মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ০৪:৪০ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
কোনাবাড়ীতে ইয়াবাসহ আটক-২ ঠাকুরগাঁও জেলা ছাত্রদলের উদ্যোগ ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনা রোধে মুছে যাওয়া গতিরোধক চিহ্নিতকরণ হরিপুর উপজেলা হিসাব রক্ষক কার্যালয়ে দুর্নীতি দুই কর্মকর্তা গ্রেফতার ভাঙ্গুড়ায় দুইটি ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক কমিটি অনুমোদন আসামীর জামিন না মঞ্জুর খবরে পিপিকে হেনেস্তা বরগুনায় যুব ফোরাম ও নাগরিক প্লাটফর্ম এর পরামর্শ সভা দেশে দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে কোরআনের আইন চালু করতে হবে- রফিকুল ইসলাম খান সিরাজগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সকল শহীদের স্মরণে কোরআন প্রতিযোগিতা ও ইফতার দোয়া মাহফিল বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে কুড়িগ্রামে সংলাপ শিশু সুরক্ষা এবং শিশু অধিকার সচেতনতা বৃদ্ধির সংবেদনশীলতা সভা অনুষ্ঠিত

চার বছর পর পুঁজিবাজারে সক্রিয় হচ্ছেন বিদেশিরা

রিপোর্টারের নাম : / ১৩৫ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২২

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারির পর থেকে ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে বিদেশিরা শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রি করেছেন বেশি। কিন্তু ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে সেই দৃশ্য পাল্টে গেছে। বর্তমানে শেয়ার বিক্রির চেয়ে কিনছেন বেশি তারা। বিদেশিদের পুঁজিবাজারে ফেরাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ মুহূর্তে বাজারে ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ার অনেক কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। তাই বিদেশিরা মুনাফার সম্ভাবনা দেখে বিনিয়োগে আসছেন। পাশাপাশি ডলারের মূল্য অনেকটা স্থিতিশীল পর্যায়ে আসতে শুরু করছে। এ কারণে বিদেশিরা বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন। এতে দেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাজারের প্রতি আস্থা বাড়বে, তারাও বিনিয়োগে আসবেন।

বিএসইসির তথ্য মতে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদেশিরা চলতি বছরের নভেম্বর মাসে শেয়ার কেনা বেচা বাবদ মোট লেনদেন করেছেন ২৬২ কোটি ৬৩ লাখ ৯৫ হাজার ৩১৬ টাকা। যা ২০২১ সালে ছিল ৯৪৬ কোটি ৫ লাখ ২২ হাজার ১৪ টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে ৬৮৩ কোটি ৪১ লাখ ২৬ হাজার ৬৯৮ টাকা কমেছে।

ডলারের দাম বাড়ায় ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ফরেন ইনভেস্টররা শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছিল। বাংলাদেশেও তাই হয়েছে। বিদেশিরা ডলারের দাম যখন দেখেছে খুব বেশি বেড়েছে তখন তারা বিক্রি করেছে। পরবর্তীতে দেখছে ডলার মার্কেট কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে, পাশাপাশি পুঁজিবাজারের ফ্লোর প্রাইস উঠছে না; তাই তারা এখন বিনিয়োগ করছে।

তবে সুখবর হলো-শেয়ার বিক্রির তুলনায় শেয়ার কেনা বেড়েছে। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে বিদেশিরা ১৯১ কোটি ৮৯ লাখ ১৭ হাজার ৮৭৩ টাকার শেয়ার কিনেছেন তার বিপরীতে বিক্রি করেছেন মাত্র ৭০ কোটি ৭৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৪২ টাকা। অর্থাৎ নিট বিনিয়োগ বেড়েছে ১২১ কোটি ১৪ লাখ ৪০ হাজার ৪৩১ টাকার।

এর আগে ২০২১ সালের একই সময়ে ৪১৬ কোটি ৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬৬৪ টাকার শেয়ার কেনার বিপরীতে বিদেশিরা বিক্রি করেছিলেন ৫২৯ কোটি ৯৭ লাখ ৭৮ হাজার ৩৫০ টাকা। ২০২০ সালেও ১১৩ কোটি ৯০ লাখ ৩৪ হাজার ৬৮৬ টাকা বেশি শেয়ার বিক্রি করেছিলেন তারা।

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদেশিদের শেয়ার কেনা বেচা বাবদ লেনদেন হয়েছিল ৮৫১ কোটি টাকা। এর মধ্যে শেয়ার কিনেছিল ৫৮৭ কোটি টাকার আর বিক্রি করেছিল ২৬৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৩২৪ কোটি টাকার বিনিয়োগ করেছিল। তারপর থেকে চলতি বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত (মোট ৩ বছর ৯ মাস) বিদেশিরা শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রি করেছেন বেশি।

২০২২ সালের অক্টোবর মাসে বিদেশিদের শেয়ার কেনা বেচা বাবদ লেনদেন হয়েছে ১৮৭ কোটি ৭৬ লাখ ৬৬ হাজার ৯০ টাকা। এর মধ্যে ৮৭ কোটি ৫২ লাখ ৫২ হাজার ৪৪৪ টাকার শেয়ার কিনেছেন তার বিপরীতে বিক্রি করেছেন ১০০ কোটি ২৪ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৫ টাকার শেয়ার। অর্থাৎ চলতি বছর পুঁজিবাজারে বিদেশিদের লেনদেন ও নিট বিনিয়োগ বেড়েছে। ২০২১ সালে অক্টোবর মাসে বিদেশিরা শেয়ার কেনা-বেচা করেছিল ৩৭২ কোটি ৭৪ লাখ ২৩ হাজার ৫৮১ টাকার।
ডলারের রেট যখন অনেক বেড়ে গিয়েছিল, তখন বিদেশিরা শেয়ার বিক্রি করে প্রফিট নিয়ে গিয়েছিল। এখন যখন ফরেন এক্সচেঞ্জ রেট স্ট্যাবল হয়ে নিচের দিকে নামছে তারাও এখন তাড়াতাড়ি বিনিয়োগ করছে। কারণ এখন বিনিয়োগ করলে ডলারের এক্সচেঞ্জ রেট ভালো পাচ্ছে। পরবর্তীতে যখন এক্সচেঞ্জ রেট আরও কমবে, তখন লাভের সঙ্গে এক্সচেঞ্জ রেট টাও যোগ হবে।

