এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভুড়ি ভুড়ি, রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।
কবি গুরু রাবিন্দ্রনাথের লাইন দুটি মনে হবে ময়েন উদ্দিন নামের ৪৫ বছরের মাঝ বয়সি হতভাগার জন্যই লেখা।
ফেসবুক, ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুললেই ফ্রী মোশন, পিপল লাইভ জোন, হিউম্যান লাভার সহ অনেক কন্টেন্ট ক্রিকেটার আমাদের চোখে পড়ে যারা সমাজের অবহেলিত, অসহায়, ছিন্নমূলদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। ময়েনের চাওয়াটা সরকার ও বৃত্তবানদের কাছে হলেও, বিশ্বাস তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে সকলের কাছে চাইলেই তার স্বপ্ন পুরন হবে। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের উত্তর গোবধা কাশিয়া বাড়ি এলাকার ময়েন উদ্দিন (৪০) এইর কথা, যিনি দুবাইয়ের মতো আলিসান শহরে বছরের পর বছর বাবুর্চির কাজ করলেও চেয়েছিলেন নিজ দেশে ফিরে তার যাপিত জীবন হবে সুখ সমৃদ্ধিতে ভরা আর রাজকীয়। কিন্তু আমরা ভাগ্যের পরিহাস বলি আর বিধির বিধান, আপন বড় ভাইয়ের কাছে প্রতারিত হয়েছেন ময়েনউদ্দিন। আপন বড়ো ভাই আইনুদ্দিন (৫৫) আর ময়েন এক সাথেই ছিলেন দুবাইয়ে। ভিসা জটিলতায় অনেক পরিশ্রম করে অর্জিত সকল অর্থ জমা রাখতেন বড়ো ভাইয়ের নিকট। যেহেতু ময়েন দীর্ঘ সময় সেদেশের অবৈধ অভিবাসী হিসেবে ছিলেন তাই চাইলেও উপার্জন করা টাকা ব্যাংকে রাখতে কিংবা বাড়িতে পাঠাতে পারতেন না। এমনটাই দাবি করেন ভাইয়ের কাছে প্রতারিত হওয়া ময়েন। তার দ্বাবি ৬০ থেকে ৭০ হাজার দিরহাম (দুবাইয়ের মুদ্রা) এখনো পাবেন বড়ো ভাইয়ের নিকট।
বর্তমান যুগে ভাইয়ের কাছে ভাই প্রতারিত হওয়াটা একেবারে ব্যতিক্রম কিছু নয়। হরহামেশাই এমন ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে আমাদের সমাজে।
প্রবাসী জীবনের ১১ বছরে অর্জিত সকল অর্থ খুইয়েছেন ভাইয়ের কাছেই। হ্যা আর সেই সোগে পাগল প্রায় স্ত্রী বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন ধুঁকে ধুঁকে। সোনার সংসার ছিলো ময়েনের। কে জানতো, অন্ধকার নেমে আসবে তার জীবনে। খালি হাতে দেশে ফিরে খেয়ে না খেয়ে হতাশায় দিন কাটছিলো ময়েনের পরিবারের।
এমন সময় হঠাৎই স্ত্রী রোগে, শোকে বিছানায় পরে ছিলো। চিকিৎসা করাতে না পারায় কারো পরামর্শে স্ত্রীর চিকিৎসায় সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে আবেদন করে পাওয়া সরকারি ৫ হাজার টাকা স্ত্রীর চিকিৎসায় ব্যায় করেন।
কিন্তু সে চেষ্টা বৃথা করে স্ত্রী লাইলি বেগম ময়েনকে মাঝ বয়সে একা করে পরো লোক গমন করেন। বর্তমানে ঘরবাড়ি হারা হয়ে, কার বাড়িতে কিসের অনুষ্ঠান চলছে সেই খোঁজ নিয়েই সময় কাটে ময়েনের। দরকার রাতে মাথা গুঁজতে পরের ঘরের চাল আর পেটের জন্য এক বেলার খাবার।
গানবাজনা করে যে কোন অনুষ্ঠানের বাড়িতে শুধু রাতটুকু কোনো মত কাটিয়ে দেন ময়েন। প্রভাবশালী বড়ো ভাই এখনো দেশের বাহিরেই থাকেন। ভাইদের প্রতি এখন আর কোন অভিযোগ নেই ময়েনের। এখন ঘুরে দাঁড়ানোর সপ্ন দেখেন তিনি। গানের তালে মাথা দুলিয়ে আর দিনমজুরি দিয়ে যা উপার্জন করছেন তা জমা করছেন পুনরায় সে বিদেশ যাবেন বলে। যে কারণে স্ত্রীর সৃতি বিজরিত একমাত্র ছাপরা ঘরটি বিক্রি করে পাসপোর্ট করতে দিয়ে ইতিমধ্যেই তা হাতেও পেয়েছেন।
আমরা এমন কি কেউ আছি? যারা ময়েনের বিদেশ গমনের সপ্ন সারথি হবো? আসুন সাম্যের গান গাই, ময়েনের সপ্ন সারথি হয়ে আপন দেশে যাই।
এই নিউজ পোর্টাল এর কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি ও দণ্ডনীয় অপরাধ।