সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১:০৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
সলঙ্গায় খড়ের পালায় আগুন থানায় অভিযোগ ভাষা শহিদদের স্মরণে বেনাপোল বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় কর্মসূচি যশোরের নাভারন থেকে ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকার ভারতীয় রুপার অলংকারসহ আটক-০২ প্রান্তিক পর্যায়ের পঞ্চাশ হাজার অসহায় মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে ভয়েস অব কাজিপুর  কাঁঠালবাড়িতে প্রতিবন্ধী শিশুদের সহায়তার জন্য কার্যকর সমাধান নিয়ে সংলাপ অনুষ্ঠিত ৫ আগস্ট না হলে শিক্ষা ব্যবস্থা ও দেশ ধ্বংস হয়ে যেত রফিকুল ইসলাম বাচ্চু গাকৃবিতে আন্ত:অনুষদ ও আন্তঃহলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত গাজীপুরে দুর্নীতিবাজ ভূমি কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ বারি’তে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন ব্রিতে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত

আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জে জমে উঠেছে আমের বাজার

কবির হাসান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ / ১২০ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : সোমবার, ১২ জুন, ২০২৩

ফলের রাজা আম, আর আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ। আদিকাল থেকে কৃষিপণ্যের জন্য প্রসিদ্ধ চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এ জেলাকে আমের রাজধানী বলা হয়। অতুলনীয় স্বাদের বিভিন্ন জাতের আমের জন্য বিখ্যাত এ জেলাটি।

দীর্ঘকাল ধরে কৃষিনির্ভর বিভিন্ন খাত ঘিরে এ জেলার অর্থনৈতিক দিয়ে বড় ভূমিকা পালন করে আম, এখানকার প্রধান অর্থকরী ফল। চাঁপাইনবাবগঞ্জে উৎপাদিত আম একদিকে অবদান রাখছে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে, অন্যদিকে কর্মসংস্থানেও ভূমিকা রাখছে। আমকে কেন্দ্র করে এ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় গড়ে উঠা ‘কানসাট আম বাজার’ বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম আমের বাজার।

সুস্বাদু ফল আমের প্রজাতির কোনো শেষ নেই। তিনশ’র অধিক প্রজাতি রয়েছে এই ফলের। বাহারি সব রং, আকার, আর স্বাদে ভরপুর, ফলের রাজা হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু রাজার মধ্যেও তো মহারাজা থাকে। আর আমের এ মহারাজা হচ্ছে ল্যাংড়া। চাঁপাইনবাবগঞ্জে উৎপাদিত আমগুলোর মধ্যে স্বাদ-গন্ধ ও পুষ্টিমাণের দিক দিয়ে সব থেকে এগিয়ে আমের মহারাজা ‘ল্যাংড়া’ আম। বিশেষ বৈশিষ্ট্য ভূমিরূপ ও জলবায়ুর কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জে উৎপাদিত ল্যাংড়া আম আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছে।

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ভারতের বেনারসে ল্যাংড়া আমের উদ্ভব হয়েছে ফলে আমটিকে অনেকেই বারানসী আম বলে থাকেন। আমের এ বিখ্যাত জাতটি বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে চাষ করা হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ল্যাংড়া আমের চাষাবাদ হলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাটি ও আবহাওয়া এ আমের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর দেশে উৎপাদিত মোট আমের সিংহভাগই উৎপাদিত হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জে। কৃষি বিভাগ জানায়, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ৭ লাখ ৬৬ হাজার ৯৩০ মেট্রিক টন আম উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়ই উৎপাদিত হয় প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম জানান, বিশ্বে আম উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম হলেও এখানে আধুনিক পদ্ধতিতে আম চাষ ও উন্নত বিপণন ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় সম্ভাবনা থাকার পরও বিদেশে পর্যাপ্ত আম রফতানি হচ্ছে না। অথচ এসব সমস্যার সমাধান করা হলে উৎপাদিত আম বিদেশে রফতানির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশে আম যেসব ফল উৎপন্ন হয় তার মধ্যে আমের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। আমের নানাবিধ ব্যবহার, স্বাদ-গন্ধ ও পুষ্টিমাণের জন্য এটি একটি আদর্শ ফল হিসেবে পরিচিত। তাই আমকে ফলের রাজা বলা হয়। বাংলাদেশের মাটি, জলবায়ু, আবহাওয়া সবই আমচাষের উপযোগী। দেশের প্রায় সব জেলায়ই আম ফলে। এমনকি উপকূলীয় লবণাক্ত ভূমিতেও এখন মিষ্টি আমের চাষ হচ্ছে। পার্বত্য জেলার জুমচাষ এলাকায়ও উন্নত জাতের আম ফলছে। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, দিনাজপুর, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা, যশোর আমচাষের শীর্ষে অবস্থান করছে।

