শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৩৪ পূর্বাহ্ন

উল্লাপাড়ার মোহনপুর ইউনিয়নের বর্ষার পানিতে নৌকাই ভরসা! ঘাটগুলোতে নেই যাত্রী ছাউনি ও আলোর ব্যবস্থা

রিপোর্টারের নাম : / ১৭৫ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫

আল-আমিন, উল্লাপাড়া :

বর্ষা মানেই নদী-নালা, খাল-বিলে টলমল পানি। গ্রামীণ সড়ক ডুবে গেলে মানুষের যাতায়াত হয়ে পড়ে দুরূহ। তখনই নৌকাই হয়ে ওঠে একমাত্র ভরসা। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নে বর্ষার মৌসুম মানেই যেন নৌকার মৌসুম। ইউনিয়নের চারটি ঘাটে প্রতিদিন শতাধিক নৌকার ভিড় হয়, আর সেই নৌকাতেই ভরসা করে হাজারো মানুষ।

ভোরের আলো ফুটার আগেই স্টেশন ঘাট, দহুকুলা ঘাট, ত্রি-মোহনী ও লাহিড়ীপাড়া স্কুল মাঠ ঘাটে ভিড় জমে যাত্রীদের। হাতে বই-খাতা নিয়ে আসে স্কুলগামী শিশুরা, বাজারের ঝাঁকা হাতে আসে কৃষক, কেউ আসে মাছ বিক্রির তাড়া নিয়ে। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই মাঝির বাঁশির সুরে শুরু হয় পারাপার। একটার পর একটা নৌকা ভর্তি হয়ে নদীর বুক চিরে ছুটে চলে।

মোহনপুর ইউনিয়নের ঘাটগুলো থেকে প্রতিদিন যাত্রীরা পৌঁছে যান অন্তত ৫০–৬০টি গ্রাম ও বাজারে। এর মধ্যে রয়েছে কালিয়াকৈড়, পশ্চিম বংকিরাট ও পূর্ব বংকিরাট, আঁচলগাতী, বলাইগাতী, নাদা, দত্তপাড়া, এলংজানী, বলতৈল, হাজিপুর, গোনাইগাতী, কাইমকোলা, কোনাবাড়ী, চন্ডিপুর, হাটউধুনিয়া, ভাঙ্গুড়া বাজার, ফরিদপুর বাজারসহ অসংখ্য এলাকায় ।

কিন্তু নৌকা ভরসা হলেও ভোগান্তি পিছু ছাড়ে না। ঘাটগুলোতে নেই কোনো ছাউনি বা বসার ব্যবস্থা। বৃষ্টির দিনে ভিজতে হয়, রোদে পুড়তে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। নেই বিদ্যুতের আলো কিংবা ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

কলেজগামী ছাত্রী হাফিজা খাতুন বলেন, বর্ষায় নৌকাই একমাত্র ভরসা। প্রতিদিন ভিড় থাকে প্রচণ্ড। অনেক সময় দাঁড়িয়ে যেতে হয়, তবুও নৌকা ছাড়া উপায় নেই। নৌকা না পেলে স্কুল-কলেজে যেতে দেরি হয়, জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলাফেরা করতে হয়।

কৃষক সলেমান জানান, ধান-সবজি বাজারে নেওয়ার জন্য নৌকাই ভরসা। কিন্তু যাত্রী ও মালপত্র বেশি হলে দুর্ঘটনার ভয় থেকেই যায়।

পশ্চিম বংকিরাটের মাঝি আজিজুল মণ্ডল বলেন, ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নৌকা চালাতে হয়। ঝড়, বৃষ্টি বা নদীর ঢেউ কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই নৌকার চাকায় সংসার চলে। মানুষ না পার করলে আমাদের ভাত জুটবে না।

স্থানীয়রা জানান, সরকারি উদ্যোগে যদি নৌকা ঘাটগুলো সংস্কার করা হয়, যাত্রীদের জন্য ছাউনি, বসার ব্যবস্থা, নিরাপত্তা ও আলোর ব্যবস্থা করা হয়, তবে মানুষের দুর্ভোগ অনেকটা কমবে।

দিনশেষে সন্ধ্যা নামতেই আবারও নদীর বুক চিরে ছুটে চলে নৌকা। ভেসে আসে মাঝির গলা, বাঁশির সুর আর ইঞ্জিনের শব্দ। এই শব্দই যেন মোহনপুর ইউনিয়নের জীবনের ছন্দ।

বর্ষার পানিতে আটকে যাওয়া গ্রামীণ জীবনের আশা-ভরসা নৌকার সঙ্গেই জড়িয়ে আছে। তাই এখানে নৌকা কেবল পরিবহনের মাধ্যম নয়, মানুষের টিকে থাকার সংগ্রামের অংশ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর