সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘরে থাকতে পারেন না লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মদনপুর আবাসনের ৭০ পরিবার। জরাজীর্ন ঘর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অনেকেই। জানা গেছে, ভুমিহীন ও গৃহহীন ছিন্নমুল পরিবারগুলোর জন্য আবাসন, আশ্রয়ন ও গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প হাতে নেয় সরকার।
খাস জমির উপর এসব ঘর নির্মাণ করে সুফলভোগিদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এসব সুফল ভোগির জীবনমান উন্নয়নের জন্য বহুমুখী প্রকল্প হাতে নেয়ার ঘোষনা দিলেও কিছু দিন পরে তা আর আলোর মুখ দেখে না। প্রথম দিকে প্রশিক্ষনের মাধ্যমে নানামুখি পেশায় আত্ননিয়োগের মাধ্যমে তাদের জীবনমান উন্নয়নের কথা বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে বসবাসের ঘর আর দুই শতাংশ জমি ছাড়া কিছুই মিলেনি এসব ছিন্নমুল পরিবারের ভাগ্যে।
ফলে আবাসন, আশ্রয়ন বা গুচ্ছগ্রামে বসবাস করলেও কর্মহীন এসব পরিবারের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। তাই পুর্বের ভিক্ষাবৃত্তি পেশায় রয়েছেন বেশির ভাগ আবাসন বাসী। এমনকি দীর্ঘ দিন আগে তৈরী করা এসব ঘর সংস্কার বা মেরামত করারও উদ্যোগ নেই সরকারের। ফলে অনেক আবাসন, আশ্রয়ন ও গুচ্ছগ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে ভুক্তভোগি পরিবারগুলো। লালমনিরহাটের অধিকাংশ আবাসন, আশ্রয়ন ও গুচ্ছগ্রামে এখন বখাটেদের মাদকসেবন ও নানান অনৈতিক কার্যকলাপের কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে।
আদিতমারী উপজেলার মদনপুর আবাসন ঘুরে দেখা গেছে, ৭০টি ছিন্নমুল পরিবারের জন্য গত ২০০৫ সালে সেমি পাকা আবাসনটি নির্মাণ করে সরকার। তাদেরকে স্বালম্বী করতে নানান প্রতিশ্রুতি দিয়ে আবাসনে বসবাস করার সুযোগ দেয়া হয়। পরবর্তিতে দুই শতাংশ জমি আর ঘর ছাড়া কিছুই মেলেনি এ ৭০ টি ছিন্নমুল পরিবারের ভাগ্যে। দীর্ঘ দিন আগে নির্মাণ করা এসব ঘর সংস্কার না করায় ছাউনি ফুটো হয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে হয় সুফলভোগিদের।
কেউ কেউ বৃষ্টি থেকে বাঁচতে টিনের উপর পলিথিন সাটিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। প্রতি ১০টি পরিবারের জন্য একটি টিউবওয়েল ও একটি টয়লেট নির্মান করা হলেও সংস্কারের অভাবে তা ব্যবহারে সম্পুর্নরুপে অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে কেউ কেউ কাচা টয়লেট পলিথিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে টয়লেট সেড়ে নিচ্ছেন। যাতে জনস্বাস্থ্য মারাত্বক ভাবে হুমকীর মুখে পড়েছে। সংস্কারের জন্য উপজেলা প্রশাসনের দাঁড়ে দাঁড়ে ঘুরেও কোন প্রতিকার পাননি বলে দাবি বসবাসকারীদের। এমন দৃশ্য জেলার প্রায় সকল আবাসনের। এ আবাসনের ৬ নং রুমের দুলাল মিয়া ঘর ছেড়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
তার ঘরের পুরো ছাউনি নষ্ট হয়েছে। ভিক্ষাবৃত্তির আয়ে পেটের ভাত জুটলেও ঘর সংস্কার করার টাকার অভাবে গত বর্ষায় আবাসন ছেড়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। মদনপুর আবাসনে বসবাসকারী শেফালী বেওয়া জানান, অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে অনাহারে অর্ধহারে থাকলেও তিন ছেলের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। সন্তানদের লেখাপড়া ও পরিবারের খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হয়। ঘরের টিন পরিবর্তন করার টাকা কোথায় পাই। ভোটের সময় সবাই আবাসন মেরামত করার প্রতিশ্রুতি দিলেও ভোট শেষে তাদের কোন খোঁজ পাওয়া যায় না।
দ্রুত আবাসন সংস্কারের দাবি জানান তিনি। মদনপুর আবাসনের সভাপতি আনছার আলী জানান, আবাসনে বসবাসকারীদের অধিকাংশই ভিক্ষুক। পেটের ভাত যোগানো তাদের জন্য কষ্টকর। ঘর মেরামত করে কি ভাবে? । কেউ কেউ টিনের উপর পলিথিন দিয়ে বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষার চেষ্টা করছে। কেউ কেউ আবাসন ছেড়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। আবাসন সংস্কার করতে দীর্ঘ দিন উপজেলা প্রশাসনে যোগাযোগ করেছি। প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে সংস্কার হয়নি। মন্ত্রী এমপি এলাকায় আসলে মিছিল দিতে আবাসনের লোকদের নিয়ে যেতে হয়। কাজ শেষ হলে গরিবের খবর কেউ রাখেন না- বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দায়েত্বে থাকা উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) দিলশাদ জাহান বলেন, মদনপুর আবাসনের সমস্যাগুলো আমার জানা নেই। এমন হলে তদন্ত করে সংস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।