নিজস্ব প্রতিনিধি
দিনাজপুরের হিলির পালিবটতলী গুচ্ছগ্রামে ক্ষুধার্ত সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে নিজের মাথার চুল বিক্রি করে দিয়েছেন এক অসহায় মা।
খবর পেয়ে শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরের এই গ্রামে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে মাঝরাতে ছুটে যান ইউএনও আব্দুর রাফিউল আলম। তিনি কয়েকদিনের খাবার দেওয়ার পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
২৫ বছর বয়সী সোনালী বেগমের ৪ সদস্যের সংসার। এক ছেলে (৭) ও এক মেয়ের (৪) জননী তিনি। সরকারি গুচ্ছগ্রামে তাদের বসবাস। স্বামী সোহাগ মিয়া করোনার কারণে বেকার, আগে হোটেলে কাজ করতেন। হোটেলে কাজ করে চলতো তাদের সংসার। সঞ্চয় যা ছিলো তাও শেষ। কিছুদিন ধরে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন তারা।
নিজের ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে পারলেও দু’টি সন্তানের ক্ষুধার কষ্ট সহ্য করতে পারেননি মা সোনালী। তাই কোন উপায় না পেয়ে মাথার চুল কেটে বিক্রি করে দেন। এলাকায় চুল কিনতে আসা ব্যবসায়ীর কাছে তার সাধের চুলটুকু ৩শ টাকায় বিক্রি করেন। চুল ক্রেতা যখন বুঝতে পারেন, অভাবে সন্তানদের ক্ষুধা মিটাতে তার এই চুল বিক্রি করা, তখন তিনি মাকে আরো ৫০ টাকা বাড়িয়ে দেন।
সোনালী জানান, ৮ বছর আগে তিনি মুসলমান হয়ে সোহাগকে বিয়ে করেন। একারণে স্বজনদের কাছে যাওয়ার পথও বন্ধ হয়ে গেছে।
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুর রাফিউল আলমের প্রতি সোনালী খুবই কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, সেদিন রাতে ইউএনও স্যার আমার বাড়িতে এসে ৮ দিনের খাবার দিয়ে গেছেন। আজকে (সোমবার) আমাকে তিনি একটি সেলাই মেশিন এবং আমার স্বামীকে একটা ফুচকার দোকান করে দিয়েছেন। এই মুহূর্তে স্যার যদি আমাদের পাশে না দাঁড়াতেন তাহলে বাচ্চাদের নিয়ে না খেয়ে থাকতে হতো।
ইউএনও আব্দুর রাফিউল আলম বলেন, গত কয়েকদিন আগে রাতে আমি জানতে পারি উপজেলার পালিবটতলী গচ্ছগ্রামে একটি অসহায় পরিবার সন্তানদের নিয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন এবং সন্তানদের মুখে খাবার দিতে মা তার মাথার চুল বিক্রি করেছেন। এমন সংবাদ পাওয়ার পর আমি নিজে ওই পরিবারের জন্য কয়েকদিনের খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, সোমবার (২ নভেম্বর) বিকেলে আমি ওই নারীকে একটি সেলাই মেশিন এবং তার স্বামীকে একটা ফুচকার গাড়িসহ সকল সরঞ্জাম কিনে দিয়েছি। এছাড়াও ওই নারীকে উপজেলায় দর্জি কাজের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করে দিয়েছি।