কাজিপুরে মেয়র বিরুদ্ধে মহিলাসহ ৪ জনকে প্রকাশ্যে মারধরের অভিযোগ
কাজিপুরে পৌর এলাকা ৬ নং ওয়ার্ডে প্রস্তাবিত সড়কের স্থান নির্ধারণ কেন্দ্র করে মেয়র কর্তৃক ৩জন মহিলাসহ ৪ জনকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। গত ১৭ অক্টোবর বিকেলে প্রকাশ্যে মারধরের শিকার ৪ জনের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আত্মচিৎকারে মেয়রের ভয়ে এগিয়ে আসেনি কেউ, খবর পেয়ে কাজিপুর থানা পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
সরেজমিনে স্থানীয়রা এবং ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, ৯০ দশকে যমুনা নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়ে সদর ইউনিয়নের প্রজার পাড়া গ্ৰামের আনিছুর রহমান ও তার দুই ভাই বর্তমানে পৌর এলাকার ৬ নং ওয়ার্ডের আলমপুর গ্ৰামের পূর্বপাড়ায় বসতি গড়েন এবং পৌর এলাকার ভোটার হন। সম্প্রতি আনিছের ক্রয়কৃত জমির পাশ দিয়ে নতুন রাস্তা নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় পৌরসভা। এজন্য পৌর মেয়র আব্দুল হান্নান আনিছের জমি থেকে ৫ ফুট পরিমাণ জায়গা ছেড়ে দিতে চাপ প্রয়োগ করে আসছিলেন। রফিকুল নামের এক বাড়িওয়ালাকে বিশেষ সুবিধা দিতে এ সড়ক নির্মাণ হচ্ছে বলে স্থানীয়দের ধারণা, শুধুমাত্র একটি বাড়ির জন্য সড়কটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পৌরসভা। আনিছ ২ ফুট জায়গা ছেড়ে দিতে রাজি হয়, এতে মেয়র অসন্তুষ্ট হয়ে বেশ কিছুদিন ধরে উচ্ছেদসহ হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিলেন। এর জেরে গত ১৯ সেপ্টেম্বর আনিসের নির্মাণাধীন ঘর ভেঙে দেয় মেয়র ও তার লোকজন। খাস জায়গা আছে দাবি করে ঘটনার দিন গত ১৭ অক্টোবর জায়গা পরিমাপ করতে আমিনসহ (সার্ভেয়ার) স্ব-দলবলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন তারা। পরিমাপে আনিছের জায়গার সীমানা আরো বেড়ে গেলে মেয়র ক্ষিপ্ত হয়ে আনিছের স্ত্রী কাজল খাতুন লিপিকে (৪০) হামলা চালিয়ে মারাত্মক আহত করেন। লিপি বুকে পিঠে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত প্রাপ্ত হন। ক্রমাগত মারধোরে প্রায় বিবস্ত্র হয়ে গেলেও ক্ষমা পায়নি জানা যায়, এ সময় মেয়রের সাথে উপস্থিত প্যানেল মেয়র শরিফুল ইসলাম কুড়ানসহ আনুমানিক ১৫/২০ জনের দল হামলা চালিয়ে আনিছের বড় ভাই মৃত রশিদের স্ত্রী পিয়ারা খাতুন (৫২), আরেক ভাই আনছারের স্ত্রী জাহানারা খাতুন (৪৫) এবং রশিদের ছেলে শাকিল আহমেদ (২২)কে বেধড়ক মারধরে আহত করে। আহতদের আত্ম চিৎকারে মেয়রের ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি। খবর পেয়ে কাজিপুর থানা পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। আহত কাজল খাতুন জানান, তার বাবার মৃত আব্দুল করিম একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং পুলিশে চাকরি করতেন, তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কণ্যা দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় প্রশাসন এবং দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধার কাছে বিচার প্রার্থনা করেন তিনি। হামলা বিষয়ে মেয়র আব্দুল হান্নান তালুকদার রাস্তা নিয়ে সমস্যা হয়েছে স্বীকার করে সাংবাদিকদের ঘটনাস্থল পরিদর্শনের আহ্বান জানিয়ে ফোন কল কেটে দেন। কাজিপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শ্যামল কুমার দত্ত (পিপিএম) বলেন, খবর পেয়ে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে মেয়র সম্পর্কে বিরুপ প্রতিক্রিয়া পড়েছে।