জাল দলিল তৈরি করে আদালতে মামলা দায়ের করে শাহজাদপুর উপজেলার খুকনী মৌজার সরকারের দখলে থাকা ১৬ শতক সম্পত্তি আত্মসাতের অপচেষ্টার ঘটনা ফাঁস হয়েছে। এ ব্যাপারে শাহজাদপুর সিনিয়র সহকারি জজ আদালতের বিচারক মো. সোহেল রানা বাদী হয়ে জাল দলিল সৃষ্টি করে সরকারি সম্পত্তির ভুয়া মালিকানা দাবীকারি মো. আফছার আলী শেখকে একমাত্র আসামী করে ফৌজদারী দন্ডবিধি ৪৬৫/৪৬৬/ ৪৬৭/৪৬৮/৪৬৯/ ৪৭১ ধারায় মামলা দায়ের করেছেন। শাহজাদপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মো. গোলাম রব্বানী এর আদালতে এ মামলা দায়ের হয়। মামলা নং সি আর ২১৪/২২(শাহ)।
আসামী মো. আফছার আলী শেখ উপজেলার খুকনী সাকিনের মৃত শামসাদ আলীর পুত্র।
আদালত এ মামলার অভিযোগ সরাসরি আমলে নিয়ে আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছেন। রোববার(২৬ জুন) শাহজাদপুর আমলী আদালতের ব্রেঞ্চ সহকারি (পেশকার) মো.জাহাঙ্গীর হোসেন মামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদিকে ঘটনার পর থেকে গা ডাকা দিয়েছে আসামী মো.আফছার আলী শেখ।
আদালত সূত্রে জানা যায়, শাহজাদপুর উপজেলার খুকনি ইউনিয়নের খুকনী গ্রামের মৃত শামসাদ আলীর পুত্র মো. আফছার আলী শেখ খুকনী মৌজার এসএ ৮৯৯ নং খতিয়ানের ৩২২৮ দাগ ও আরএস ১২৭৫ খতিয়ানের ৩৬৪৮ নং দাগে ১৬ শতক সম্পত্তি ১টি জাল দলিল সৃষ্টির মাধ্যমে মালিকানা দাবী করে শাহজাদপুর যুগ্ম জজ আদালতে অপর প্রকার ১১৯/১৮ নং মামলা দায়ের করিলে মামলাটি বিচার নিষ্পত্তির জন্য শাহজাদপুর সিনিয়র সহকারি জজ আদালতে স্থানান্তর হয়। মামলার নালিশী সম্পত্তি সরকারের মালিকানা হওয়ায় এ মামলায় গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসককে বিবাদী করা হয়। মামলার আরজিতে আফছার আলী শেখ দাবি করেন যে, জৈনেক যতীন্দ্র নাথ দাস ১১/১১/৬৯ তারিখে ১৩১২০ নং দলিলমুলে ১৬ শতক সম্পত্তি তাঁর বরাবর হস্তান্তর করেন। কিন্তু নালিশী সম্পত্তি শাহজাদপুর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের এখতিয়ারধীন হলেও মো. আফছার আলী শেখ কৌশলে ১৩১২০নং দলিল নওগাঁ জেলার আত্রাই সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে রেজিষ্ট্রি দেখিয়ে আদালতে দাখিল করে। দলিলটি কেন নওগাঁ জেলার আত্রাই সাব রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিষ্ট্রি করা হয়েছে সে মর্মে আরজিতে বা স্বাক্ষীর জবানবন্দিতে মো. আফছার আলী শেখ সুনির্দিষ্ট কোন কারণ উল্লেখ করেনি। যতিনন্দ্র একজন হিন্দু ভদ্রলোক যিনি স্বাধীনতাযুদ্বের সময় কিংবা পূর্ববর্তী কোন সময় ভারতে চলে যায় যার ফলে উক্ত সম্পত্তি বেওয়ারিশ সম্পত্তি হিসেবে সরকারের নামে রেকর্ড হয়েছে মর্মে আদালতের নিকট প্রতিয়মান হয়। দাখিলকৃত দলিলটি পর্যালাচনায়ও সৃজিত মর্মে আদালতের নিকট প্রতিয়মান হয়। যে সময়ে দলিল রেজিস্ট্রির কথা বলা হয় উল্লেখিত সময়ে পাক হানাদার বাহিনি রেজিষ্টি অফিস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিলো যার ফলে ঐ অফিসে পুরাতন কোন দলিলের ভলিয়ম বা মুল দলিল পাওয়া যায় না যার সুযোগ নিয়েছে মো. আফছার আলী শেখ এমটাও আদালতের বিবেচনায় ছিলো। মামলার বাদীপক্ষে একজন স্বাক্ষীর শেষে একতরফা সুত্রে বিনা খরচায় ডিসমিস করেন শাহজাদপুর সিনিয়র সহকারি জজ মো. সোহেল রানা। সরকারি সম্পত্তি জেনে ও বুঝে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল তৈরি করে সরকারের দখলে থাকা মূল্যবান সম্পত্তি আত্মসাতের উদ্দেশ্যে প্রতারণার মাধ্যমে উক্ত দলিলটি আদালতে দাখিল করেছে- মর্মে প্রমানিত হওয়ায় মো.আফছার আলী শেখের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় ফৌজদারী মামলা দায়ের হয়েছে বলে জানিয়েছেন আদালতের সেরেস্তাদার আমিরুল মোমেন খান।
আদালতে জাল দলিল দাখিলকারীর বিরুদ্ধে বিচারকের মামলা ইতিবাচক হিসেবে দেখছে সচেতন মহল।
আদালতে জাল দলিল দাখিলকারীর বিরুদ্ধে বিচারকের মামলা ইতিবাচক হিসেবে দেখছে সচেতন মহল।
চৌকি আদালতের সিনিয়র আইনজীবী এড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, জাল দলিল সৃষ্টি করে আদালতে দাখিল করা নিন্দনীয় কাজ। এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত।
এড. আব্দুল আজিজ জেলহক আদালতের যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বলেন, বিচার ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। জাল দলিল সৃষ্টিকারী মো. আফছার আলী শেখের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতের ওই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ হ্রাসে নিঃসন্দেহে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। সেইসাথে ভূমি দস্যুরাও জাল দলিল সৃষ্টি করে সম্পত্তি আত্মসাতের জন্য আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করতে ভয় পাবে।
এই নিউজ পোর্টাল এর কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি ও দণ্ডনীয় অপরাধ।