আশরাফুল হক, লালমনিরহাট : লালমনিরহাটে বহুল আলোচিত হাসিনা বেগম হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার স্বামী আশরাফুল ইসলামকে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার (১০ মার্চ) বিকেলে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ ৫দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত ৩দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে রোববার (৯ মার্চ) দুপুরে লালমনিরহাট শহরের পিংকির মোড়ে এলাকার গনপুর্ত ভবনের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার আশরাফুল ইসলাম আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের কুটিবাড়ি গ্রামের মৃত নওয়াব আলীর ছেলে। মৃত হাসিনা বেগম তার দ্বিতীয় স্ত্রী এবং প্রথম স্ত্রী মেহেরুন বেগমও এ মামলায় গ্রেপ্তার রয়েছেন।
লালমনিরহাট পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, মৃত হাসিনা বেগমকে প্রায় ২০ বছর আগে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করেন ভ্যান চালক আশরাফুল ইসলাম। পরে সতিনের সংসারে বিবাদ লাগলে তাদের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটে। পরে পাশ্বর্তি নুর ইসলামের সাথে বিয়ে হয় হাসিনা বেগমের। সেখানে বিচ্ছেদ ঘটলে পুনরায় আশরাফুলকে বিয়ে করেন হাসিনা বেগম। হাসিনা বেগমের সংসারে আশরাফুলের দুইজন কণ্যা সন্তান রয়েছে। দীর্ঘ দিন দ্বিতীয় স্ত্রী হাসিনা বেগমকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে বসবাস করলেও গেলো ৬ মাস পুর্বে নিজ এলাকায় বড় স্ত্রীর বাড়ির পাশে পৃথক বাড়ি করে ছোট স্ত্রী হাসিনাকে বসবাস করতেন আশরাফুল ইসলাম।
পুনরায় সতিনের সাথে বনিবনা না হওয়ায় প্রায় সময় বিবাদ লাগত তাদের সংসারে। যা নিয়ে অতিষ্ট ছিলেন স্বামী আশরাফুল। এরপর বড় স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করে গত ৪ মার্চ ছোট স্ত্রী হাসিনাকে ভ্যান করে বিভিন্ন স্থান ঘুরে বেড়ান আশরাফুল। বাজার থেকে কিনে নেন হাসুয়া (দেশি ধারালো অস্ত্র)। এরপর সন্ধ্যা হলে পানের সাথে স্ত্রীকে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে অচেতন করেন। এক পর্যায়ে রাত হলে সহযোগীদের সহায়তায় বাড়ি থেকে ৭ কিলোমিটার দুরে সদর উপজেলার ফুলগাছ এলাকার একটি ভুট্টা ক্ষেতে নিয়ে স্ত্রী হাসিনাকে কোপ দিয়ে মাথা বিচ্ছিন্ন করে। এরপর কাটা মাথা নিয়ে বাড়ি ফিরে বড় স্ত্রীকে দেখান। যা পরদিন বাড়ির পাশে ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁসা একটি ভুট্টাক্ষেতে পুতে রাখেন। ছোট স্ত্রীর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে বড় স্ত্রীকে খুশি করতে এ হত্যাকান্ড হয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাবাদে পুলিশের কাছে স্বীকার করেন স্বামী।
পুলিশ প্রথমে মাথা বিহীন মরদেহ উদ্ধার করে পরিচয় সনাক্ত করে মৃতের ঘর থেকে পলাতক স্বামী আশরাফুলের রক্তাক্ত পোশাক উদ্ধার করে। এরপর গত শুক্রবার মৃত হাসিনার সতিন মেহেরুনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তার দেয়া তথ্যে শনিবার হাসিনার কাটা মাথা উদ্ধার করে। তার একদিন পর রোববার হাসিনার স্বামী আশরাফুলকে গ্রেপ্তার করলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানায় আশরাফুল। হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র, রক্তাক্ত পোশাক ও ভ্যান গাড়ি জব্দ করা হয়েছে বলেও প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম।
গ্রেপ্তার স্বামী আশরাফুলকে ব্যাপক জিজ্ঞাবাদের জন্য পুলিশ ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদনসহ তাকে আদালতে হাজির করলে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এ দিকে মৃত হাসিনার মরদেহ সোমবার বিকেলে তার মেয়ে চায়না বেগমের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।
লালমনিরহাট আদালত থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিরুল ইসলাম বলেন, ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এই নিউজ পোর্টাল এর কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি ও দণ্ডনীয় অপরাধ।