লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় দুই কৃষকের দুই বিঘা জমির ফল ভর্তি প্রায় ৪ হাজার শসা গাছ উপড়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

মঙ্গলবার(২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে এ ঘটনায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে আদিতমারী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক সুধাংশু বর্মণ (৪০)। একই বিষয়ে অপর কৃষক সুখ চাঁন (৩২) বাদি হয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার বরাবরে অপর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

এর আগে সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাতে উপজেলার বড় কমলাবাড়ি জোরা মন্দির এলাকায় কে বা কাহারা তাদের দুই বিঘা জমির প্রায় ৪ হাজার শসা গাছ উপড়ে ফেলে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক সুধাংশু বর্মণ বড় কমলাবাড়ি জোরা মন্দির গ্রামের সুবধ চন্দ্রের ছেলে এবং অপরজন সুখ চাঁন চন্দ্র একই গ্রামের মৃত জয়মুল্য চন্দ্রের ছেলে।
জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলার সবজি এলাকা খ্যাত বড় কমলাবাড়ি গ্রামের সকল কৃষক সবজি উৎপাদন করে উপার্জন করেন। এ গ্রামের সবজির কদর রয়েছে দেশ জুড়ে। এলাকার চাহিদা মিটিয়ে এ গ্রামের চাষিদের সবজি চলে যায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে। এ গ্রামের ভুমিহীন কৃষকরাও অন্যের জমি লিজ বা বর্গা নিয়ে বাণিজ্যিক ভাবে গড়ে তোলেন বিভিন্ন সবজির বাগান।

আসন্ন রমজানের বাজারে আগাম শসার চাহিদা থাকে ব্যাপক। চাহিদা বিবেচনায় এ গ্রামের চাষিরা আগাম শসার চাষ করেন। প্রতিবছর মত এ বছরও বর্গা নেয়া ৪০ শতাংশ জমিতে এনজিও থেকে ঋন নিয়ে শসার চাষ করেছেন কৃষক সুধাংশু বর্মণ। নিবির পরিচর্যায় তার শসা ক্ষেতে ফুল এসেছে। ফল ধরা শুরু করেছে। আর মাত্র ১০/১২ দিনের মধ্যে তার শসা বাজারে তোলা যেত। সুর্যদয় থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত শসা ক্ষেতেই শ্রম দেন তিনি। মঙ্গলবার সকালে ক্ষেতে এসে দেখেন তার শসা ক্ষেতের সকল গাছ উপড়ে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা।

একই অবস্থা তার প্রতিবেশি সুখ চান চন্দ্রে। তারও বর্গা নেয়া ২১ শতাংশ জমির শসা ক্ষেতের সকল গাছ উপড়ে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। ক্ষেতের এমন দৃশ্য দেখে হাউ মাউ করে কেঁদে ফেলেন কৃষক সুখ চান। সুখ চাঁনের ক্ষেতে শসা ধরতে শুরু করেছে। আগামী সপ্তাহে তার শসা বাজারে পাঠানোর স্বপ্ন ছিল।

পাশ্ববর্তি আরও অনেক শসা ক্ষেত থাকলেও তাদের একটা গাছের ডালও নষ্ট করেনি। অথচ ভুমিহীন গরিব দুই কৃষকের দুই বিঘা জমির প্রায় ৪ হাজার শসা গাছ উপড়ে ফেলে কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতি করেছে দুর্বৃত্তরা। গ্রামের নিরীহ দুই কৃষকের এ ক্ষতিতে পুরো গ্রাম জুড়ে হতাশা আর আতংক বিরাজ করছে। সকল কৃষকই রয়েছেন আতংকে। সুধাংশু ও ফুল চাঁনের পরে কার ক্ষেতে যেন হামলা করে দুর্বৃত্তরা। এমন শ্বঙ্কায় রয়েছে পুরো সবজি গ্রামের চাষিরা।

এ ঘটনায় কৃষক সুধাংশু বর্মণ বাদি হয়ে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে আদিতমারী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। একই ঘটনায় অপর কৃষক সুখ চাঁন উপজেলা কৃষি অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সুধাংশু বর্মন বলেন, নিজের কোন জমি নেই। প্রতি বছরের মত এ বছরও অন্যের জমি বর্গা নিয়ে এনজিও'র ঋনে শসা চাষ করেছি। সেই ক্ষেত দুর্বৃত্তরা রাতের আঁধারে সবগুলো গাছ উপড়ে ফেলে দিয়েছে। গত বছর এ জমি থেকে দেড় লাখ টাকার শসা বিক্রি করেছি। এ বছরও দুই লাখ টাকার শসা বিক্রির স্বপ্ন ছিল। কিন্তু দুর্বৃত্তরা তার সেই স্বপ্ন রাতের আঁধারে ভেঙে দিয়েছে।

অপর কৃষক সুখ চাঁন বলেন, আদরে পালিত গরু বিক্রি করে ২৫ হাজার টাকা খরচ করে বর্গা নেয়া ২১ শতাংশ জমিতে শসার চাষাবাদ করেছি। আবাদ উঠে গেলে দেড় লাখ টাকা আয় হত। সে থেকে গরুর খামাড় গড়ে তোলার স্বপ্ন ছিল সুখ চাঁনের। তার সেই স্বপ্ন ধুলিসাৎ করেছে দুর্বৃত্তরা। এখন শসা ক্ষেতেই মায়া কান্না করছেন এ চাষি। আদরের গরুও নেই, সন্তানতুল্য শসা ক্ষেতও নেই। তারা এ ঘটনায় অভিযুক্তদের চিহ্ণিত করে কঠোর শাস্তিসহ তাদের ক্ষতিপুরন দাবি করেন।

আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক বলেন, অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।