প্রিন্ট এর তারিখঃ জানুয়ারী ২২, ২০২৫, ২:০১ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ ডিসেম্বর ৪, ২০২২, ১:৪৬ অপরাহ্ণ
নিজের ১০০০তম ম্যাচ রাঙিয়ে আর্জেন্টিনাকে কোয়ার্টার ফাইনালে নিলেন মেসি
৬৫ মিনিটে মাঝ মাঠ থেকে বল নিয়ে চিতার মতো অস্ট্রেলিয়ান মিডফিল্ডের ট্রাইঙ্গেল ভেদ করে ছুটতে শুরু করেছিলেন লিওনেল মেসি। সেই দৌড় এতটাই নান্দিক ছিল যে, মনে হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়েরা অভিবাদন জানিয়ে জায়গা ছেড়ে দিচ্ছিলেন মেসির জন্য। এরপর হুলিয়ান আলভারেজকে বল দিয়ে প্রতিপক্ষ রক্ষণে ঢুকেও পড়েছিলেন।
যদিও শেষ পর্যন্ত মেসির সেই একক দৌড় থেকে গোল আসেনি, তবে মেসির জাদুকরী সেই ঝলকে দর্শকেরা দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানাতে ভুল করেননি। মেসি তো এমনই জাদুকর, এক দৌড়েই জাগিয়ে দিয়েছিলেন আহমাদ বিন আলি স্টেডিয়াম থেকে ঢাকার কাওরান বাজার পর্যন্ত। অবশ্য কাজের কাজটা আগেই করে রেখেছিলেন মেসি। অস্ট্রেলিয়ার রক্ষণ–কৌশল যখন মেসিসহ গোটা আর্জেন্টাইন রক্ষণকে বিবশ করে রেখেছিল, তখন ডেডলক ভাঙার কাজটা নিজের কাঁধেই নিলেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। তাঁর গোলেই যে ম্যাচের ৩৫ মিনিটে লিড নেয় আার্জেন্টিনা।
যেটি বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে মেসির করা প্রথম গোল। আর এটি ছিল ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে মেসির ক্যারিয়ারের ১০০০তম ম্যাচ। আর্জেন্টাইন জাদুকর এগিয়ে দেওয়ার পর অন্য গোলটা ছিল অস্ট্রেলিয়ান গোলরক্ষকের উপহার। যে উপহার লুফে নেন হুলিয়ান মার্তিনেজ। তবে শেষ দিকে দারুণ এক গোলে আর্জেন্টিনাকে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি। সকারুদের দৌড় থামল দ্বিতীয় রাউন্ডেই। আর্জেন্টিনা ম্যাচ জিতল ২–১ গোলে।
এদিন ম্যাচের আগে আর্জেন্টিনাকে ভয় না পাওয়ার কথা বলেছিল অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচের শুরুতেও ছিল সেই ছাপ। পোল্যান্ডের মতো নিচে নেমে না এসে মাঠে নিজেদের পজিশন ধরে রেখেই খেলা শুরু করে তারা। আর্জেন্টিনা পাসের পর পাস দিয়ে চেষ্টা করছিল জায়গা বের করে আক্রমণে যেতে। তবে মনোযোগ ধরে রেখে অস্ট্রেলিয়া খুব বেশি সুযোগ দিচ্ছিল না আর্জেন্টাইনদের। শুধু লিওনেল মেসিদের ঠেকিয়ে রাখা নয়, আক্রমণেও চোখ ছিল সকারুদের।
কয়েকবার ওপরে ওঠে আর্জেন্টানই রক্ষণের পরীক্ষাও নিয়েছিল তারা। আর অস্ট্রেলিয়ার কৌশলের কারণে আর্জেন্টিনা চাইলেও অলআউট আক্রমণে যেতে পারছিল না। ম্যাচের প্রথম ৩০ মিনিটে ৬১ শতাংশ বলের দখল রাখলেও, একটি বেশি শট নিতে পারেনি আর্জেন্টিনা। সেই শটটিও অবশ্য লক্ষ্যে ছিল না। উইং এবং মিড দুই দিক থেকেই আক্রমণে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার রক্ষণ ভাঙার চেষ্টা করছিলেন মেসিরা। তবে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাক লাইনে ছিল অনড়।
শেষ পর্যন্ত ৩৫ মিনিটে মেসিকে এগিয়ে এসেই ভাঙতে হলো অস্ট্রেলিয়ার রক্ষণ–দুর্গ। তাঁর প্রথম প্রচেষ্টা অস্ট্রেলিয়ার ডি–বক্স থেকে ফিরে আসলে দিলেও, সেই আক্রমণেই ডি–বক্সে ভেতর থেকে দারুণ এক মাটি কামড়ানো শটে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন মেসি। অবশেষ পাওয়া গেল কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের নকআউটে গোল পেলেন লিওনেল মেসি। আর্জেন্টাইন জাদুকরের গোলেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের ৩৫ মিনিটে লিড নিয়েছে আর্জেন্টিনা। এর আগে বিশ্বকাপে মেসি ৮ গোল করলেও তার ১টিও নকআউট পর্বে ছিল না।
সবগুলোই করেছেন বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে। তবে বিশ্বকাপের নকআউটে গোল না পেলেও সহায়তা করেছিলেন ৪টিতে। এই এক গোলের লিড নিয়েই বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা। বিরতির পরও জমে ওঠে লড়াই। পিছিয়ে পড়া অস্ট্রেলিয়া প্রথমার্ধের কৌশল ধরে রেখে আক্রমণে গিয়ে সুযোগ তৈরির চেষ্টা করে। আর্জেন্টিনাও বল পেলে ওঠে আসছিল ওপরে। এর মাঝে মেসি ডি–বক্সের ভেতর থেকে আবার শট নিয়েছিলেন তবে তাতে গোল আসেনি।
একটু পর আর্জেন্টাইন রক্ষণের ভুলে আরেকটু হলে সমতা প্রায় ফিরিয়েই ফেলেছিল অস্ট্রেলিয়া। যদিও শেষ পর্যন্ত দলকে রক্ষা করেন এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। আর্জেন্টিনার রক্ষণের ভুল অস্ট্রেলিয়া কাজে লাগাতে না পারলেও, অস্ট্রেলিয়ার ভুল ঠিকই কাজে লাগিয়ে জোড়া গোলের লিড নেয় আর্জেন্টিনা। ব্যাক পাসে অস্ট্রেলিয়ান গোলরক্ষক বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যর্থ হলেও এগিয়ে বল জালে জড়ান হুলিয়ান আলভারেজ। ৭৭ মিনিটে ক্রেইগ গুডইনের ডি–বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া ভলি এনজো ফার্নান্দেজের গায়ে লেগে দিক পাল্টে জালে জড়ালে ব্যবধান কমায় অস্ট্রেলিয়া। একটু পর অস্ট্রেলিয়ার আরেকটি দারুণ সুযোগ অল্পের জন্য জালের ঠিকানা খুঁজে পায়নি।
এই নিউজ পোর্টাল এর কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি ও দণ্ডনীয় অপরাধ।
Copyright © 2025 কলমের বার্তা. All rights reserved.