প্রতিন্দ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দেয়নি দলটি। কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে প্রার্থী ও দলীয় নেতাকর্মীদের দেওয়া হয়েছে দিকনির্দেশনা। হাইকমান্ডের নির্দেশে আজ ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে নানাভাবে সহযোগিতা করবেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্র্মীরা।
একই সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন উইং কাজ করবে ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে। ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গঠন করা হয়েছে কমিটি।
ভোটবিরোধীরা যেন ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা দিতে না পারে, সে বিষয়েও সতর্ক দলটি। দলটির হাইকমান্ড চাইছেন-বিএনপির হরতাল এবং যে কোনো ধরনের সহিংসতা ও নাশকতার বিরুদ্ধে সতর্ক থেকে শান্তিপূর্ণ অংশগ্রহণমূলক ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করতে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে একাধিক জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে সকাল-সকাল ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
সোমবার রাজধানীর কলাবাগান মাঠের জনসভায় তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত অগ্নিসন্ত্রাস করে আপনাদের ভোট কেড়ে নিতে চায়। আপনারা প্রত্যেক ভোটার পরিবার-পরিজন নিয়ে সকাল-সকাল ভোটকেন্দ্রে যাবেন। আপনার ভোট আপনি দেবেন। ভোট আপনি দিয়ে তাদের উপযুক্ত জবাব দেবেন।
শনিবার নোয়াখালীতে নিজ নির্বাচনি এলাকায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও ভোটারদের ভোট দিতে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, নির্বাচনে আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য বিএনপি-জামায়াত যে কর্মসূচি নিয়েছে তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করুন। আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নিয়োজিত আছে, আপনারা নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে আসুন, দলে দলে নিজেদের সাংবিধানিক অধিকার বাস্তবায়ন করতে ভোট দেবেন। কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ ও ভয়ভীতির কাছে নতি স্বীকার করবেন না। যারা ভোট প্রদানে বাধা সৃষ্টি করবে তাদের প্রতিহত করুন।
একই দিন নির্বাচন কমিশনে বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে গিয়ে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া সব ষড়যন্ত্র-ভয় উপেক্ষা করে রোববার গণতন্ত্রের উৎসবে অংশ নিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে উৎসবের পরিবেশ বিরাজ করবে, সেখানে সাধারণ জনগণ ভোটকেন্দ্রে আসবেন এবং তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার বাড়াতে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রে ভোটার আনতে প্রশিক্ষণ দিয়ে কয়েক লাখ কর্মী তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ।
এর বাইরে গত সেপ্টেম্বরে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে সারা দেশের জন্য ১২টি দল গঠন করা হয়। প্রতিটি দল গড়ে পাঁচ থেকে সাতটি সাংগঠনিক জেলার দায়িত্ব পায়। এসব জেলা থেকে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের থেকে বাছাই করে প্রচারকর্মীর তালিকা তৈরি করা হয়। এরপর তাদের ধারাবাহিকভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারা আজ সকাল থেকেই যত বেশি সম্ভব ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে কাজ করবে।
এছাড়া দেশের ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো এবং নৌকার প্রচারের জন্য প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য ইউনিটভিত্তিক কমিটি গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। প্রত্যেক কমিটিতে সদস্য আছেন ৩০০ জন তৃণমূল নেতা। এ কমিটিগুলো নির্বাচনের দিন ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখা এবং ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসতে নানাভাবে উৎসাহ দেবে। একইসঙ্গে ভোট বানচালে বিরোধীদের যে কোনো প্রচেষ্টারও মোকাবিলা করবে বলেও জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোট পড়েছিল ৫৩.৫৪ শতাংশ। ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় নির্বাচনে মোট ভোট পড়েছিল ৫১.২৮ শতাংশ। ১৯৮৬ সালে বিএনপির বর্জনের মধ্যে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির হার ছিল ৫৯.৩৮ শতাংশ।
১৯৮৮ সালে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের বর্জনের মধ্যে চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে মোট ভোট পড়ে ৫৪.৯৩ শতাশং। ১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়ে ৫৫.৫৪ শতাংশ। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের বর্জনের মধ্যে ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়ে প্রায় ৭৫ শতাংশ।
এঝাড়া ১৯৯৬ সালের জুনের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ৭৫.৬০ শতাংশ ভোট পড়ে। ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়ে ৭৪.৬০ শতাংশ। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়ে ৮৭.১৩ শতাংশ।
বিএনপি-জাময়াত জোটের বর্জনে ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৪০.০৪ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৮০.৪১ শতাংশ। আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রত্যাশা, বিএনপির বর্জন ও বিরোধীর প০রও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ভালো হবে।
এদিকে নির্বাচনে অনেক আসনেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। বিভিন্ন আসনে দল ও দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সংযত রাখতে কঠোর অবস্থানে থাকবে ক্ষমতাসীনরা।
ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে কেউ ভোটের পরিবেশ নষ্টের অপচেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবে দলটি। অন্যদিকে ভোটের দিন ঘিরে বিএনপির নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা থাকতে পারে বলেও আশঙ্কা ক্ষমতাসীনদের। ফলে এদিন বিএনপির হরতাল কর্মসূচিতেও কড়া নজর রাখবে আওয়ামী লীগ। এসব বিষয়ে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
সূত্র: যুগান্তর
এই নিউজ পোর্টাল এর কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি ও দণ্ডনীয় অপরাধ।