চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর ৭০ কিলোমিটার অংশে ৫ শতাধিক ড্রেজার বসিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র। এ কারণে হাজারো কোটি টাকা ব্যয় করেও বন্ধ করা যায়নি নদীভাঙন। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদীর জীববৈচিত্র্য, ইলিশসহ মৎস্যসম্পদ। বিভিন্ন সময় বালু উত্তোলন বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জোরালো দাবি উঠলেও শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। অবশেষে এবার নড়েচড়ে বসল জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্নিষ্টরা। এবারই প্রথম নদী ও ইলিশের অভয়াশ্রম রক্ষায় করণীয় নির্ধারণ করতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। আগামী ২১ মার্চ ঢাকায় এ সভা হবে।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সচিব মনজুরুল কাদের স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ তথ্য জানানো হয়। সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, এর আগে কখনও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন চাঁদপুরের নদী রক্ষা সম্পর্কে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে এ ধরনের সভা করেনি। তবে জেলা প্রশাসকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ও চাঁদপুর জেলার পদ্মা-মেঘনা নদীর অংশে নদীর নাব্য, ইলিশের অভয়াশ্রম রক্ষা, নদী ভাঙন রোধসহ নদীর সম্পদ রক্ষায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এবার অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে নদী রক্ষা কমিশনসহ সংশ্নিষ্টরা।
ঢাকার ওই সভায় চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের পাশাপশি ভূমি মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পরিবেশ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ও অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের হাইড্রোগ্রাফিক বিভাগের পদস্থ কর্মকর্তারাদের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে চিঠিতে।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, জেলা পর্যায়ে সমন্বয় সভা, ইলিশ রক্ষায় টাস্কফোর্সের সভা এবং নদী রক্ষা কমিটির সভায় সংশ্নিষ্টদের বক্তব্য এবং মতামতের রেজুলেশন ছিল। এর পর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআইডব্লিউটিএ জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেয়। তাদের চিঠিতে বলা হয়েছে, নদী থেকে যেভাবে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করা হচ্ছে; এতে নদীর কী ক্ষতি হচ্ছে, তা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, নদী গবেষক ও ইলিশ গবেষক উল্লেখ করেছেন। তাদের মতামতের ভিত্তিতে নদী এবং ইলিশ সম্পদ রক্ষার জন্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনে চিঠি দেওয়া হয়। এ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন এ সভা আহ্বান করেছে। নদীর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
জানা গেছে, চাঁদপুর অঞ্চলের নদী থেকে গত কয়েক বছর ধরেই অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করছে ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র। ফলে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করেও নদীভাঙন প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। নদীভাঙন ঠেকাতে বিভিন্ন সময় সংশ্নিষ্ট সরকারি দপ্তর ও স্থানীয়রা বিরোধিতা করলেও বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে প্রভাবশালী ওই চক্রটি।