মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস আজ

‘পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জ্বলন্ত/ ঘোষণার ধ্বনিপ্রতিধ্বনি তুলে,/ নতুন নিশান উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক/ এই বাংলায়/ তোমাকে আসতেই হবে, হে স্বাধীনতা।’ কবি শামসুর রাহমান ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় এভাবেই স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার কথা ব্যক্ত করেছিলেন।
আজ ২৬ মার্চ, আরাধ্য সেই স্বাধীনতার দিন। বাঙালির শৃঙ্খলমুক্তির দিন। হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে জেগে ওঠার মহান দিন। ৫৩ বছর আগে ১৯৭১ সালের এই দিনেই এসেছিল বাঙালির কাঙ্ক্ষিত সে স্বাধীনতা। আজ সেই মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস।
পাকিস্তানের শাসনামলে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক জান্তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে জাতিকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান জাতির অবিংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। অস্ত্রের ভাষায় বিদ্রোহ দমনে ব্যর্থ শাসকগোষ্ঠীর নির্দেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ২৫ মার্চ কালরাতে শুরু করে গণহত্যা। মধ্যরাত অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবন থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগ মুহূর্তে দেওয়া সে ঘোষণায় বঙ্গবন্ধু শত্রুসেনাদের বিতাড়িত করতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করতে দেশবাসীকে নির্দেশ দেন।
তৎকালীন ইপিআরের ওয়্যারলেস থেকে সে বার্তা ছড়িয়ে পড়ে দেশের সর্বত্র। বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণায় সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে গোটা জাতি। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় কাঙ্ক্ষিত মুক্তি। লাখো প্রাণের বিনিময়ে জাতি অর্জন করে একটি দেশ, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত।
কৃতজ্ঞ জাতি আজ শোক ও গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে অবনতচিত্তে স্মরণ করবে স্বাধীনতার জন্য আত্মোত্সর্গকারী শহীদদের। শ্রদ্ধা জানাবে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি নেতৃত্ব দেওয়া চার জাতীয় নেতাসহ বাংলার অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। পাশাপাশি গোটা দেশ মেতে উঠবে স্বাধীনতার উৎসবে।
দিনের কর্মসূচি : মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে নানাবিধ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশে প্রত্যুষে একত্রিশবার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে। গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোয় জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে।
আজ সরকারি ছুটির দিন। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র, নিবন্ধ ও সাহিত্য সাময়িকী প্রকাশ করছে। ইলেকট্রনিক মিডিয়াসমূহ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচার করবে।
মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ প্রকাশ করবে স্মারক ডাকটিকিট। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়াও দেশের সব শিশু পার্ক ও জাদুঘরসমূহ বিনা টিকিটে উন্মুক্ত রাখা হবে। পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ কর্মসূচি পালন করা হবে।
এ ছাড়া দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল এবং জাতীয় পর্যায়ের সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো পৃথক অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে।