ৫৫ লাখ টাকা এবং জমি অধিগ্রহণে ব্যয় হবে ছয় কোটি টাকা। সেতুটিতে পিলার থাকবে ৩০টি। সেতুর উভয় পাশে নদী শাসন করা হবে ৩.১৫ কিলোমিটার করে। সেতুর উভয় পাশে সড়ক নির্মাণ করা হবে ৮৩ কিলোমিটার।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যা, এলজিইডির ব্যবস্থাপনায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের করছেন চায়না স্টেট ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তৈরীকৃত ব্লকে ব্যবহার করা হচ্ছে তিস্তা নদী থেকে উত্তোলিত পলিমাটি মিশ্রিত ময়লা বালু। এতে তৈরিকৃত এসব ব্লকের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি নিম্নমানের ব্লক তৈরীর প্রতিবাদ জানিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতেই ঠিকাদারের লোকজন ভয়-ভীতি দেখিয়ে আবারও ব্লক তৈরীর কাজ করেছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, তিস্তা নদী থেকে তোলা পলিমাটি মিশ্রিত বালু দিয়েই বানানো হচ্ছে ব্লক। এসব ব্লকের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন রাখেন সাধারণ জনগণ। ব্লকের ওপর দিয়ে হেটে যেতে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে এসব ব্লক। অন্য দিকে প্রকল্পের মালামাল রাখার জন্য সেতু এলাকার অনেকের ফসলি জমি চুক্তি ভিক্তিক লিজ (ভাড়া) নিলেও কৃষকরা টাকা না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না স্টেট ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশনের বিরুদ্ধে। ফলে অনিয়মের প্রশ্নবিদ্ধ এখন নির্মাণাধীন তিস্তা সেতু প্রকল্প!
জমি মালিকরা অভিযোগ করে বলেন, সেতুর নির্মাণ সামগ্রী রাখার জন্য তাদের কাছে ফসলি জমি ভাড়া নেয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কৃষকদের কোনো টাকা না দিয়ে শর্তভঙ্গ করে এসব জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। অনিয়মের প্রতিকার চেয়েও কোনো সুরাহা মিলছে না। উল্টো ঠিকাদারের লোকজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয় দেখায় বলে অভিযোগ কৃষকদের।
দীর্ঘদিনের প্রত্যাশীত স্বপ্নের তিস্তা সেতুর সংযোগ সড়কে এসব অনিয়মের ঘটনায় স্থানীয়দের পাশাপাশি ক্ষুদ্ধ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সচেতন মহল। উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের প্রাক্তন চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম বলেন, নদী শাসনের জন্য ব্লক গুলো অত্যন্ত নিম্নমানের হচ্ছে। অবস্থায় দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে জমি মালিকদের টাকা পরিশোধের দাবিসহ সরকারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
অন্য দিকে নিম্নমানের ব্লক তৈরীর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না স্টেট ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশনের সাইট ইনচার্জ কিসুট ট্রু। একই সঙ্গে তিনি চুক্তি অনুযায়ী জমি মালিকদের টাকা পরিশোধের দাবিও করেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হয় নি সেতু নির্মাণের তদারকি প্রতিষ্ঠান স্থানীয় সরকার বিভাগ এলজিইডির উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা জানান গাইবান্ধার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী।
উল্লেখ্য যে,২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি নদীপারের লাখো মানুষের স্বপ্নের দ্বিতীয় এই তিস্তা সেতুর আনুষ্ঠানিক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ পর্যন্ত সেতুটির ২৯০টি পাইলের মধ্যে ১০১টি পাইল বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা আছে বলে জানা গেছে।