অর্থবছরের নয় মাসে ৪৩.৫৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রফতানি
বাংলাদেশ থেকে চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) বিশ্ববাজারে ৪ হাজার ৩৫৫ কোটি ৪৭ লাখ ৮০ হাজার বা ৪৩ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রফতানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ পর্যন্ত রফতানি হয়েছিল ৪ হাজার ১৭২ কোটি ১৬ লাখ ২০ হাজার ডলারের পণ্য। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে এমন দাবি করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)।
ইপিবি প্রকাশিত রফতানি তথ্য নিয়ে খাতসংশ্লিষ্টদের অনাস্থা কাটছে না। তাদের মতে, প্রতি মাসে প্রকাশিত রফতানি পরিসংখ্যান প্রতিবেদনে রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোর বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। ইপিবি প্রকাশিত পরিসংখ্যানে রফতানির প্রবৃদ্ধি প্রকাশ পেলেও ক্রয়াদেশ সংকটে কারখানাগুলোয় রফতানি নিম্নমুখী। কাস্টমস কর্তৃক চলতি অর্থবছরের সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) মোট রফতানির অ্যাসেসড ভ্যালু ২৬ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে ইপিবি প্রকাশিত পরিসংখ্যান বলছে, ওই সময়ে বাংলাদেশ থেকে রফতানি হয়েছে ৩৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। বিভ্রান্তিকর এ চিত্র নিয়ে তৎপর হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ও।
পরিসংখ্যানে বড় ধরনের ফারাক রফতানির আড়ালে বিদেশে অর্থ পাচারের ইঙ্গিত বহন করছে কিনা এ নিয়ে অনেকটা উদ্বেগ রয়েছে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলে। এ ফারাকের কারণ অনুসন্ধান ও ফারাক কমিয়ে আনার বিষয়ে করণীয় নির্ধারণেও পদক্ষেপ নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। সম্প্রতি এ বিষয়গুলো দেখতে তিনটি সংস্থাকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি ৩১ মার্চের মধ্যে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেয়ার কথা ছিল। অর্থবছরের নয় মাসে ৪৩.৫৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রফতানি যদিও তা সম্পন্ন হয়নি বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
ইপিবির গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থমূল্য বিবেচনায় বাংলাদেশ থেকে রফতানি হওয়া শীর্ষ পণ্যগুলো হলো পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষিপণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য ও হোম টেক্সটাইল।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে দেশের মোট রফতানির ৯১ দশমিক ৮৫ শতাংশজুড়ে ছিল এসব পণ্য। আগের অর্থবছরের প্রথম নয় মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে পোশাক রফতানি বেড়েছে ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ কমেছে। কৃষিপণ্য রফতানি বেড়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি কমেছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। হোম টেক্সটাইল পণ্য রফতানি কমেছে ২৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ। শীর্ষ পণ্যগুলোর মধ্যে পোশাক ও কৃষি ছাড়া বাকিগুলোর রফতানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।
ইপিবি প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থমূল্য বিবেচনায় বাংলাদেশ থেকে মোট রফতানির ৮৫ দশমিক ৪১ শতাংশ তৈরি পোশাক। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ পর্যন্ত বিশ্ববাজারে ৩ হাজার ৭২০ কোটি ২৬ লাখ ৩০ হাজার ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ, আগের অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে যা ছিল ৩ হাজার ৫২৫ কোটি ২৪ লাখ ৪০ হাজার ডলার। নিটওয়্যার তৈরি পোশাক রফতানিতে ৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ওভেনে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে দশমিক ৪৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ থেকে গত মার্চে ৫১০ কোটি ২৫ লাখ ৭০ হাজার ডলারের পণ্য বিশ্ববাজারে রফতানি হয়েছিল। ২০২৩ সালের একই মাসে রফতানি হয়েছিল ৪৬৪ কোটি ৩৯ লাখ ৪০ হাজার ডলারের পণ্য। সে হিসাবে রফতানি বেড়েছে ৯ দশমিক শূন্য ৮৮ শতাংশ।
ইপিবির পরিসংখ্যান নিয়ে রফতানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ডলারের হিসাবে কীভাবে রফতানি বাড়ল, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। সরকারি তথ্যের সঙ্গে আমাদের হিসাব কোনোভাবে মিলছে না। পরিমাণ যদি কমে থাকে, তাহলে ডলারে বাড়ল কেন? আবার বড় রফতানিকারকরা বলছেন, তাদের রফতানি কমেছে। তাহলে রফতানি বাড়লটা আসলে কাদের?