ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার সাতেঙ্গা গ্রামে অবস্থিত মোস্তফা মতিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: ওবায়েদ উর রহমানের বিরুদ্ধে প্রতারণা, অর্থ আত্মসাত, জালিয়াতী ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। চাকরী দেয়ার নামে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে চাকরী না দেয়া, শিক্ষকদের টিউশন ফি, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত ও শিক্ষকদের সাথে অশুভ আচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে বিদ্যালয়ের প্রায় সকল শিক্ষক ও কর্মচারী বাদি হয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগে জানা যায়, ভালুকা উপজেলার রাংচাপড়া গ্রামের মো: সমর আলীর ছেলে মো: উবায়েত উর রহমান বিধি বর্হিভূত ভাবে সাতেঙ্গা মোস্তফা মতিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। তিনি যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পরেন। চাকরী দেয়ার নামে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে চাকরী না দেয়া, শিক্ষকদের টিউশন ফি, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত ও শিক্ষকদের সাথে অশুভ আচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এসব কারণে তাকে একাধিকবার সাময়িকভাবে বরখাস্তও করা হয়।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (শরীরচর্চা) মুহাম্মদ জিয়াউল হক, কৃষি শিক্ষক মো: আলাউদ্দিন, গণিত শিক্ষক মো: কামরুজ্জামান, সমাজ বিজ্ঞান শিক্ষক সুধীর চন্দ্র দাস ও সানজিদা সুলতানা, দপ্তরী শাহজাহান মিয়া এবং অফিস সহকারী মো: সাইফুজ্জামান জানান, গত ১২ বছরের টিউশন ফি তাদের করা হয়নি। এমন কি তাদের সাথে বিভন্ন অশুভ আচরণ করা হয়ে থাকে।
বেশ কয়েক বছর আগে চাকরী দেয়ার কথা বলে স্কুলের প্যাডে অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর নিয়ে নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার শান্তিবাগ গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে সামিউল ইসলামের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা নেন ওই প্রধান শিক্ষক। কিন্তু দীর্ঘদিনেও চাকরী না দেয়ায় ওই ব্যক্তি প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর চীফ মেট্রোপলিটন (সিএমএম) ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৪২০, ৪০৬, ৫০৬ ধারায় সিআর মামলা (নম্বর-২০৯/২০২২) দায়ের করেন। ওই মামলায় আসামীর বিরুদ্ধে আদালত কর্তৃক গ্রেফতারী পরোয়ানা (নম্বর-১০৫২৮, তারিখ-৫/৬/২২) জারি করা হয়। পরে পরোয়ানাটি ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) মাধ্যমে ভালুকা মডেল থানায় প্রেরণ করা হলে গত ১৮ জুন শনিবার দুপুরে থানার এসআই মোস্তাফিজুর রহমান ওই শিক্ষকের কর্মস্থল থেকে থানায় নিয়ে আসেন। কিন্তু থানায় আটকে রেখে প্রায় ৬ ঘন্টা পর রহস্যজনক কারনে উপজেলার ভরাডোবা ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহ আলমের মধ্যস্থতায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
মামলার অভিযোগকারী সামিউল ইসলাম জানান, মোস্তফা মতিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: ওবায়েদ উর রহমান তাকে চাকরি দেয়ার কথা বলে ওই স্কুলের প্যাডে অঙ্গিকার নামার মাধ্যমে ১২ লাখ টাকা নেয়। কিন্তু চাকরি না দিয়ে বছরের পর বছর ঘুরিয়েছেন। পরে টাকা আদায়ের জন্য বাধ্য হয়ে তিনি আদালতে মামলা করেছেন।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি (এডহক) ফেরদৌসি সুলতানা জানান, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ও স্বার্থ পরিপন্থী কার্যকলাপের জন্য তাকে একাধিকবার সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও, পরবর্তিতে অঙ্গীকারনামার ভিত্তিতে তাকে পূর্ণবহাল করা হয়।
ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলম ওই শিক্ষককে তার জিম্মায় নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আইডি কার্ডের সাথে পরোয়ানায় নামের মিল না থাকায় প্রত্যায়নপত্র দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনা হয়েছে।
ভালুকা মডেল থানার ওসি কামাল হোসেন জানান, আটককৃত ব্যক্তির বাবার নামটিতে পরোয়ানায় মিল না থাকায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিলো।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মো: উবায়েত উর রহমানের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার চেষ্টা করলেও ফোনটি রিসিভ না করায় তার মন্তব্য দেয়া সম্ভব হয়নি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: নজরুল ইসলাম জানান, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের মামলার বিষয়টি আদালতের, তাই এ ব্যাপারে আমার কোন মন্তব্য নেই।
এই নিউজ পোর্টাল এর কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি ও দণ্ডনীয় অপরাধ।