শ্রমিকদের মজুরি, কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ সংবেদনশীল আচরণ এবং নারী কর্মীদের সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থাগুলোকে সাথে নিয়ে একটি নীতিমালা তৈরিতে হাত দিয়েছে পোশাক খাতের মালিক পক্ষ। আগামী ছয় মাসের মধ্যে একটি কার্যকর নীতিমালা প্রণয়নে ‘সাসটেইনেবল টেক্সটাইল ইনিশিয়েটিভ: টুগেদার ফর চেইঞ্জ’ বা স্টিচের সঙ্গে এক সঙ্গে কাজ করতে একটি সমঝোতা চুক্তি করেছে তারা।
স্টিচ হচ্ছে বৈশ্বিক বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতে কাজ করা কয়েকটি সংগঠনের একটি অংশীদারিত্বমূলক উদ্যোগ, যার লক্ষ্য হল কাজের ক্ষেত্রে মানবাধিকার সমুন্নত রাখার মাধ্যমে একটি সমতাভিত্তিক ও ন্যায়ানুগ সমাজ গঠন। নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই উদ্যোগে অর্থায়ন করছে। আর বাংলাদেশে স্টিচ উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করছে তিনটি সংগঠন– মনডিয়াল এফএনভি, ইটিআই বাংলাদেশ এবং ফেয়ার ওয়্যার ফাউন্ডেশন।
মঙ্গলবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান ও ফেয়ার ওয়্যার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আলেকজান্ডার কন্সটাম এই চুক্তিতে সই করেন। বিকেএমইএর অপর সহ-সভাপতি আকতার হোসেন অপূর্ব, নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের অর্থনীতি বিষয়ক ফার্স্ট সেক্রেটারি বাস ব্লাউ, স্টিচের কনসোর্টিয়াম কো-অর্ডিনেটর মুই কালান্দার এসময় উপস্থিত ছিলেন।
লিঙ্গ সংবেদনশীল কাজের পরিবেশ অনুষ্ঠানে বলা হয়, নারীর জন্য নিরাপদ ও সম্মানজনক কর্ম পরিবেশ নিশ্চিতে যৌন হয়রানিসহ সব ধরনের জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা দূর করতে বিকেএমইএ ও স্টিচ কনসোর্টিয়াম আগে থেকেই পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করছে। বিকেএমইএর সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, “উচ্চ আদালতের নির্দেশে পোশাক কারখানাসহ সব ধরনের কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে কমিটি থাকার কথা।
“পোশাক কারখানাগুলোতে এ ধরনের কমিটি থাকলেও সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে তা পুরোপুরি কার্যকর নয়। এখন আগামী ছয় মাসের মধ্যে একটি গাইডলাইন তৈরি করা গেলে সেটা নিশ্চিয় এই কাজটিকে আরেক ধাপ এগিয়ে নেবে।” চুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, “স্টিচ কনসোর্টিয়ামের এই কাজের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং রিসোর্স রয়েছে।
“দুই পক্ষই একমত হয়েছে যে বিকেএমই-এর সদস্য ফ্যাক্টরিগুলোতে হাই কোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য পারস্পরিক বোঝাপড়া ও আলোচনার মাধ্যমে একসাথে কাজ করবে।” ফেয়ার প্রাইস অ্যাপ সময়ের চাহিদা অনুসারে শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি করা হলে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছ থেকে যেন তার স্বীকৃতি ও পণ্যের মূল্যে তার প্রতিফলন পাওয়া যায়, সেজন্য ন্যায্যমূল্য নির্ধারণে একটি অ্যাপ চালু করতে আরেকটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে দুই পক্ষ।
বিকেএমইএ নেতা ফজলে শামীম বলেন, “প্রতি বছরই আমরা পাঁচ শতাংশ হারে মজুরি বাড়িয়ে যাচ্ছি। কিন্তু ক্রেতাদের কাছ থেকে সে অনুযায়ী পণ্যের মূল্য পাচ্ছি না। মূলত ক্রেতাদের কাছ থেকে পোশাক বিক্রির টাকা থেকেই কারখানাগুলোতে শ্রমিকের মজুরিসহ অন্যান্য খরচ হয়ে থাকে। তাই শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে পোশাকের ন্যায্য দামও জরুরি।”
দেশি-বিদেশি উদ্যোগে তৈরি করা এই অ্যাপের মাধ্যমে দেখা যাবে শ্রমিকের প্রয়োজনীয় মজুরি বাড়ানোর ফলে পোশাকের মূল্যে কী প্রভাব পড়ে; সে অনুযায়ী পোশাকের দাম ঠিক করা হবে। ফজলে শামীম বলেন, ”তারপর ক্রেতারা যদি এই দাম দিতে গড়িমসি করে, তাহলে তারা আন্তর্জাতিকভাবে চাপে পড়বে। তাই ফেয়ার প্রাইস অ্যাপও পোশাক খাতের সুশাসনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।” স্টিচ কনসোর্টিয়াম ফেয়ার প্রাইস অ্যাপটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিকেএমইকে কারিগরি সেবা দেবে।
বিকেএমইএ এবং এর সদস্যরা ফ্যাক্টরিগুলোর মতামত নিয়ে সে অনুসারে অ্যাপটির প্রয়োজনীয় উন্নয়ন করতে সব পক্ষ একমত হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়। অ্যাপটির কর্মদক্ষতা নিয়ে সন্তুষ্ট হলে তখন অ্যাপটির ভবিষ্যৎ ব্যবহার ও মালিকানা নিয়ে স্টিচ কনসোর্টিয়ামের সাথে ‘সহযোগিতার ভিত্তিতে’ কাজ করবে বিকেএমইএ । তারপর বিকেএমই-এর সদস্য ফ্যাক্টরিগুলো অ্যাপটি ব্যবহার শুরু করবে।
এই নিউজ পোর্টাল এর কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি ও দণ্ডনীয় অপরাধ।