দিনাজপুরে চলতি রবি মৌসুমে ২২ হাজার ৭৪০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় উৎপাদিত সরিষা থেকে ১ কোটি ১৮ লাখ লিটার সরিষার ভোজ্যতেল উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। দিনাজপুর কৃষি অধিদপ্তরে রবি ফসল নিয়ে গবেষণা নিয়োজিত কৃষিবিদ আশাফুজ্জামান সম্প্রতি সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, দেশের মানুষ এখন ব্যাপকহারে বিদেশ থেকে আমদানি করা সয়াবিন এবং পাম অয়েল রান্নার কাজে ব্যবহার করছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের মতে আমদানিকৃত এসব তেল খেয়ে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন দেশের বৃদ্ধ থেকে শিশু বয়সের বাচ্চারা।
এ থেকে পরিত্রাণে বিকল্প হিসেবে সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করতে এবার দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলায় ২০ হাজার ২০০ টন সরিষা বীজ ও কীটনাশক সার কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। স্বল্পসময়ের মধ্যে সরিষা জমিতে বোপণের পর ৪০-৫০ দিনের মধ্যে গাছ বড় হয়ে যায় এবং ফলন পরিপক্ব হয়। আগাম জাতের আমন ধান নভেম্বর মাসে কর্তন করা হয়ে থাকে। এরপরই জমিতে সরিষা বোপণ করা হয়।
কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মীরা ওই জমিতে সরিষা চাষে অতিরিক্ত ফলন হিসেবে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। গত বছর জেলায় ১৬ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছিল। এবার তা বেড়ে ২২ হাজার ৭৪০ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। এসব জমিতে এবার ২৯ হাজার ৪৯২ টন সরিষা উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাজারে ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে অস্থিরতা শুরুর পর ধানের জেলায় কৃষকরা সরকারি সহায়তা এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে তেলজাতীয় সরিষার ব্যাপক চাষ করেছেন। সরিষার ফলনে কৃষক এবং কৃষি বিভাগ উভয়েই বেশ খুশি। এভাবে সরিষার চাষ হলে ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমে আসবে।
দিনাজপুর কৃষি অধিদপ্তরে উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান মিয়া জানান, দিনাজপুর জেলায় প্রধান ফসল ধান হলেও এ জেলায় লিচু, কয়লা, পাথর, মধু উৎপাদন হয়। এবার জেলায় ব্যাপকহারে সরিষার চাষ হয়েছে। জেলায় ২২ হাজার ৭৪০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৬ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে বেশি চাষ হয়েছে।
জেলার বিরল উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের কৃষক বিপুল রায় জানান, তিনি সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছেন। এক বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে সাড়ে ১০ হাজার টাকা। ফলন ভালো হয়েছে। তিনি সরিষা কাটা ও মাড়াই শুরু করেছেন। বিঘাপ্রতি ৮-৯ মণ সরিষা পাবেন। বর্তমান বাজার অনুযায়ী সরিষা বিক্রি করলে প্রতি বিঘার সরিষা ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হবে। এতে তার বিঘাপ্রতি লাভ হবে ১৪-১৫ হাজার টাকা। বাড়তি আয়ের পাশাপাশি পরিবারের ভোজ্যতেলের চাহিদাও মিটবে। আগামী বছর আরো বেশি সরিষা চাষ করবেন বলেও জানান।
এ ব্যাপারে দিনাজপুর সরিষা তেল প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান পূর্বালী মিলের মালিক আলহাজ আব্দুল আউয়াল জানান, ২৯ হাজার ৪৯২ টন সরিষা দিয়ে প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ লিটার ভোজ্যতেল উৎপাদন করা সম্ভব। এই তেল উৎপাদন হলে জেলার চাহিদা পূরণ করে অন্য জেলাতেও সরবরাহ করা যাবে।
দিনাজপুরের সোনালি অয়েল কারখানার মালিক হাকিউল ইসলাম হাকী জানান, প্রতি মণ (৪০ কেজি) সরিষা থেকে তেল পাওয়া যায় ১৬ লিটার। অর্থাৎ এক টন সরিষা থেকে তেল উৎপাদন হয় ৪০০ লিটার। সে হিসাব অনুযায়ী ২৯ হাজার ৪৯২ টন সরিষা থেকে তেল উৎপাদন হবে ১ কোটি ১৭ লাখ ৯৬ হাজার ৮০০ লিটার।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দিনাজপুর আঞ্চলিক কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ জানান, ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান করতে কৃষকদের এবার সরিষা আবাদে উৎসাহিত করা হয়েছে। ৪৩ হাজার কেজি সরিষার বীজ বৃহত্তর দিনাজপুরে ৩টি জেলায় বিনামূল্যে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে সাড়ে ৪৩ হাজার কৃষককে বিনামূল্যে রাসায়নিক সার দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, দিনাজপুরে গত বছর ১৬ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছিল। এবার তা বেড়ে ২২ হাজার ৭৪০ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। এসব জমিতে এবার ২৯ হাজার ৪৯২ টন সরিষা উৎপাদন হয়েছে।
এই নিউজ পোর্টাল এর কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি ও দণ্ডনীয় অপরাধ।