প্রচলিত চাকরির সুযোগ ছিল না নিরব কুমার দাস এর। কিন্তু তা ও বসে থাকেনি এখন করছেন ফ্র্রিল্যান্সিং। প্রথমে পাঁচ ডালার আয় দিয়ে শুরু করলেও এখন তাঁর মাসিক আয় প্রায় তিন হাজার ডলার। তাঁর ‘সংগ্রাম আইটি’ নামের কোম্পানিতে কাজ করছেন অন্তত ১৬ তরুণ-তরুণী।
নিরব নওগাঁর রানীনগর উপজেলার একডালা ইউনিয়ন এর কালীগ্রামের ডা নিখিল চন্দ্র দাস ও কল্যাণী রাণী দাস দম্পতির ছেলে।
প্রথমে ডোল্যান্সার নামের একটি সাইটে কাজ শুরু করেন নিরব। নতুন অ্যাকাউন্ট নেওয়ার জন্য গুনতে হয় পাঁচ হাজার টাকা। এক মাস পরে যখন টাকা হাতে পেলেন কিছুটা ভরসা পেলেন এবং নিজের সব জমানো টাকা দিয়ে শুরু করেন আরও কয়েকটি নতুন অ্যাকাউন্ট নিয়ে। দুই মাস ভালোই চলছিল। তবে ভুয়া কোম্পানির কাছে নিজের সর্বস্ব হারিয়ে হতাশার সাগরে ডুবতে হয় তাঁকে। কিন্তু হাল ছাড়েননি তিনি। পুনরায় নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য শুরু করেন সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের ওপরে রিসার্চ করা। সেখানে তিনি সফলতা পান। এরপর (মার্কেটপ্লেস) ফাইবার ও আপওয়ার্কের পাশাপাশি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, কারিগরি সেবা এবং ওয়েবডিজাইনে নিজেকে দক্ষ করে তোলেন। ওডেস্ক নামের একটি কোম্পানির সাইটে অ্যাকাউন্ট করে আবারও শুরু করেন ফ্র্রিল্যান্সিং। ঠিক দুই মাস পর পাঁচ ডলারের একটি কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করেন তিনি। এই পাঁচ ডলারই ঘুরিয়ে দিয়েছে তাঁর জীবনের মোড়।
ফ্র্রিল্যান্সার নিরব জানান, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চার বছরে ফ্রিল্যান্সিংয়ের পাশাপাশি প্রশিক্ষক হিসেবে চাকরি করেছেন স্কিলস টু সাক্সিসিড, লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং। ২০১৮ সালে ফ্রিল্যান্সিং পেশায় একটি টিম নিয়ে আবার নতুন উদ্যমে শুরু করেন, তবে এবার লক্ষ্য একটু বড়। তিনি একটি ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি করতে চান। ২০১৮ সালের শেষের দিকে শুরু হয় এজেন্সি করার লক্ষ্য নিয়ে আবারও ফ্রিল্যান্সিং পেশায় পুরোদমে যাত্রা।
শুরুটা কঠিন হলেও থেমে যাননি। বরং টিমকে দিয়েছেন সাহস। নিজেও ছিলেন আত্মবিশ্বাসী। সংগ্রাম আইটি নামে তার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানে বর্তমান কাজ করছেন ১৬ জন তরুণ-তরুণী। মাসুমের হাত ধরে তাঁরাও একেকজন উদ্যোক্তা হতে চান।
নিরব ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ এই দুই বছরে আপওয়ারকে ২৫০টি, ফাইবারে ২০০টি এবং স্থানীয় ১০০টি প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করেছেন। বর্তমানে মার্কেটপ্লেসের বাইরে কানাডিয়ান এজেন্সি সিএনএস, আমেরিকান এজেন্সি ব্রাইট হাউস, অস্ট্রেলিয়ান এজেন্সি ভেট এসই এর সঙ্গে কাজ করছেন। এ ছাড়া এ্যাফিলিয়েট, এডসেন্স সাইট করেছেন ২০টির বেশি।
নিরব বলেন, ‘প্রথম যে দিন পাঁচ ডলার আয় করেছিলাম সেদিনের কথা আজও বারবার মনে পড়ে। দিনে প্রায় পাঁচবার প্রোফাইলে গিয়ে রিভিউটা দেখতাম, কত ডলার যোগ হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সংগ্রাম সেক্টরে বর্তমানে অনেক তরুণ-তরুণী আসছে। তাদের উদ্দ্যেশে একটাই কথা নিজেকে দক্ষ করে লেগে থাকতে হবে, সাফল্যে একদিন ধরা দেবেই।’