পরিসংখ্যান বিভাগের এক হিসাব অনুযায়ী দেশে ৩২ হাজার হেক্টর অর্থাৎ ৭৮ হাজার ১৯৫ একর জমিতে আমের চাষ হচ্ছে। প্রতিবছর ফলন হচ্ছে ৮ লক্ষ্য দুই হাজার ৭৫০ টন। বৃহত্তর রাজশাহী জেলায় ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২২ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়। আর আমচাষের এলাকা প্রতিবছরই বেড়েই চলেছে, উৎপাদনও বাড়ছে। আর এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশের মাথাপিছু আম উৎপাদনের পরিমাণ দেড় কেজির মতো। ভারতে মাথাপিছু ১১ কেজি, পাকিস্তানে ৬ কেজি, মেলঙ্কাতে ৯ কেজি, ফিলিপাইনে ৬ কেজি, তানজানিয়ায় ৭ কেজি, সুদানে সাড়ে ৭ কেজি, জায়ারে ৫ কেজি এবং হাইতিতে ৫৫ কেজি।

বিভিন্ন জাতের আম আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় বিভিন্ন জাতের আম পাওয়া যায়। এদের মধ্যে সবচেয়ে আগে ওঠে গোপালভোগ, হিমসাগর, ক্ষীরসাপাত আম, এবং ল্যাংড়া। ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ বলেন, গাছপাকা ল্যাংড়া আম, দুধ দিয়ে চটকে খেলে এর সুঘ্রাণ হাতের তালুতে লেগে থাকে সারা দিন। এভাবে একের পর এক উঠতে থাকে যেমন-,ক্ষীরভোগ, মোহনভোগ, রাজভোগ, রানিভোগ, রানিপছন্দ, সিন্দুরা, সুবর্ণরেখা, কুয়াপাহাড়ি, নাকফজলি, ফজলি, চিনি ফজলি, সুরমাই ফজলি, চিনি মিসরি, জগৎমোহিনী, রাখালভোগ, রাঙাগুড়ি, গোবিন্দভোগ, তোতাপুরী, মিশ্রিকান্ত, জালিবান্ধা, বোম্বাই, ভুতো বোম্বাই, পাহাড়িয়া, গোলাপখাস, কাকাতুয়া, দাদভোগ, চম্পা, সূর্যপুরী, কাঁচামিঠা, কলামোচা, শীতলপাটি, লক্ষ্মণভোগ, গোলাপবাস, কিষানভোগ, বান্দিগুড়ি, রাংগোয়াই, আশ্বিনা, ভাদুরিগুটি, বনখাসা, বউ ফুসলানি, ক্ষীরমণ, দুধসর, রঙভিলা, পারিজা, আনোয়ারা, দিলশাদ, আম্রপালি, মল্লিকা, বেগমবাহার, পূজারীভোগ, পলকপুরী, রাজলক্ষ্মী, দুধকুমারী ইত্যাদি।

আম বাজার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় রয়েছে অনেক আম বাজার। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের মহানন্দা নদীর ধারে পুরাতন বাজার, গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর বাজার ও এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট বাজার অন্যতম, ৩টি বড় বাজার। কানসাট হচ্ছে জেলার সবচেয়ে বড় আম বাজার। এখানে রয়েছে ছোট বড় প্রায় ২৫০টি আমের আড়ত।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর