অন্য কেউ ক্ষমতায় এলে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে

আওয়ামী লীগ বাদে অন্য কেউ ক্ষমতায় এলে উন্নয়ন এবং দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার দুপুরে গণভবনে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এক সভায় তিনি এ কথা জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশকে নিয়ে নানা চক্রান্ত শুরু হয়েছে। অনেকেই চায় না আমাদের দেশটি এগিয়ে যাক। যাদের উসকানিতে বিএনপি আজ লাফাচ্ছে, তারা কিন্তু তাদের ক্ষমতায় বসাবে না। তারা শুধু তাদের ব্যবহার করবে।’
শেখ হাসিনা আগামী দিনে আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় আনতে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে, আওয়ামী লীগকে তৃণমূল থেকে সুসংগঠিত করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশবিরোধী, খুনি, মৌলবাদীচক্র, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি যেন ক্ষমতায় না আসতে পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত দলকে আরো শক্তিশালী, সুসংগঠিত করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন।
দুঃসময়ের নেতাকর্মীরা যেন অবহেলিত না হন, সে বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দিতেও দলের নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দুঃসময়ের নেতাকর্মীরাই দলের দুঃসময়ে এবং যেকোনো প্রয়োজনে পাশে থাকবে।
তিনি বলেন, ‘আমার একমাত্র শক্তি আমার সংগঠন। সাংগঠনিক শক্তি না থাকলে বড় কোনো অর্জন সম্ভব হয় না। তাই দলকে সুসংগঠিত করতে হবে তৃণমূল পর্যায়ে থেকে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন হয়, জনগণের জীবনমান উন্নত হয়, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বিদেশে বাংলাদেশের সম্মান ও মর্যাদা বেড়েছে অনেক।
’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ২০০৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত যে পরিবর্তনটা দৃশ্যমান হয়েছে আওয়ামী লীগ ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় আছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা মানুষের মন জয় করেই ক্ষমতায় এসেছি। আর ক্ষমতায় এসে ধারাবাহিক উন্নয়ন করে যাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর ১৯৭৫ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত যে অন্যায় অত্যাচার করা হয়েছে, আমরা তার প্রতিশোধ নেই নাই। আমরা অন্যায়ের জবাব দিচ্ছি উন্নয়ন করে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের সরকার প্রতিটি জেলায় পরিকল্পিত উন্নয়ন করেছে। ফলে আজ গ্রামে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা একেবারে নাই বললেই চলে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে না পারলে গত সাড়ে চৌদ্দ বছরে আমরা যে উন্নয়ন করেছি, তার সব কিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগ সরকার যে উন্নয়ন করেছে সেগুলো বেশি করে প্রচার করতে দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, উন্নয়ন যেন অব্যাহত থাকে এবং আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় আনা দরকার, সেটাও মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। উন্নয়নের কথা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি মানুষের আস্থা, বিশ্বাসও অর্জন করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে বারবার ধ্বংস করার অনেক চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু সে চেষ্টা কখনোই সফল হয়নি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আজ মানুষের মন জয় করে শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত হয়েছে।
আওয়ামী লীগকে আরো শক্তিশালী করা দরকার মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাবা-মা-ভাই সবাইকে হারানোর পর আওয়ামী লীগই আমার পরিবার। বাংলাদেশের জনগণ আমার সমস্ত শক্তি। তারাই আমার একমাত্র ভরসা। তাদের জীবনমান উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। করোনা মহামারির মধ্যে আওয়ামী লীগই একমাত্র দল, যারা সবচেয়ে বেশি মানুষের পাশে থেকে অবদান রেখেছে।’
অনুষ্ঠানে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাতকে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আরাফাতকে আপনাদের হাতে তুলে দিলাম নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে, ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই মিলে কাজ করবেন।’
বিএনপির নির্বাচন মানে ১০টা হোন্ডা ২০টা গুন্ডা নির্বাচন ঠাণ্ডা মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ কখনো ভোটারবিহীন নির্বাচন করেনি। ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছে খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, ডা. দীপু মনি, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান, সাধারণ সম্পাদক, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ছাত্রলীগের সভাপতিসহ বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড এবং সহযোগী সংগঠনের নেতারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।