এশিয়ার সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর করিডোর পেট্রাপোল-বেনাপোল

শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ছিলেন অবিভক্ত বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী তারও আগে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও জনহিতকর রাজনীতির মাধ্যমে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন অশ্বিনীকুমার দত্ত। স্বাধীনতার পর দেশের তরুণ সমাজের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিলেন সিরাজ সিকদার। জাতীয় পর্যায়ে রাজনীতিতে ব্যাপক আলোড়ন তোলার পাশাপাশি সমসাময়িক তরুণদের মননে ব্যাপক ঝড় তুলেছিলেন তারা। জাতীয় রাজনীতিতে বরিশাল অঞ্চলের (বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী ও ভোলা) প্রভাব বিস্তার শুরু ত্রিশের দশকে। সত্তরের দশক পর্যন্ত পূর্ব বাংলার রাজনীতিতে এ অঞ্চলের অনেক নেতাই হয়ে উঠেছিলেন দোর্দণ্ড প্রতাপশালী। কিন্তু সত্তরের দশকের পর থেকে এ প্রভাব হারাতে থাকে বরিশাল অঞ্চল।
এখানকার অনেক নেতা এখনো স্থানীয় বা আঞ্চলিক রাজনীতিতে প্রভাবশালী হিসেবে বিবেচিত কিন্তু জাতীয় রাজনীতি বা মনোজগতে আগেকার মতো আলোড়ন তুলতে পারছেন না তারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে অগ্রগণ্য ভূমিকা রেখেছিলেন বরিশালের সন্তান অশ্বিনীকুমার দত্ত। সে সময় তিনি গঠন করেন ‘জনসাধারণের সভা’ নামে রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠন। অর্জন করেন মহাত্মা উপাধি। কিন্তু এখন পর্যন্ত বরিশালের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী ধরা হয় শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হককে। ত্রিশের দশকে বঙ্গীয় রাজনীতির পালাবদল তার হাত ধরেই শুরু হয়েছিল। কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য গড়ে তোলেন রাজনৈতিক দল কৃষক প্রজা পার্টি। অল্প সময়ের মধ্যেই রাজনৈতিক দক্ষতার বলে রাজনীতির মঞ্চে হয়ে ওঠেন অতিপরিচিত ব্যক্তি। ১৯৩৫ সালে তিনি অধিষ্ঠিত হন কলকাতার মেয়র পদে। প্রতাপশালী এ নেতা অবিভক্ত বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাব উত্থানের মধ্য দিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে নিজেকে এক অনন্য জায়গায় নিয়ে গেছেন তিনি। বরিশালসহ বাংলার আপামর জনসাধারণের কাছে পরিচিতি পেয়েছেন ‘হক সাহেব’ হিসেবে। সাতচল্লিশের দেশভাগের পরও রাজনীতির মাঠটি নিজের অধীনে রাখেন এ নেতা। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। দায়িত্ব পালন করেন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে।শেরেবাংলার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার ধরে রাখেন তার পুত্র এ কে ফায়জুল হক। একই সঙ্গে শেরেবাংলার নাতনি রাজিয়া বানুও রাজনীতির মাঠে রেখেছেন অগ্রগণ্য ভূমিকা।
বরিশালের অঞ্চল থেকে উঠে আসা রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘জাতীয় রাজনীতিতে বরিশাল সবসময়ই সামনের দিকে ছিল। শেরেবাংলা ফজলুল হক শুধু বরিশালেরই নয়, জাতীয় নেতা ছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় আমরা সেই অবস্থাটি দেখেছি। পাকিস্তান আমলে গণপরিষদে গেছেন আবদুল ওহাব সাহেব। আমার পিতা আবদুল জব্বার খান স্পিকার ছিলেন। দুজনই বরিশালের।পরবর্তী প্রজন্মে আমি, তোফায়েল আহমেদ, মহিউদ্দিন ভাই, আমির হোসেন আমুসহ অনেকে বরিশাল থেকে এসেছি। রাষ্ট্রপতি হিসেবে ছিলেন আব্দুর রহমান বিশ্বাস।’
এ অঞ্চল থেকে প্রভাবশালী নেতা উঠে আসার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ অঞ্চলের মানুষজন প্রচণ্ড সাহসী। ব্রিটিশ আমলে বরিশাল ছিল বিপ্লবী আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। পরবর্তীকালেও সাহসী ভূমিকার জন্য বরিশাল নেতৃত্বে ছিল। শিক্ষার দিক থেকেও বরিশাল সবসময় এগিয়ে।সে সময় বরিশালের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিখ্যাত ছিল। রাজনীতিতে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন—শিক্ষা, আদর্শ, অনুপ্রেরণা যেগুলোতে বরিশাল সবসময়ই এগিয়ে ছিল। তবে একটি বিষয় হলো বর্তমানের রাজনীতিতে আমাদের মতো অতীতের কিছু লোক আছে। কিন্তু নতুন প্রজন্মের যেভাবে আসা দরকার সেভাবে হচ্ছে না।’
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামেও বরিশাল অঞ্চলের বড় ভূমিকা রয়েছে। এক্ষেত্রে অগ্রগণ্য নেতাদের একজন আবদুর রব সেরনিয়াবাত। কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে বঙ্গবন্ধুকে সহপাঠী হিসেবে পেয়েছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর সেজো বোন শেখ আমেনা বেগমের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তার ১৯৫৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করা হলে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন প্রভাবশালী এ রাজনীতিবিদ। ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টেরও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। বরিশালে কৃষক রাজনীতির অগ্রগামী এ নেতা আওয়ামী লীগে যোগ দেন ১৯৬৯ সালে। সত্তরের নির্বাচনে বরিশাল থেকে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৭০ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী এ নেতা মুজিবনগরে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার পরিচালনায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন আবদুর রব সেরনিয়াবাত। দায়িত্ব পালন করেছেন ভূমি প্রশাসন, ভূমি সংস্কার এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি সম্পদ ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের ভার সামলেছেন ১৯৭৩ সালে বরিশাল থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগের (বাকশাল) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালী হয়ে ওঠা আবদুর রব সেরনিয়াবাতকেও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে হত্যা করা হয়।
বরিশালের বাবুগঞ্জ থানার সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালেই ১৯৬৭ সালে ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন পাকিস্তান সামরিক একাডেমিতে। মুক্তিযুদ্ধে তার অসামান্য অবদানের জন্য প্রদান করা হয় সর্বোচ্চ সামরিক পদক বীরশ্রেষ্ঠ। ৯ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে যুদ্ধে যোগ দেন মোহাম্মদ আবদুল জলিল (মেজর জলিল)। মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর বরিশালের মুজিব বাহিনীর প্রধান হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন আমির হোসেন আমু। সে সময় তোফায়েল আহমেদ ছিলেন ছাত্রলীগের প্রধান চার নেতার একজন।
জাতীয় রাজনীতিতে বরিশালের অবদান নিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. হারুণ-অর-রশিদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এ অঞ্চল ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অবদান রেখেছে। শিক্ষায়ও এগিয়ে ছিল এ অঞ্চল। পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে অগ্রগামী ছিল বরিশালের মানুষ। এছাড়া নদীবেষ্টিত অঞ্চলের মানুষ স্বভাবজাতভাবেও সংগ্রামী হয়ে থাকে। এসব কারণে তারা শুরু থেকেই জাতীয় রাজনীতিতে জায়গা করে নিয়েছে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক রাজনীতিতে প্রভাবশালী ভূমিকা রেখেছেন। পরবর্তী সময়েও জাতীয় রাজনীতিতে এ অঞ্চলের মানুষ সেটি ধরে রেখেছে। ষাটের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ভর্তি হতো আঞ্চলিকভাবে বরিশালের শিক্ষার্থী বেশি ছিল। সে সময় ছাত্ররাজনীতি এমন ছিল যে ছাত্রলীগের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক যেকোনো একটি পদ ছিল বরিশালের ছাত্রনেতার। একই সঙ্গে নেতারা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। যার ফলে তাদের অনেকেই এখন সামনের সারিতে আছেন।’
কীর্তনখোলা নদীর তীরে গড়ে ওঠা বরিশালের মানুষ স্বভাবজাতভাবে পরিচিত সাহসী হিসেবে। সেখানেই বেড়ে উঠেছিলেন সিরাজ সিকদার। পড়াশোনা করেছেন বরিশাল জিলা স্কুল ও ব্রজমোহন কলেজে। এরপর ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট)। পশ্চিমবঙ্গের নকশাল আন্দোলনের দ্বারা প্রভাবিত সিরাজ সিকদার ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের মেনন গ্রুপের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি। ১৯৬৭ সালে সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। কিছুদিনের মধ্যেই তা ছেড়েও দেন। একটি প্রকৌশল কোম্পানির চাকরি নিয়ে চলে যান টেকনাফে পরের বছর উপস্থাপিত এক থিসিসে পূর্ব বাংলাকে পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশ বলে আখ্যায়িত করেন। আহ্বান জানান জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবের। ঢাকায় চালু করেন ‘মাও সেতুং গবেষণা কেন্দ্র’ নামে একটি সংগঠন।
স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে বরিশালের পেয়ারা বাগানে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন সিরাজ সিকদার। ওই বছরের ৩ জুন গঠন করেন ‘পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি’। স্বাধীনতার পর দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছিল পেয়ারা বাগানেই। বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তর সাল পর্যন্ত দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করেছিলেন এ কমিউনিস্ট নেতা। ১৯৭৫ সালে মৃত্যু হয় তার।
১৯৭২ সালে জাসদ গঠনের সময় বড় ভূমিকা রেখেছিলেন সামরিক বাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তা ও মুক্তিযুদ্ধে ৯ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক মোহাম্মদ আবদুল জলিল ১৯৭৫ সালের ২৩ নভেম্বর কর্নেল তাহেরের সঙ্গে গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত দলটির প্রভাবশালী একজন নেতা হিসেবেই নিজের অবস্থান তৈরি করেছিলেন তিনি।
গবেষকদের মতে, বরিশালের রাজনৈতিক ভিত তৈরি করেছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শাখা-প্রশাখা ছাড়িয়ে বিস্তার লাভ করেছে এখানকার নেতাদের রাজনীতি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ এ স্থানে অশ্বিনীকুমার দত্তের নাম সর্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য।
ষাটের দশকে পাকিস্তান আমলে প্রতাপ বিস্তারকারী রাজনৈতিক নেতা ছিলেন বরিশালের আবদুল ওহাব। এ নেতা ১৯৫৫ সালে কৃষক-শ্রমিক মনোনয়নে পূর্ববঙ্গ আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ঠিক পরের বছরই তিনি পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য ও স্পিকার হিসেবে যোগ দেন তারই সভাপতিত্বে গৃহীত হয় পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র। পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ষষ্ঠ স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বরিশালের আরেক কৃতী সন্তান আবদুল জব্বার খান। ভাষা আন্দোলনে সম্মুখসারি থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক বরিশালের কাজী গোলাম মাহবুব, বিচারপতি আবদুর রহমান চৌধুরী, আখতার উদ্দিন আহমেদ, এম ডব্লিউ লকিতুল্লাহ, অনিল দাম চৌধুরী, রানী ভট্টাচার্যসহ আরো অনেক ভাষাসৈনিক।
সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরীর শৈশব কেটেছে বরিশালে। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘শেরেবাংলা আমাদের শ্রদ্ধেয় জননেতা। উনি যখন যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী প্রচার করছিলেন তখন আমার বয়স ছিল ১২ বছর। খুব উত্সাহ-উদ্দীপনায় উনার ভাষণ শুনতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওই বয়সে আমার অত বোঝার কথা ছিল না। তবে একটা বিষয় মনে আছে—সে সময় সবাই খুব তালি দিচ্ছিল, আমিও দিচ্ছিলাম। মূলত ষাটের দশকে আমি রাজনীতি করা শুরু করি। আমি যখন ডাকসুর জিএস ছিলাম তখন ডাকসুর ভিপি ছিল মেনন ছাত্রজীবনে আমরা সবাই মিলে মোনায়েম খানের পার্টির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম। আমার জন্ম মাদারীপুরে। কিন্তু শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে শ্রীনগর, বিক্রমপুর বাকি সময়টা জামালপুর ও ঢাকায় কাটিয়েছি। আমার বাবার বেড়ে ওঠা বরিশালে। যিনি আমার জীবনে অনেক অবদান রেখেছেন। সে সময় মেয়েরা রাজনীতি করার মতো উদার পরিবেশ ছিল না। সে সুযোগ আমার বাবা দিয়েছেন।’
এক সময় ছাত্র রাজনীতির সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতাদের অন্যতম ছিলেন রাশেদ খান মেনন ও মতিয়া চৌধুরী। ১৯৬৩-৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নির্বাচিত হন রাশেদ খান মেনন সে সময় ডাকসুর নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মতিয়া চৌধুরী। একই সময় পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে আলোড়ন তুলেছেন ছাত্রলীগের তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমুরাও।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের কালে ডাকসুর ভিপি ছিলেন সে সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সব আসামি মুক্তি পেলে ঊনসত্তরের ফেব্রুয়ারিতে রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মানে এক সভার আয়োজন করে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। সেখানেই বঙ্গবন্ধু উপাধি পান জাতির পিতা। আর এ ঘোষণা দিয়েছিলেন সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক তোফায়েল আহমেদ। সত্তরের নির্বাচনে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিব বাহিনীর অঞ্চলভিত্তিক চার প্রধানের একজন ছিলেন তিনি। স্বাধীনতার পর প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সচিবের দায়িত্ব পান তোফায়েল আহমেদ। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বড় অবদান রেখেছেন তিনি। কয়েকবার মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন।
বর্তমান সময়ের ছাত্ররাজনীতিতেও প্রভাব রয়েছে বরিশালের। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের বাড়ি বরিশালে। ছাত্র সংগঠনটির আগের কমিটির সভাপতিও ছিলেন বরিশালের আল নাহিয়ান খান জয়।
বর্তমান রাজনীতিতে সামনের সারিতে প্রভাব বিস্তারকারীদের কয়েকজনের নাম নিলে স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে বৃহত্তর বরিশাল। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, জাহাঙ্গীর কবির নানক। অন্যদিকে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেননও বরিশালের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ হিসেবে বিবেচিত আবদুর রব সেরনিয়াবাতের ছেলে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহও জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
দেশের রাজনীতিতে বরিশালের অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) বরিশালের সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় বিপ্লবী রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় কার্যক্রম বরিশাল অঞ্চলে ছিল। অগ্নিযুগের অনেক বিপ্লবী এখানকার—দেবেন ঘোষ, হীরণ লাল ভট্টাচার্য, রানী ভট্টাচার্য। অশ্বিনীকুমার দত্ত, মুকুন্দ দাসরা সে সময় বড় ভূমিকা রেখেছেন। বর্তমানের নেতারা সে সময়ের ধারাবাহিকতা ধারণ করছে বলে আমি মনে করি না। কেননা অশ্বিনীকুমার দত্তের আদর্শ ধারণ করতে হলে প্রতিবাদ করতে হবে। মানুষের জন্য গণমুখী আদর্শ ধারণ করতে হবে। সেটিই ছিল বরিশালের স্বর্ণযুগ। আমি মনে করি এক সময় বরিশালের ঐতিহ্যই ছিল যে এখান থেকে গণমুখী রাজনীতিবিদ তৈরি হয়। মুক্তিযুদ্ধেও এ অঞ্চলের অনেকে গণমুখী রাজনীতিতে অবদান রেখেছেন কিন্তু এখনকার বরিশালের নেতারা খুব গণমুখী রাজনীতির উদাহরণ তৈরি করতে পারছেন বলে আমরা মনে করি না। গণমুখী রাজনীতি যত শক্তিশালী হবে সেটার মাধ্যমেই বরিশালের এক সময়ের রাজনৈতিক ঐতিহ্য ফিরে আসা সম্ভব বলে আমি মনে করি।’