দুই মৌসুমের মন্দা কাটিয়ে প্রাণ ফিরল কক্সবাজারে
ঈদের আগে-পরে মিলিয়ে এবার টানা ৯ দিনের অবসরের সুযোগে দেশের প্রধান পর্যটননগরী কক্সবাজার যে লোকারণ্য হয়ে যাবে, তার নমুনা দেখা দিল ঈদের দিন। বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতের পাশাপাশি পাহাড়, নদী ও মেরিন ড্রাইভের অপার সৌন্দর্য উপভোগে প্রতিদিনই ছুটে আসেন বিপুলসংখ্যক পর্যটক। ঈদের ছুটিতে পর্যটকের এ সংখ্যা বাড়ে কয়েক গুণ।
দুই বছর করোনার বিধিনিষেধের কারণে পর্যটকদের আনাগোনা ছিল অনেকটাই কম। বিশেষ করে গত বছর করোনার প্রাণঘাতী দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় ফাঁকা হোটেল-মোটেলের মালিক-কর্মীদের গেছে দুর্দিন। সব বিধিনিষেধ কার্যত উঠে যাওয়ার পর হাসি ফিরেছে তাদের মুখে।
সমুদ্রসৈকত ছাড়াও এখানে রয়েছে মেরিন ড্রাইভ, হিমছড়ি ঝরনা , ইনানী ও পাটুয়ারটেকের পাথুরে সৈকত, শহরের অজ্ঞমেধা ক্যাং ও বার্মিজ মার্কেট, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক এবং রামুর বৌদ্ধ মন্দিরসহ নানা জনপ্রিয় ভ্রমণ স্পট।
মঙ্গলবার সৈকতে যে ভিড়, তাদের বেশির ভাগই স্থানীয় বাসিন্দা। যে বুকিং দেয়া আছে, তারা আসতে শুরু করবেন বুধবার থেকে। ৫১৬ হোটেল-মোটেলের বেশির ভাগ কক্ষই বুকিং হয়ে গেছে।
এসব আবাসিক হোটেলে কক্ষ রয়েছে ২০ হাজারের মতো; যাতে ধারণক্ষমতা ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি। ছুটির দিনগুলোয় ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত পর্যটক সমাগম ঘটায় অনেককে হোটেল কক্ষে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। সেই হিসাবে কক্সবাজারে প্রতিদিন আবাসিক হোটেলগুলোয় দেড় লাখের বেশি পর্যটক থাকা সম্ভব নয়।
হোটেল কক্স টুডের পরিচালক আবু তালেব বলেন, ‘সোমবারই আমাদের সব কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। এখন শুধু আসার পালা। আমরাও পর্যটকদের জন্য নানা আয়োজন রেখেছি। যাতে তারা এবারের ঈদের ছুটি ভালোভাবে কাটাতে পারেন।
তিনি জানান, অতিথিদের জন্য বিশেষ মেহেদী উৎসব শুরু হয়েছে হোটেলের লবিতে। চলবে আগামী তিন দিন। সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে পর্যটককে মেহেদি লাগিয়ে দিচ্ছেন তাদের কর্মীরা।
মেহেদি উৎসবে আসা নুসরাত জাহান লিমু বলেন, ‘ঈদটায় পরিবারের সঙ্গে কক্সবাজারে করেছি। হাতে মেহেদি না লাগালে কেমন জানি ভালো লাগে না। তাই হোটেলের পক্ষ থেকে দেয়া সুযোগটা কাজে লাগালাম।
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার টানা ছুটি মিলেছে। তাই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ। এ সময়টা পরিবারের সঙ্গে কাটাতে ছুটে এসেছি। নামাজ পড়েই গাড়িতে চড়েছি। এখন সমুদ্রস্নানে মগ্ন আমার পরিবারের সদস্যরা।’
লোহাগাড়া থেকে দল বেঁধে এসেছেন জামিল আহমেদ, সাকিব খান, রুবেল হোসেনরা। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর এটাই তাদের প্রথম সমুদ্র দর্শন। তাদের দুই বন্ধু করোনা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন। তাদের খুশি করতেই এই ভ্রমণ।
আগামী কয়েক দিনের এই জমায়েতকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের নিরাপত্তায় বিশেষ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে জেলা প্রশাসন। ট্যুরিস্ট পুলিশ, সৈকতকর্মী ছাড়াও নতুন করে চারজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা হলেন কাজী মাহমুদুর রহমান, সৈয়দ মুরাদ ইসলাম, আরাফাদ সিদ্দিকী ও নিরূপম মজুমদার।
জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ বলেন, ‘ঈদুল ফিতর উপলক্ষে কক্সবাজারে প্রায় দুই লাখ পর্যটকের আগমনের সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের নিরাপত্তায় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে এ চারজনকে বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম বলেন, ‘সৈকতের দর্শনার্থীদের তাৎক্ষণিক নিরাপত্তা ও সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ছয়টি হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি ডেস্কে ফার্স্ট এইড বক্স সরবরাহের মাধ্যমে পর্যটকদের প্রাথমিক চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।’ সমুদ্রসৈকত এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য একটি ওয়াচ টাওয়ার এবং সাতটি পর্যবেক্ষণ সেন্টার স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে।
সমুদ্রসৈকতে হারিয়ে যাওয়া শিশুদের দ্রুত উদ্ধার করে অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তরের লক্ষ্যে ‘চাইল্ড সাপোর্ট সেন্টার’ এবং পর্যটকদের হারিয়ে যাওয়া মোবাইল, মানিব্যাগ বা অন্যান্য মালামাল উদ্ধার করে মালিকের কাছে হস্তান্তরের লক্ষ্যে প্রত্যেকটি হেল্প ডেস্কে ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড সেন্টার’ স্থাপন করা থাকবে।