শেয়ার সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ (সিডিবিএল) সূত্রে জানা গেছে, গত চার বছরে (২০১৯-২০২২) শেয়ার বিক্রি করে পুঁজিবাজার ছেড়েছেন ১ লাখ ৫ হাজার ১৪১টি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্টধারী। ২০১৯ সালে ১ ফেব্রুয়ারি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ছিল ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯৫টি। সেখান থেকে ১ লাখ ৫ হাজার ১৪১টি কমে চলতি বছরের ১ ডিসেম্বর দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ৯৫৪টিতে। অর্থাৎ ১ লাখ ৫ হাজার বিওধারী বিদেশি বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করে টাকা নিয়ে চলে গেছেন।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, বিদেশিরা দেখেশুনে বিনিয়োগ করেন, তারা লাভ না হলে কখনো বিনিয়োগ করে না। এখন শেয়ারের দাম কম তাই বিনিয়োগ করছেন। তারা শেয়ারের দাম বাড়লে বিক্রি করে, আর কমলে কেনেন।

তিনি বলেন, গত চার বছরের মধ্য প্রথম বছর দরপতন ও করোনার কারণে শেয়ার বিক্রি করেছেন বিদেশিরা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বছর যৌক্তিকমূল্যের চেয়ে বেশি দাম বাড়ায় শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নিয়েছেন তারা। চতুর্থ বছর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে ডলারের বাজার অস্থির, ডলারের সংকট ছিল। অন্যদিকে ফ্লোর প্রাইস আরোপসহ নানা ইস্যুতে টালমাটাল ছিল দেশের পুঁজিবাজার। এসব কারণে বিদেশিরা পুঁজি হারানোর ভয়ে শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলে নিয়েছে। এখন তাদের পর্যবেক্ষণে মনে হচ্ছে, পুঁজিবাজার ভালো হবে। তাই তারা বিনিয়োগ করছে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, ডলারের দাম বাড়ায় ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ফরেন ইনভেস্টররা শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছিল। বাংলাদেশেও তাই হয়েছে। বিদেশিরা ডলারের দাম যখন দেখেছে খুব বেশি বেড়েছে তখন তারা বিক্রি করেছে। পরবর্তীতে দেখছে ডলার মার্কেট কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে, পাশাপাশি পুঁজিবাজারের ফ্লোর প্রাইস উঠছে না; তাই তারা এখন বিনিয়োগ করছে।

অধ্যাপক আল আমিন বলেন, ফ্লোর প্রাইস নিয়ে তাদের ধারণা ছিল বিভিন্ন চাপে সেটা উঠে যাবে। এরপর বিদেশিরা রেগুলেটরদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছে যে, ফ্লোর প্রাইস তুলছে না। ফ্লোর প্রাইস উঠে গেলে বিদেশিরা আরও দেরিতে মার্কেটে ফিরত। কিন্তু দেখছে ফ্লোর আপাতত উঠার সম্ভাবনা নেই। তাই তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে।

এ মুহূর্তে বাজারে ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ার অনেক কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। তাই বিদেশিরা মুনাফার সম্ভাবনা দেখে বিনিয়োগে আসছেন। পাশাপাশি ডলারের মূল্য অনেকটা স্থিতিশীল পর্যায়ে আসতে শুরু করছে। এ কারণে বিদেশিরা বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন। এতে দেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাজারের প্রতি আস্থা বাড়বে, তারাও বিনিয়োগে আসবেন।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ডলারের রেট যখন অনেক বেড়ে গিয়েছিল, তখন বিদেশিরা শেয়ার বিক্রি করে প্রফিট নিয়ে গিয়েছিল। এখন যখন ফরেন এক্সচেঞ্জ রেট স্ট্যাবল হয়ে নিচের দিকে নামছে তারাও এখন তাড়াতাড়ি বিনিয়োগ করছে। কারণ এখন বিনিয়োগ করলে ডলারের এক্সচেঞ্জ রেট ভালো পাচ্ছে। পরবর্তীতে যখন এক্সচেঞ্জ রেট আরও কমবে, তখন লাভের সঙ্গে এক্সচেঞ্জ রেট টাও যোগ হবে।

তিনি বলেন, ধরেন ডলারের রেট ১০৫ টাকা। এক ডলারে যে শেয়ারটা কিনতে পারছে, ডলারের রেট ১০০ টাকা হয়ে গেলে ৫ টাকা তার লাভ হয়ে যাবে। আবার শেয়ারেরও লাভ অর্থাৎ দুই দিক দিয়ে লাভ হবে। এ জন্য বিদেশিরা শেয়ার কিনছেন। এছাড়া বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সবাই একটু ভয়ে ছিল। কোনো শঙ্কা ছাড়াই সম্মেলন শেষ হয়েছে ভয়ও কাটছে। এখন দেশি বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বিদেশিদেরও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর