সড়কে বাস ডাকাতি ঠেকাতে নতুন এমন এক প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। দু’একদিনের মধ্যে এটি পরীক্ষামূলকভাবে দেখানো হবে। তবে চূড়ান্ত কার্যকর করতে দ্রুতই বাস মালিকদের সঙ্গে বসবে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, “এটা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এ পদ্ধতি চালু হলে সবার নিরাপত্তার বিষয়টি সুরক্ষিত হবে।”
এ প্রযুক্তি চালুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, “প্রাথমিকভাবে নৈশকালীন কোচগুলোকে এ প্রযুক্তির আওতায় আনার চেষ্টা করা হবে। কোনো বাস কর্তৃপক্ষ চাইলে নির্দিষ্ট কিছু খরচের বিনিময়ে তা ব্যবহার করতে পারবে।” বাস ডাকাতির মামলায় সম্প্রতি গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ডাকাতরা
এ বিষয়ে হানিফ এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিরাজুল ইসলাম রিকু বলেন, “পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও কেউ যোগাযোগ করেনি। তবে এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। “পুলিশকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। আমরা চাই এই প্রযুক্তি চালু হোক, সকলেই নিরাপদে থাকুক।” শ্যামলী পরিবহনের কর্ণধার রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, “বাস ডাকাত প্রতিরোধে যে কোনো কাজকে সহযোগিতা করা হবে।”
সম্প্রতি ঢাকার আব্দুল্লাহপুর থেকে বাসে টাঙ্গাইলে যাওয়ার পথে চিকিৎসক শফিকুল ইসলাম যাত্রীর বেশে ওঠা ডাকাত দলের কবলে পড়েছিলেন। পরে এই ঘটনা তিনি সোশাল মিডিয়ায় তুলে ধরলে তা ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই পুলিশ মাঠে নামে এবং এ পর্যন্ত ওই চক্রের কয়েকজনসহ ৪০ বাস ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে। ডাকাতদের মধ্যে কয়েকজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে।
এদের জিজ্ঞাসাবাদ থেকে মহাসড়কে ডাকাতির নতুন তথ্য সামনে আসছে। এরমধ্যে একটি বাসে ডাকাতিকালে ধর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে ডাকাতরা। গত ১৪ জানুয়ারি রাতে বগুড়া থেকে ঢাকামুখী একটি বাসে ধর্ষণের এ ঘটনা ঘটে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। ওই ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ, যারা ওই রাতে সহযোগীদের ধর্ষণের কথা জানায়। রাজশাহী থেকে ঢাকায় আসার পথে ডাকাতের কবলে পড়া ‘জাহাঙ্গীর পরিবহন’র বাসটি আছে এখন টাঙ্গাইলের গোড়াই হাইওয়ে থানায়।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা ওয়াহিদুল বলেন, “ডাকাতরা ধর্ষণ এবং হত্যার কথাও স্বীকার করেছে। কয়েকটি ঘটনায় বাসের লোকজন জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে।” ডাকাতদের চক্রটিকে ধরতে গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাসে ডাকাতি রোধ করতে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।” প্রযুক্তিটি কীভাবে কাজ করবে সেই ব্যাখ্যা করে পুলিশ কর্মকর্তা ওয়াহিদুল বলেন, “বাসের কোনো এক জায়গায় একটা বাটন থাকবে যেটা চালক এবং তার সহযোগী জানবেন।
“ডাকাত বা কোনো বিপদ বুঝতে পেরে ওই বাটনে চাপ দিলে যে এলাকায় বাসটি আছে সে এলাকার পুলিশ সুপার, বাস মালিক এবং জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ সাহায্য চেয়ে একটি বার্তা পৌঁছে যাবে।” এ ব্যাপারে কাজ অনেকটা এগিয়েছে এবং বাস মালিকদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান তিনি।
“হাজার হাজার গাড়ি রাস্তায় চলে। বিশেষ করে রাতে সব গাড়ি থামিয়ে ‘চেক’ করা সম্ভব নয়। কোন গাড়িতে ডাকাতি হচ্ছে এটা চিহ্নিত করা দুষ্কর।” এ অবস্থায় প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা ভাবা হচ্ছে জানিয়ে পুলিশ কমিশনার শফিকুল বলেন, “তবে প্রযুক্তি ব্যবহারে কিছু খরচ আছে। সেটা মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে তাদের মতামত নিয়ে কাজ করতে চাই। “আমরা শেষ ডাকাতটিকে ধরতে চাই। বাস ডাকাতি বন্ধ করতে চাই। প্রযুক্তি চালু হলে যাত্রী, পরিবহন মালিক, চালক, বাসের সহকারী সবার জন্য নিরাপত্তা সুরক্ষিত হবে।”