নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা চরএলাহী নদী ভাঙ্গনে সহশ্রাধিক ঘর-বাড়ি ও বিস্তীর্ণ ফসলি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে।
প্রতিদিন ভাঙনে নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা। নিজেদের চোখের সামনেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি। বুকফাঁটা আর্তনাদ নিয়ে চেয়ে চেয়ে দেখছে পরিবারের লোকজনরা।
চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি। বলার মতো ভাষা হারিয়ে ফেলেছে নদী ভাঙন এলাকার মানুষজন। তাদের এই অসহায়ত্ব দেখার যেন কেউ নেই। এরমধ্যে অনেকে আবার ঘরবাড়ি ও আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কারো কারো আসবাবপত্রসহ ঘরবাড়ি নদীতে চলে গেছে।
নদীর স্রোতে ক্রমেই সর্বগ্রাসী হয়ে উঠছে। ভাঙছে দালান-বাড়ি-সড়ক-হাট-বাজার-স্কুল। ভাঙছে মানুষের মন। চোখের সামনে সবকিছু বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদীগর্ভে। ভাঙনের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে মানুষ ছুটছে অজানা গন্তব্যে। হাজার হাজার গৃহহীন মানুষের মাথা গোঁজার মতো ঠাঁই পর্যন্ত নেই। খোলা আকাশের নিচে কোনমতে বেঁচে আছে তারা।
হুমকীর মুখে পড়েছে গ্রাম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও ক্লিনিক।
কারো ঠাঁই হয়েছে বাঁধের ঢালে, আবার কারো অন্যের জমিতে। যারা এলাকায় কোথাও থাকার জায়গা পায়নি, তারা জীবিকার টানে পরিজনসহ ছুটেছেন অন্যত্র। প্রতিনিয়ত এদের দল ভারি হচ্ছে। বাড়ছে আশ্রয়হীনের সংখ্যা।
ভাঙন প্রতিরোধে নেই কোনো ব্যবস্থা। কোনো পুনর্বাসন কর্মসূচি নেই। ওপারে সন্দ্বীপের উড়িরচর, এপারে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চর এলাহী ইউনিয়ন। মধ্যখানে বয়ে চলেছে বামনী নদী। এ নদীর তীর ধরে চর এলাহীর বেশ কিছু গ্রাম ভাঙনে বিলীন। বাঁধের ওপরে হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ে বিপন্ন জীবনের দৃশ্যপট।
চর এলাহীর সবচেয়ে ভাঙনপ্রবণ এলাকা ক্লোজার ঘাট। বর্ষা আর শীত নেই, আষাঢ় আর শ্রাবণ নেই। ভাঙন এখানে কোনো ঋতুই মানে না। কিলোমিটারের পর কিলোমিটার ভেঙে চলেছে। ভাঙনের তীরে দাঁড়িয়ে অসহায় মানুষগুলোর নিঃশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
চর এলাহী ইউনিয়ন পরিষদ সূত্র বলছে, ২০০৩ সাল থেকে এই এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা বাড়তে থাকে। ইউনিয়নে প্রায় দুই হাজার পরিবার ভাঙনের শিকার। অন্তত তিন হাজার হেক্টর জমি বিলীন হয়েছে নদীতে। এদের কেউ বাঁধের পাশে, আবার অনেকে বিভিন্ন চরে আশ্রয় নিয়েছে। তবে ভাঙন রোধে কোনো কার্যকরি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সূত্র বলছে, ইউনিয়নের পূর্ব চর লেংটায় এরশাদ কলোনিতে ২৫০টি পরিবারকে দু একর করে জমি দিয়ে পুনর্বাসন করা হয়। এ কলোনি সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। সেখানে দুটি স্কুল, দুটি মসজিদ, একটি বাজার, একটি আশ্রয় কেন্দ্র ছিল। পাশে আরেকটি মাটির কিল্লায় ২৫টি পরিবার পুনর্বাসন করা হয়। সেখানেও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল। তবে তা বিলীন হয়ে গেছে।
ইউনিয়নের পূর্ব লেংটা, চর লেংটা, চর লেংটা পাঁচ নম্বর সিট, চর এলাহী, দক্ষিণ চর এলাহী, ও চর গাঙচিলের আংশিক নদীতে বিলীন হয়েছে। পূর্ব গাঙচিলে ৩৫০টি পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে একটি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও সেটি এখন ভাঙনের মুখোমুখি। এখানকার প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীতে হারিয়ে যাওয়ায় অন্তত সাত শ ছেলেমেয়ের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে আছে।
এলাকাবাসী জানান, ৫-৬ বছর আগে একবার ব্লক ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সে কাজ শেষ হয়নি। এরপর ভাঙন রোধে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। চর এলাহী, চর ফকিরাসহ ভাঙন কবলিত ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা সম্মিলিতভাবে যোগাযোগ মন্ত্রী ছাড়াও সংশ্লিষ্ট মহলে আবেদন জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
চর এলাহীসহ পার্শবর্তী ইউনিয়নে ভাঙন ঠেকাতে বামনী নদীতে আড়াআড়ি বাঁধের দাবি এলাকাবাসীর। তারা বলছেন, এলাকার মানুষদের বাঁচাতে অবিলম্বে নদী ভাঙন রোধে কার্যকরি ব্যবস্থা নিতে হবে।
এই নিউজ পোর্টাল এর কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি ও দণ্ডনীয় অপরাধ।