আসাদুজ্জামান ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতাঃ
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা রাজাগাঁও ইউনিয়নে উত্তর বঠিনা এলাকার চায়না কমলা চাষ করেছেন জয়নাল আবেদীন। তবে ঠাকুরগাঁওয় সর্বপ্রথম পীরগঞ্জে দার্জিলিংয়ের কমলা চাষ করেছেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষক জয়নাল আবেদীন । সুমিষ্ট ওই দার্জিলিং জাতের কমলা উৎপাদিত হচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলা ১৪ নং রাজারগাঁও ইউনিয়নে উত্তর বঠিনা এলাকায়। কিন্তু তিনি ৩০০টি চায়না কমলা চাষ করেছেন।
দার্জিলিংয়ের পাহাড়ী কমলা স্বাদে, গন্ধে ও পুষ্টিগুণে জগদ্বিখ্যাত হিসেবে স্বীকৃত। এই কমলা খেতে খুবই মিষ্টি ও পুষ্টিকর। ফলের আকারও তুলনামূলক বড়। তা ছাড়া প্রতিটি গাছে কমলা ধরে প্রায় ২০০ থেকে ১ হাজারটি পর্যন্ত। তবে চায়না কমলা গাছে ধরে দুই হাজারের উপরে।
জয়নাল আবেদীন চায়না জাতের কমলার চাষ শুরু করে ২০১৯ সালে। ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সমাপ্তকৃত কমলা উন্নয়ন প্রকল্পের হর্টিকালচার সেন্টার থেকে নেওয়া দার্জিলিং জাতের কমলার চারা এবং চায়না চারা দিয়ে। হর্টিকালচার সেন্টার কর্তৃপক্ষের কথামতে জয়নাল আবেদীন তার ২ একর ধানের জমিতে ৩০০টি দার্জিলিং ও চায়না জাতের কমলার চারা রোপণ করেন।
সঠিক পরিচর্যার কারণে রোপণের ৩ বছর পর থেকেই গাছগুলো ফল দেওয়া শুরু করে। ২ বছর ধরে তিনি কমলা পেয়ে আসছেন। এখন বাগানের কমলা মানুষের আকর্ষণ বিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে ১০ বছর বয়সী প্রত্যেকটি গাছে প্রায় ৮০০-৯০০টি কমলা ধরেছে। কমলাগুলো বেশ বড় আকৃতির, এক কেজিতে ৫-৬টি অর্থাৎ চায়না ৮০/৯০ টি প্রত্যেকটির ওজন ২০০-২৫০ গ্রাম। কমলাগুলো সুমিষ্ট, তবে গাছ থেকে পাড়ার ২-৩ দিন পরে খেলে বেশি মিষ্টি হয়।
কমলার কোয়াগুলো ঠোঁটের মতো রসালো টসটসে, তাই খুবই আকর্ষণীয়। তা ছাড়া, কমলার আঁশ কম হওয়ায় খোসা খুব সহজে ছাড়ানো যায়। প্রথমদিকে জয়নাল আবেদীন কমলাগুলো বাজারে বিক্রি নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। ২০২১ মৌসুমের শুরুতে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি শুরু করলেও, পরে দাম কমে ১২০ টাকা কেজি হয়। কিন্তু ২০২১ সালে মৌসুমের শুরুতে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি শুরু করে চারদিকে এই কমলার খ্যাতির জন্য দাম বেড়ে হয় ২৫০ টাকা হয়। ২০২২ প্রতি কেজি কম মূল্যে ৩০০ টাকা। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার জন মানুষ তার বাগানের কমলা খেতে ও দেখতে আসেন।
জয়নাল আবেদীন বলেন, বর্তমানে আমার কমলা বাগানটি কৃষি-পর্যটনকেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করতে চাই। পাশাপাশি ইতোমধ্যে ২ হাজারের বেশি অরিজিনাল কমলার চারা উৎপাদন করেছি। যেহেতু উত্তরাঞ্চলে হিমালয়ের পাদদেশে সমতল ভূমি রয়েছে। তাই দার্জিলিং কমলা, চায়না কমলা উত্তরাঞ্চলে হওয়ার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। এটি শুধু কমলার বাগান হবে না, পাশাপাশি ট্যুরিজমের কেন্দ্রে পরিণত হবে।
কৃষি অফিসারের মতে, উত্তরাঞ্চলের মাটির পিএইচ অম্লমান হওয়ায় এবং হিমালয়ের শীতার্ত আবহাওয়া বিরাজমান থাকায় ভারতের দার্জিলিং জাতের কমলার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। সানবার্ন কমাতে বাগানে শেড ট্রি দিতে হয়। কমলায় রস হওয়ার জন্য শীতকালেও ফ্লাডিং পদ্ধতিতে সেচ দিতে হয়। বাগানের ওয়াটার সাকার নিয়মিতভাবে ছাঁটাই করতে হয়। কমলার ফ্রুট ফ্লাই দমনের জন্য ইস্পাহানির ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করা যেতে পারে। বছরে কমপক্ষে তিনবার সার দিতে হবে। মিষ্টতা বাড়ানোর জন্য প্রচুর জৈবসার দিতে হবে। স্ক্যাবিস রোগ দমনে গাছে নিয়মিতভাবে বোর্দো মিক্সচার দিতে হবে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সুত্রে মতে কমলা চাষের সফলতা দেখে অনেকে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন, কেউ কেউ আবার কমলা চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। এটি পার্মানেন্ট না হলেও বর্তমানে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়েছে। যদি কোনো নতুন উদ্যোক্তা কমলা চাষ করতে চায়, সে ক্ষেত্রে তাদের চাষের পদ্ধতি, ভালো মানের চারা পাওয়ার নিশ্চয়তাসহ সব ধরনের তথ্য ও প্রযুক্তি দিয়ে সাহায্য সহযোতিা করতে থাকব।
উল্লেখ্য, দার্জিলিং ও চায়না কমলা বাংলাদেশে আবাদের সূচনা হয় ২০১২ সালে। হর্টিকালচার সেন্টার ঠাকুরগাঁও থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সমাপ্তকৃত কমলা উন্নয়ন প্রকল্পে (২০১২) কিছু দার্জিলিং জাতের কমলার চারা অতিরিক্ত ছিল। সেখান থেকে চারা সংগ্রহ করে ২ একর জমিতে ৩০০টি চারা রোপণ করেন কৃষক জয়নাল আবেদীন ।
এই নিউজ পোর্টাল এর কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি ও দণ্ডনীয় অপরাধ।