বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩, ১০:২৫ পূর্বাহ্ন

স্বাস্থ্য বিভাগ ঘোষিত হলুদ জোনের জেলায় চলছে পণ্য মেলা ও সার্কাস!

আশরাফুল হক, লালমনিরহাট:
  • সময় কাল : শনিবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২২
  • ৭৩ বার পড়া হয়েছে।

লালমনিরহাটে অনুষ্ঠিতব্য পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) এর ব্যানারে চলছে শিল্প পণ্য মেলা। করোনার ভ্যরিয়েন্ট ওমিক্রনের আক্রমণ থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করেছেন। কোমলমতি শিশুদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সরকার সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করেন।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনার কারণে শিল্প পণ্য মেলায় কোমলমতি শিশুদের আনা-গোনা বেড়েই চলেছে। জানা যায়, ভারতীয় সীমান্তবর্তি জেলা লালমনিরহাটে আয়োজিত শিল্প পন্য মেলায় সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্য বিধি উপেক্ষিত। শুধু মেলাই নয়, হলুদ জোনের এই লালমনিরহাটে বসেছে মাস ব্যাপী দি রওশন সার্কাস। সামাজিক দুরুত্ব তো দুরের কথা মাস্কও ব্যবহার করছেন না দর্শনার্থীরা।

ফলে করোনা ভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রন বিস্তার আশংকা দেখা দিয়েছে এ জেলায়। বুধবার (১২ জানুয়ারী) বিকেলে রেলওয়ে শহীদদ হোসেন সোহরাওয়ার্দী মাঠে মাস ব্যাপী মেলার উদ্বোধন করেন লালমনিরহাট পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা। রংপুরের প্রিন্স ইভেন্টস ম্যানেজমেন্ট নামক একটি প্রতিষ্ঠান মাস ব্যাপী এ মেলা বাস্তবায়ন ও পরিচালনা করছেন। ৬০টি স্টল ও ৮টি বিনোদন মুলক স্টল নিয়ে এ মেলা যাত্রা শুরু করে।

২০ টাকার প্রবেশ মুল্যে দর্শনার্থীরা মেলায় প্রবেশ করলে তাদের হাতে মাস্ক তুলে দিচ্ছে আয়োজক কমিটি। কিন্তু দর্শনার্থীরা মেলায় প্রবেশ করেই মাস্ক খুলে রাখছেন পকেটে বা ভ্যানিটি ব্যাগে। কেউ গলায় ঝুলিয়ে রেখে মনের আনন্দে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরছেন মেলায়। মেলায় শিশুদের বিনোদনের জন্য নগরদোলাসহ নানান বিনোদন স্টল রাখা হয়েছে। রয়েছে কুয়ায় বাইক চালানো। কোন স্টলেই মানা হচ্ছে না সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্য বিধি।

আয়োজকরা বারংবার মাইকে স্বাস্থ্য বিধি মানার কথা বললেও কার্যত অবহেলা করছেন দর্শনার্থীরা। ফলে করোনা সংক্রমনের আশংকা দেখা দিয়েছে। সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় লালমনিরহাট জেলাকে করোনা সংক্রামনের হলুদ জোন ঘোষনা করেছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক ঘোষিত হলুদ জোনের এ জেলায় প্রতিদিন ৫/৭ জন করে করোনা পজিটিভ রোগী সনাক্ত হচ্ছে। শুধু মেলায় নয়, জেলার কোন স্থানেই মানা হচ্ছে না সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্য বিধি। পুনাকে শিল্প পন্য মেলার অনুমোদনের পাশাপাশি আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের মিলন বাজার এলাকায় প্রশাসনের অনুমতিতে চলছে দি রওশন সার্কাস।

সেখানেও হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটছে কোন রুপ স্বাস্থ্য বিধি ছাড়াই। এ সার্কাসকে ঘিরে ওই এলাকায় মাদক সেবনের দৌরাত্বও বেড়েছে কয়েকগুন। এ দিকে সরকারী নির্দেশনা মানতে তেমন কোন জনসচেতনতাও নেই জেলা প্রশাসনের। ফলে হলুদ জোনের লালমনিরহাটে সকল ধরনের সভা, সমাবেশ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানও স্বাভাবিক রয়েছে। হাট বাজার বিপনী বিতান রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখার কথা বলা হলেও তা মধ্যরাত পর্যন্ত স্বাভাবিক থাকছে।

সরকারী বিধি মানতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার কথা বলা হলেও চোখে পড়ছে না ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান। জাকির হোসেন নামে মেলায় আসা একজন দর্শনার্থী বলেন, করোনার স্বাস্থ্য বিধি শুধু মাত্র ট্রেনের টিকিটে। ট্রেন অর্ধেক টিকিট বিক্রি করছে করোনা সংক্রামন রোধে। কিন্তু সেই হলুদ জোনের জেলায় মেলা আর সার্কাসের অনুমতি প্রশাসন কি ভাবে দেয়। ট্রেনে পরিবার নিয়ে গেলেও পাশের সিট ফাঁকা রাখতে হচ্ছে। অথচ এসব মেলা আর সার্কাসে মাস্ক ছাড়াই হাজারো মানুষের সমাগম। সরকারের জারিকৃত বিধি সরকারী কর্মকর্তারা না মানলে সাধারন মানুষ কি ভাবে মানবে।

পুনাকের শিল্প পন্য মেলা বাস্তবায়ন ও পরিচালনা কমিটির পরিচালক আরিফুল ইসলাম আঙ্গুর বলেন, স্বাস্থ্য বিধি অনুসরন করেই মেলা পরিচালনা করা হচ্ছে। মুল গেটেই মাস্ক নিশ্চিত করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে মাইকিং করে দর্শনার্থদের সচেতন করা হচ্ছে। তবে মেলায় এ মানুষের ঢলে সামাজিক দুরুত্ব কিভাবে নিশ্চিত করছেন? এমন প্রশ্নে তিনি কোন মন্তব্য করেন নি। লালমনিরহাট প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান ডিফেন্স বলেন, লালমনিরহাটকে করোনার হলুদ জোন ঘোষনার দিনই পুনাকের মেলার উদ্বোধন করা হয়েছে। একই ভাবে জেলার আদিতমারীতে চলছে সার্কাস। কোথাও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। ফলশ্রুতি ভারতীয় সীমান্তবর্তি এ জেলায় ওমিক্রন সংক্রামনের আশংকা প্রকট। করোনা সংক্রমন রোধে বাঙালির প্রানের বই মেলা দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা গেলে পুনাকের এ মেলা আর সার্কাস কেন স্থগিত করা যাবে না? বৃহত্তর স্বার্থে জেলা প্রশাসনের বিষয়টা ভেবে দেখা উচিৎ বলে মনে করেন তিনি। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক টিএম মমিন বলেন, পুনাকের মেলা এক মাস আগে আয়োজন করেছে।

তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনুমতি দেয়া হয়েছে। পুনাকের মেলা আর সার্কাস নিয়ে অভিযোগও এসেছে। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করলে বিধিমত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সভা সমাবেশ বন্ধ করতে সকল দফতরকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়াও জেলার সকল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা স্বাস্থ্যবিধির উপর ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করছেন।

4
Spread the love

নিউজটি শেয়ার করুন....

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরোও খবর
এই নিউজ পোর্টাল এর কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি দণ্ডনীয় অপরাধ
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102