আশরাফুল হক, লালমনিরহাট
নিজের জমি নেই। অন্যের জমিতে ছায়লা ঘরে দুর্বিসহ কেটেছে ৬৫ বছর। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেয়ে আপ্লুত বৃদ্ধা মাজেদা বেগম বলেন, স্বপ্নেও ভাবি নাই, নিজের পাকা বাড়ি হবে। সবকিছু স্বপ্নের মত লাগছে। মাজেদা বেগম লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ি ইউনিয়নের সাকোয়া বাজার এলাকায় নির্মিত আশ্রয়নের বাসিন্দা।
বৃদ্ধা মাজেদা বেগম জানান, দিনমজুর বাবার সংসারেও অভাবের মাঝে বড় হয়েছেন। বিয়ে হয় নরসুন্দর অপিল উদ্দিনের সাথে। স্বামীর সামান্য আয়ে চলে না সংসার। বাধ্য হয়ে অন্যের জমিত দিনমজুরী করে সচল রেখেছেন ৬ সদস্যের পরিবারের চাকা। জীবনভর হাডভাঙা পরিশ্রম করে পেটের ভাত ছাড়া কিছুই জমাতে পারেননি অপিল মাজেদা দম্পতি। যদিও প্রতিদিন কাজে বের হয়ে স্বপ্ন দেখতেন নিজের একখন্ড জমি হবে। যেখানে ছায়লা ঘরটিতে নিশ্চিন্তে ঘুমাবেন। কিন্তু কিশোর যৌবন শেষ করে বাধক্যের আয়েও পুরন হয়নি সেই স্বপ্ন।
অবশেষে ভুমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর পেয়ে বেজায় খুশি অপিয়া মাজেদা দম্পতি। শুধু পাকা বাড়িই নয় সাথে রয়েছে বাড়ির ২শতাংশ জমি। জমি আর পাকা বাড়ি পেয়ে অপিল উদ্দিন বলেন, পরিশ্রম করে শরীরের রক্ত পানি করেও একখন্ড জমি কিনতে পারি নাই। এখন শ্যাকের বেটি হাসিনা হামাক জমিসহ পাকা বাড়ির মালিক করে দিয়েছে বাহে। আল্লায় শেখের বেটিকে ম্যাল্লা(অনেক) দিন বাচি থুক। হামরা নামাজে বসে প্রতিদিন দোয়া করি।
একই আশ্রয়নে জমিসহ পাকা বাড়ি পেয়েছেন ষাটোর্ধ দম্পতি সাহেরা আব্দুস সালাম। এক সময় তাদের নিজের জমিসহ পাকা বাড়ি ছিল। কিন্তু ব্যবসায় লোকসানে পড়ে ছেলে সেই বাড়ি বিক্রি করে দেন। এরপর তাদের ঠাঁই হয় অন্যের বাড়িতে। দীর্ঘ কয়েক বছর অন্যের বাড়িতে আশ্রয়ে ছিলেন এ বৃদ্ধ দম্পতি। ভুমিহীন ও গৃহহীন হিসেবে তারাও পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের দুইশতাংশ জমিসহ পাকা বাড়ি। এ দম্পতি বলেন, ব্যবসায়ীক লোকসানে বাড়ি গাড়ি বিক্রি করে পথে বসে গিয়েছিলাম। হতাশায় ডুবেছিলাম। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়ে পুনরায় মাথাগোজার ঠাঁই পেলাম। ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তিও পেলাম আমরা।
একই আশ্রয়নের ইতা রানী বলেন, সারা জীবন কষ্ট করে কামাই(আয়) করেও টিনের ঘর করবার পারি নাই। এখন নিজের নামে দুইশতক জমিসহ পাকা বাড়িতে থাকছি বাহে। সবায় (সবাই) কয় বাড়িও খুব মজবুত করে বানাইছে। সবে ভগবানের কৃপা। খুব ভালই আছি বাপু।
শুধু মাজেদা বা ইতা রানী নয়। লালমনিরহাটের অনেক ভুমিহীন ও গৃহহীন পরিবার প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে বসবাস করছেন। যাদের একখন্ড জমি ছিল না, একটা বাড়ির জন্য রোদ বৃষ্টিতে ভিজে হাডভাঙা পরিশ্রম করেও মিলাতে না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করত। এমন ভুমিহীন দরিদ্র পরিবারগুলোকে খুজে আশ্রয়নের জমিসহ বাড়ি করে দিচ্ছে সরকার। সম্পুর্ন বিনামুল্যে দুই শতাংশ জমির দলিল ও দুই কক্ষের একটি পাকা বাড়ি পেয়ে বেজায় খুশি এসব ছিন্নমুল পরিবার। এ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে খাস জমি উদ্ধার করে ৮৮২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।
আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর করা হচ্ছে সরকারী খাস জমিতে। কোন এক সময় এসব খাস জমি ভুমিদস্যুদের দখলে ছিল। সরকার রাজস্ব হারালেও কোন কোন ভুমিদস্যু ভুমিহীনদের নামে বরাদ্ধ নিয়ে নিজেরা ভোগ করত। এসব সব খাস জমি উদ্ধার করে সেখানেই গড়ে তোলা হচ্ছে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর। সেই জমির দুই শতাংশ হারে সুফল ভোগীদের নামে রেজিস্ট্রি করে দিচ্ছে সরকার। প্রতিজন সুফল ভোগী জমির উপর নির্মিত একটি পাকা বাড়িও পেয়ে যাচ্ছে।
আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ি ইউনিয়নের সাকোয়া বাজার এলাকার আশ্রয়নটি মডেল হিসেবে তৈরী করা হয়েছে। বাড়ির রঙে ভিন্নতা নেয়া হয়েছে। আশ্রয়নের মানুষদের যাতায়তের জন্য আশ্রয়ন থেকে মুল সড়কে উঠার রাস্তাও পাকা করে দেয়া হয়েছে। সব মিলে এটিকে দেখতে অনেকটাই শহরের আবাসিক কোন এলাকার মতই। নির্মাণ কাজ শেষ দিকে। কিছু দিনের মধ্যে সকল সুফল ভোগীদের হাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে চাবি হস্তান্তর করা হবে। কাজ শেষ হওয়ায় কিছু পরিবার ব্যবহার করছেন তাদের স্বপ্নের পাকা বাড়ি।
আদিতমারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ও গৃহনির্মাণ প্রকল্পের সদস্য সচিব মফিজুল ইসলাম জানান, সরকারের দেওয়া ডিজাইন ও স্টিমেট অনুযায়ী প্রত্যেকটি আশ্রয়ন প্রকল্পের কাজ করা হয়েছে। সাকোয়া বাজার এলাকার আশ্রয়নটি মডেল হিসেবে রঙে ভিন্নতা আনা হয়েছে। যা ইতোমধ্যে সুফলভোগীসহ স্থানীয়রাও প্রশংসা করেছেন। আশ্রয়নে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে উপজেলা প্রশাসনের সকল দপ্তর থেকে সার্বক্ষনিক খোজ খবর নেয়া হচ্ছে।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারগুলোর আশ্রয়নের ব্যবস্থা করা হয়। এসব পরিবারে সরকারের দেওয়া সকল সুযোগ-সুবিধায় অগ্রাধিকার দেওয়ার পাশাপশি তাদেরকে সাবলম্বী করার প্রচেষ্টাও রয়েছে।
এই নিউজ পোর্টাল এর কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি ও দণ্ডনীয় অপরাধ।