বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩, ১১:২৬ পূর্বাহ্ন

সাগরতীরে স্মার্ট সিটি

কলমের বার্তা নিউজ ডেস্ক :
  • সময় কাল : বৃহস্পতিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
  • ৮৭ বার পড়া হয়েছে।

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে মীরসরাই পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী ৬০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে ‘স্মার্ট সিটি’ গড়ে তুলতে চায় চীন। বন্দরনগরীতে নিজেদের অর্থে মেট্রোরেল করে দিয়ে ওই স্মার্ট সিটি থেকে লভ্যাংশ আদায়ের আগ্রহ প্রকাশ করেছে দেশটি। চীনের চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি নিজেদের খরচে এ দুটি মেগা প্রকল্পের প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাইয়েরও প্রস্তাব দিয়েছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কাছে দেয়া এ প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে প্রেরণ করা হচ্ছে।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস গতকাল বুধবার বলেন, প্রস্তাবটি নিয়ে মঙ্গলবার গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভায় পর্যালোচনা করা হয়েছে। সভায় প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর সুপারিশ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে খুব শিগগির এ প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রেরণ করা হবে। অনুমোদন পেলে প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হবে বলে জানান কাজী হাসান বিন শামস। তিনি বলেন, নগরীতে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আর এ মেগা প্রকল্পকে কার্যকর করতে হলে স্মার্ট সিটি গড়ে তোলা জরুরি। চীনের চারটি প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছে।
সিডিএর কর্মকর্তারা জানান, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের অদূরে সাগর তীরে চট্টগ্রাম বন্দরের এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় প্রকল্প বে-টার্মিনালের যে নির্ধারিত স্থান, তারপর থেকে মীরসরাই পর্যন্ত সাগরের মধ্যে একটি চরের মত আছে। ওই জায়গায় সাগরের জমি রিক্লেইম (ভূমি উদ্ধার) করে চীন টাউনশিপ (উপশহর) করতে চায়। বিনিময়ে তারা মেট্রোরেল পুরোটা তাদের অর্থায়নে করার প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের কোনো টাকা লাগবে না।
চীনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সাগরের জমি উদ্ধার করে যে ‘স্মার্ট সিটি’ তারা গড়তে চায়, তার দায়িত্ব তাদের হাতেই থাকবে। সেখানে প্লট বিক্রির টাকা তারা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ভাগাভাগি করবে। বে-টার্মিনালের পর থেকে মীরসরাই পর্যন্ত অংশের সাগরের জমি উদ্ধারের কথা রয়েছে প্রস্তাবে। তবে মাঝে জাহাজভাঙা শিল্পসহ যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলো বাদ যাবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটা সাগরের ডেড এন্ড। এখানে সাগরের জমি উদ্ধার করলে কোন ক্ষতির ঝুঁকি নেই। দুবাই, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সাগরের ভূমি রিক্লেইম করে এরকম টাউনশিপ করা হয়েছে। এ ধরনের কাজের অভিজ্ঞতাও আছে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর। এমন প্রযুক্তি তাদের কাছে আছে, যাতে ওই অংশে সাগরের পানি স্বচ্ছ দেখা যাবে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সাগর থেকে বালু তুলে ও সিটি কর্পোরেশনের ময়লা-আবর্জনা জমিয়ে স্মার্ট সিটির জমি তৈরি করা হবে। এজন্য আলাদা করে কোন ভূমি অধিগ্রহণ করার প্রয়োজন হবে না। চীন, সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা, আরব আমিরাতসহ বিশ্বের অনেক দেশে সাগরের বুক থেকে ভূমি উদ্ধার করে এ ধরনের দৃষ্টিনন্দন স্মার্ট সিটি গড়ে তোলা হয়েছে। সিডিএর কর্মকর্তারা জানান, স্মার্ট সিটি প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে এ প্রকল্প এক দশমিক এক থেকে তিন শতাংশ প্রবৃদ্ধি যোগ হবে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ২০১৯ সালের জুলাইয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাসস্থান ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনসালট্যান্টস লিমিটেডের মাধ্যমে একটি প্রাকযোগ্যতা সমীক্ষা করেছিল। ওই প্রতিবেদনে বন্দরনগরীতে মেট্রোরেলের তিনটি র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইনের প্রস্তাব করা হয়। তাতে প্রায় ৮৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছিল। এই মেট্রোরেল প্রকল্প নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়াও আগ্রহী। ইতোমধ্যে উন্নয়ন সংস্থা কোইকার মাধ্যমে এ প্রকল্পের প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে নিজেদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে তারা। এ কাজে তারা পাঁচ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি ডলার অনুদান হিসেবেও দিতে চায়। কোরিয়ার ওই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার মধ্যেই চীনের পক্ষ থেকে দেয়া প্রস্তাবটি আলোচনায় এল।
চীনা প্রস্তাবে নিজেদের অর্থে এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই এবং প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। সেসাথে স্মার্ট সিটিও নিজেদের খরচে করে দেবে চীন। পরে তারা সরকারের সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে তাদের পাওনা তুলে নেবে। টাউনশিপ নির্মাণে কত টাকা খরচ হবে, সে বিষয়েও প্রস্তাবে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই বলে জানান সিডিএর কর্মকর্তা। চীনের কোন চারটি কোম্পানি যৌথভাবে মেট্রোরেল ও টাউনশিপ প্রকল্পের এই প্রস্তাব দিয়েছে তা সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশ করেনি সিডিএ। তবে গত ১৩ জানুয়ারি ঢাকায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে চায়না রেলওয়ে কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিআরসিসিএল) নামে যে প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের আগ্রহ প্রকাশ করেছিল, তারাও এ কনসোর্টিয়ামে আছে বলে জানা গেছে।
মীরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর, কর্ণফুলী টানেল, টানেলের ওপারে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর ও জ্বালানি হাব ঘিরে ভবিষ্যত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের আনাগোনা হবে। সেসব বিষয় মাথায় রেখেই গত ৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে ঢাকার পর চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল নির্মাণের নির্দেশ দেন। নগরীতে তিন থেকে চারটি রুটে মেট্রোরেল করে এই নেটওয়ার্কে মীরসরাই শিল্পাঞ্চল, বিভিন্ন শিল্প এলাকা ও নগরীর উপকণ্ঠের গ্রোথ সেন্টারগুলোকে সংযুক্ত করার দাবি রয়েছে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের। তারা বলছেন, মেট্রোরেল প্রকল্পকে কার্যকর করতে স্মার্ট সিটি প্রতিষ্ঠা জরুরি।

2
Spread the love

নিউজটি শেয়ার করুন....

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরোও খবর
এই নিউজ পোর্টাল এর কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি দণ্ডনীয় অপরাধ
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102