উল্লাপাড়ায় মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে টিউশন ফি ও গাছ-ঘর বিক্রির অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
উল্লাপাড়া প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার মোড়দহ গাঁড়াবাড়ী দাখিল মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট মো. নুরুল আলম আনছারীর বিরুদ্ধে গাছ ও ঘর বিক্রির অর্থ আত্মসাৎ, টিউশন ফি বণ্টনে অনিয়ম, ঘুষ গ্রহণ এবং জনসাধারণকে ভয়ভীতি দেখানোর গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
লিখিত বক্তব্যবে অ্যাডভোকেট আবু তালেব জানান, মাদ্রাসা প্রাঙ্গণের মূল্যবান গাছ বিক্রি করে ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা এবং একটি ঘর বিক্রি করে ২৩ হাজার টাকা আদায় করা হলেও সেই টাকা মাদ্রাসার একাউন্টে জমা না দিয়ে ভুয়া ভাউচার দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেন সুপার নুরুল আলম আনছারী। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিয়মিতভাবে আদায়কৃত টিউশন ফি যথানিয়মে শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের কথা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে তা করে আসছেন না সুপার নুরুল আলম। বরং সেই অর্থও আত্মসাৎ করে নিজের জন্য ব্যয় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে শিক্ষক-কর্মচারীরা শুধু আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না, বরং নৈতিকভাবে চরমভাবে হতাশ ও বিরক্ত হচ্ছেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, একজন নিম্নমান সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. মনিরুল ইসলামের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে তাকে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ থেকে অব্যাহতি দেন সুপার। শুধু মনিরুল ইসলাম নয়—অভিযোগে বলা হয়, বিভিন্ন শিক্ষক ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ‘কারণ দর্শানো’ নামে নোটিশ জারি করা হয় এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে ৩০- ৪০ হাজার টাকা ঘুষ আদায়ের বিনিময়ে সেই নোটিশ প্রত্যাহার করা হয়।
এছাড়া এলাকার সচেতন জনগণ যখন এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করে ও হিসাব চাইতে যান, তখন তাদের পুলিশ দিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে মাদ্রাসা সুপার মো. নুরুল আলম আনছারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি মোবাইলে জানান, ২০১৮ সালে গাছ এবং ঘর কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিক্রি করা হয়েছে। সেই টাকা দিয়ে মাদ্রাসার বাউন্ডারি নির্মাণ করা হয়েছে। আর মনিরুল ইসলাম স্থানীয় কিছু লোকের উস্কানিতে আমার মাথার উপর চেয়ার তুলেছিলো, আমি কেন তার কাছ থেকে টাকা নেবো?
তবে তার এ বক্তব্য এলাকাবাসীর মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। তারা প্রশ্ন তুলেছেন—যদি সত্যিই বাউন্ডারি নির্মাণ করা হয়ে থাকে, তবে এর সঠিক হিসাব কোথায়? কেন এসব লেনদেন মাদ্রাসার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে হয়নি?
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল কাদের বিশ্বাস বলেন, মাদ্রাসায় দুটি পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। ফলে সুপার নিজেই প্রতিষ্ঠানটিতে ঢুকতে পারছেন না। তাই তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো তদন্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।
স্থানীয় শিক্ষক, কর্মচারী ও অভিভাবকরা বলেন, এটি একটি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখানে এই ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি আমাদের শিক্ষার্থীদের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। আমরা দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সুপারের দুর্নীতির বিচার দাবি করছি।
তারা আরও বলেন, প্রয়োজনে উর্ধ্বতন শিক্ষা কর্তৃপক্ষ, দুর্নীতি দমন কমিশন কিংবা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। তা না হলে এ প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ চরম হুমকির মুখে পড়বে এবং শিক্ষার পরিবেশ একেবারে নষ্ট হয়ে যাবে।
তদন্ত না হলে এলাকাবাসী বৃহত্তর কর্মসূচিরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। অনিয়মের বিচার না হলে প্রতিষ্ঠান বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়বে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।








