আশরাফুল হক, লালমনিরহাট : লালমনিরহাটে দুইশত বছরের ঐতিহ্যবাহী ‘হালা বটের তল’ নামের সেই বিখ্যাত হালা বটগাছটি ঝড়ের আঘাতে ভেঙে পড়েছে। শনিবার (১ জুন) দিবাগত রাতে প্রচন্ড ঝড়ের আঘাতে বিকট শব্দে বটগাছটি ভেঙে পড়ে। এ সময় আতিক, উজ্জল ও মেহেদি নামে ৩ জন ব্যাক্তি আহত হয়েছেন। তারা লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধিন রয়েছেন।
লালমনিরহাটের ঐতিহ্যের অন্যতম বাহক
দুইশত বছরের অধিক পুরনো এ বটগাছটির নামে এলাকার নামকরন হয় হালাবটের তল। যা এখন শুধুই ইতিহাস। এটি লালমনিরহাট পৌরসভার উত্তর সাপ্টানা এলাকায় অবস্থিত।
স্থানীয়রা জানান, দুই শত বছরেরও অধিক সময় আগে উত্তর সাপ্টানা এলাকায় মাঠটি গড়ে উঠে। সেখানে এই বটগাছটি জন্মে ছিল। কালের পরিক্রমায় বটগাছটি প্রায় দেড় একর জমি জুড়ে বিস্তৃতী লাভ করে। বটগাছটির ছায়ায় বসে ওয়াজ মাহফিল করতেন কোন এক জৈনপুরের পীর। জনশ্রুতি রয়েছে, পীরের ওয়াজ শুনতে আসা লোকজনদের ওজু করার যে কুপটি ছিল সেখানে পর্যাপ্ত পানি ছিল না। পীর সাহেব তার পানির পাত্র থেকে কিছু পানি সেই কুপে ফেলে দিলে আর পানি অভাব হয়নি। একই ভাবে সেই সময় ওয়াজে আগুন্তুকদের খাবার রান্না করে পরিবেশনের সময় সংকট দেখা দিলে পীর সাহেব সেই খাবারের পাতিলে বিশেষ দোয়া পাঠ করে দিলে তার সংকটও দুরিভুত হত। সেই ওয়াজ মাহফিলে পীর সাহেবকে ছায়া দানকারী বটগাছটিও মুরিদদের জন্য সম্মানের বস্তুতে পরিনত হয়।
এরপর থেকে হালাবট গাছটিতে মানত শুরু করে মুরিদরা। স্থানীয়দের মাঝে বিশ্বাস জন্মে এখানে মানত করলে তা পুরন হয়। সেই জনশ্রুতি থেকে ধিরে ধিরে এই হালাবটতলকে ঘিরে মানতের আস্তানা ও বেড়াতে আসাতে বিনোদনের স্থানে পরিনত হয়। ধিরে ধিরে এলাকার নামকরন হয় হালাবটের তল। বিস্তৃর্ন এলাকা জুড়ে বটগাছের ডাল পালা বিস্তৃতীত হলেও গাছটি হেলে পড়ে। পথচারীদের বিশ্রামেরও জায়গা এটি। ছুটির দিনসহ বিশেষ দিনগুলোতে বিনোদন প্রেমিরা হালাবটতলে ঘুরতে যান। সেই থেকে লালমনিরহাটের ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পায় উত্তর সাপ্টানা এলাকার হালাবট তল।
দুইশত বছরের অধিক সময়ের সেই ঐতিহ্যবাহি হালাবটগাছটি শনিবার দিনগত মধ্যরাতের ঝড়ে দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে পড়েছে। বটগাছের পাশে ঈদগা মাঠের মিনারে ঝড়ের সময় আশ্রয় নেয়া তিনজন যুবক গাছের ডালে চাপা পড়ে আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
হালাবটের তলের খাদেম আকবর আলী বলেন, আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। দীর্ঘদিন ধরে আমি এই গাছের সেবায় নিয়োজিত ছিলাম। আমার অনেক কান্না পাচ্ছে।
ঐতিহ্যবাহি হালাবট গাছটি ভেঙে পড়েছে শুনে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে ছুটে যান সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সুজন। তিনি বলেন, জেলার অন্যতম ঐতিহ্যবাহি হালাবটগাছটি ভেঙে পড়েছে। গাছটি উপড়ে দুমড়ে মুচড়ে পড়ায় রক্ষার মত পরিবেশ নেই। ঐতিহ্য থেকে হারিয়ে গেলো হালাবটতল।
এই নিউজ পোর্টাল এর কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি ও দণ্ডনীয় অপরাধ।