অভুত্থান কারী ছাত্র শ্রমিক জনতা কোনাবাড়ী থানার আহবায়ক আরমান হোসেন বলেন,গত ৫ আগস্ট গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে নিহত কলেজ ছাত্র হৃদয়ের লাশ আগামী ৭ দিনের মধ্যে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করতে হবে। যদি হস্তান্তর করা না হয় তাহলে শাহবাগ থেকে হাইকোর্ট অভিমুখে মিছিল নিয়ে যাওয়া হবে। আমরা রাস্তায় অবস্থান করবো কিন্তু রাস্তা ছাড়বো না।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারী) সকাল ১১ টায় কোনাবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে যমুনা ব্যাংকের সামনে এক প্রতিবাদ সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন,এই প্রশাসন হৃদয়ের ডেড সার্টিফিকেট দিয়েছে কিন্তু তার লাশ পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়নি। এমন একটি নারকীয় হত্যাকান্ড হলো নিরহ কলেজ ছাত্রের সঙ্গে। কিন্তু তার পরিবারকে এখনো লাশটি বুঝিয়ে দেয়নি প্রশাসন।
ফ্যাসিস্ট হাসিনার ক্ষমতাচুত্যের পর ৬ মাস হলো ইউনুস সরকার ক্ষমতায় আসলো। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে নতুন একটি বাংলাদেশ দেখার স্বপ্ন দেখা শুরু করে ছিলো মানুষ।
আজকে ৬ মাস হয়ে গেল এখনো কেন লাশের সন্ধান পাওয়া গেল না? এখানো গোয়েন্দা সংস্থা পুলিশ প্রশাসন বসে বসে বেতন নিচ্ছে তাহলে হৃদয়ের লাশের সন্ধান কেন মিলছে না? তিনি বলেন ভুক্তভোগীর পরিবার বলছে আমার ছেলের হাড্ডিটা ফেরত দেন আমারা তাই নিয়ে বাসায় যাই। পরিবারের জন্য এরচেয়ে কষ্টের কি হতে পারে। ৫ আগস্ট গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা কলেজ ছাত্র হৃদয় হত্যা।
ওই নেতা আরো বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না। বাংলাদেশের মানুষ তা বৃথা যেতে দিবে না। আমরা বলতে চাই আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হৃদয়ের লাশ তার পরিবারকে ফেরত দিতে হবে। তার হাড্ডি যদি কুঁচি কুঁচি করাও হয় তারপর যেন তার লাশ পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়া হয়। জুলাই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরসহ আওয়ামী দোসরদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করার আহবান জানান তিনি।
উপদেষ্টাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আজকে আপনারা যারা চেয়ার নিয়ে বসে আছেন জনগণের রক্তের উপর বসে আছেন। এই জনগনের নিরাপত্তা জনগণের ন্যায্য দাবি পূরণের জন্য আপনাদেরকে চেয়ারে বসানো হয়েছে। তিনি বলেন, শুধু কোনাবাড়ীতে নয় আশুলিয়াও দেখেছি কিছু শ্রমিকের লাশ গাড়ির মধ্যে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচার
নিশ্চিত করতে হবে।
কাশিমপুর ৪ নং ওয়ার্ড ছাত্র দলের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ডালী বলেন,গত ৫ আগস্ট বিকেলে কয়েকজন পুলিশ সদস্য হৃদয়কে ঘিরে রেখে সরাসরি গুলি করে হত্যা করেছে। গুলি করে তার লাশ টেনে হিঁচড়ে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে তার লাশের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। কার নির্দেশে সেদিন হৃদয়কে হত্যা করা হলো তার বিচার এখনো হয়নি। তিনি বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে গেলেও তার প্রেতাত্মা এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে। আগে শেখ হাসিনার নাম মুখে উচ্চারণ করা যেতনা।
তিনি আরো বলেন, আগে দেখতাম দাদী নানীরা ছোট বাচ্চাদের ঘুম পাড়াতো ভুত আসলো ভূত আসলো বলে। কিন্ত এখন তারা বাচ্চাদের ঘুম পাড়ায় শেখ হাসিনা আসলো শেখ হাসিনা আসলো বলে।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন এর কোনাবাড়ী থানার আহবায়ক রবিউল আলম খান তন্ময় বলেন,৫ আগস্টের পরে কোনাবাড়ী থানায় যে ওসি গুলো এসেছে তারা তদন্ত করে বলেছে কোন পুলিশ হৃদয়কে গুলি করেনি গুলি করেছে যুবলীগ নেতা। তাহলে কোন যুবলীগ নেতা গুলি করল তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন? গত কয়েকদিন আগে দেখলাম নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ কোনাবাড়ী আমবাগে লিফলেট বিতরণ করছে। আমার প্রশ্ন তাহলে পুলিশ কি করছে? আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীদের নামে মামলা হয়েছে।
কিন্তু দেখলাম তারা ওপেনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশকি তাহলে এখনো টাকা খেয়ে চুপ হয়ে আছে? তিনি কোনাবাড়ি থানার ওসির উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা সঠিক তদন্ত করুন। যত দ্রুত সম্ভব আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মা গ্রেপ্তার করুন।
এ সময় অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন, গাজীপুর জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহবায়ক ফাহিম অর্নব, সদস্য তোফায়েল আহমেদ খান,মহানগর ছাত্রদলের সদস্য নকিব সরকার প্রমুখ।
নিহত হৃদয় (২০) টাঙ্গাইলের গোপালপুরের আলমনগর গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে। তিনি টাঙ্গাইলের হেমনগর ডিগ্রী কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি কোনাবাড়ী এলাকায় বসবাস করে অটোরিক্সা চালাতেন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন পুলিশের গুলিতে নিহত হন হৃদয়।
এই নিউজ পোর্টাল এর কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি ও দণ্ডনীয় অপরাধ।