লালমনিরহাটে এক নারীর ধর্ষণ মামলা নিয়ে নানান আলোচনা সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে তিন আসামির মধ্যে জাহেদুল নামক এক আসামি নিরীহ অটোরিকশা চালক। এ ঘটনায় সদর থানা পুলিশসহ বাদী-বিবাদী পক্ষের নানা অসংগতি তুলে প্রতিকার চেয়ে ২৪৬ জন এলাকাবাসীর স্বাক্ষরিত একটি গণপিটিশন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করেছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ইং তারিখে কুড়িগ্রাম থানার মাদক মামলার ওয়ারেন্টে ভুক্ত আসামী সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের তিস্তা পশ্চিম দালালপাড়া গ্রামের এরশাদুলকে সদর থানা পুলিশ গ্রেফতার করেন। স্বামীকে জেল থেকে বাহির করতে এরশাদুলের স্ত্রী বিভিন্ন লোকজনের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন।
একপর্যায়ে (২৬ সেপ্টেম্বর) ২০২২ ইং তারিখে সন্ধ্যা ৭টায় তিস্তা পশ্চিম দালালপাড়া গ্রামের জাহেদুল ইসলামের অটো যোগে এরশাদুলের স্ত্রী লালমনিরহাটের এক আইনজীবীর সহকারী (মোহুরী) রিপন মন্ডলের সাথে দেখা করতে রহনা দেন। সেই সময় তিস্তা পশ্চিম দালালপাড়া গ্রামের কোবাদ আলীর পুত্র রতনকে সাথে নিয়ে এরশাদুলের স্ত্রী মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের সোবাহান মন্ডল ওরুপে কাচুর পুত্র (মোহরী) রিপন মন্ডল কোর্টের আইনজীবীর সাথে কথা বলার আশ্বাস দিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ভয় ভীতি দেখিয়ে তিস্তা নদীর পাড়ে নিয়ে জোড়পূর্বক ধর্ষন করেন।
ঘটনায় ১০দিন পর এরশাদুলের স্ত্রী বাদী হয়ে সদর থানার ওই ৩ জনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- ২৯/৫৫৩, তাং ১৬/১১/২২। মামলাটি পুলিশ তদন্ত ছাড়াই নথিভুক্ত করে রিপনকে মিশন মোড় ও নিরীহ অটোচালক জাহেদুলকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করলেও রতন গ্রেফতার হয়নি। এলাকাবাসী রহিম মিয়া (৫০), শফিকুল ইসলাম (৫২), হোসেন আলী (৪৮), ময়েজ উদ্দিন (৫৫), মোসলেম উদ্দিন (৪৫) ও মিঠুল মিয়া (৪২) জানান, এরশাদুল এলাকার একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তার স্ত্রীর চরিত্র নিয়ে রয়েছে নানান প্রশ্ন। এরশাদুল গ্রেফতার হওয়ার আগে তার ব্যবহারিত ফোনটিতে অটোরেকর্ড চালু করে রাখেন।
সেই ফোন দিয়ে তার স্ত্রী বিভিন্ন লোকজনের সাথে বিভিন্ন অসামাজিক কথা বার্তা বলেন। এরশাদুল জেল থেকে জামিনে বাহির হয়ে তার স্ত্রীর অটোরেকর্ড শুনে হতবাক হয়ে গ্রাম্য সালিশ বৈঠক বসান। সেই বৈঠকে উপস্থিত এলাকাবাসী এরশাদুলের স্ত্রী কার কার সাথে কথা বলেছেন সবাই শুনেছেন। তবে ওই অটোরেকর্ডে অটোচালক জাহেদুলের কোন ফোনালাপ ছিল না। অথচ দীঘদিন পর সেই নিরীহ অটোচালক জাহেদুলের নামে মিথ্যা নাটকীয় ধর্ষণের অভিযোগ করেন। ধর্ষণের অভিযোগ পেয়ে মামলাটি তদন্ত না করেই সদর থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা (এসআই) মোজাম্মেল হক মামলাটি নথিভুক্ত করেন। এ মামলায় নিরীহ একজন অটো চালক জাহেদুল জেলের ঘানি টানছেন। ফলে পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী নিরীহ অটোচালক জেলে থাকায় তার পরিবার না খেয়েই দিন কাটছে।
এ বিষয়ে গোকুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সুমন মিয়া বলেন, জাহেদুল ইসলাম একজন নিরীহ অটোচালক। তার অটো ভাড়ায় নিয়ে বিভিন্নস্থানে বাহির হয়ে একজন চরিত্রহীন মহিলা তার নামে মিথ্যা ধর্ষণের অভিযোগ দিল আর পুলিশ সেটি তদন্ত না করেই তাকে গ্রেফতার করলো। আমরা তা মেনে নিতে পারছি না। ফলে উক্ত ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ২৪৬ জন এলাকাবাসী স্বাক্ষরিত একটি গণপিটিশন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে দায়ের করেছি। দ্রুত এ মামলা থেকে জাহেদুলকে মুক্তি দেয়া না হলে আমরা এলাকাবাসী আন্দোলনে যাব।
অভিযোগ তদন্ত না করে মামলা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে সদর থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা (এসআই) মোজাম্মেল হক বলেন, প্রাথমিক ভাবে ধর্ষনের অভিযোগটি আমি নিজে তদন্ত করেছি। তাছাড়াও থানার অন্যরাও তদন্ত করে মামলাটি নেয়া হয়েছে। লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এরশাদুল আলম বলেন, এলাকাবাসীর একটি গণপিটিশন পেয়েছি। অহেতুক কেউ হয়রানির শিকার হবে না।
মামলাটিকে সঠিক ভাবে তদন্ত করে চার্জশীট দেয়া হবে। অটোচালক জাহেদুলের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই নিউজ পোর্টাল এর কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি ও দণ্ডনীয় অপরাধ।