সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:০৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় হেরোইনসহ দুই মাদক ব্যাবসায়ী গ্রেফতার বেনাপোলে মামলায় একজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড পাবনায় গ্রেফতার আ.লীগ নেতাকে ছিনিয়ে নিলেন স্থানীয়রা লালমনিরহাটে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতি জিহান আটক! জয়পুরহাটে ওসির বদলি আদেশ ঠেকাতে মানববন্ধন কুড়িগ্রামে ২ টি অবৈধ ইটভাটার সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দিলো প্রশাসন  বশেমুরকৃবি’তে টিএইচই র‍্যাঙ্কিংয়ে ১ম স্থান অর্জন উৎসব ও বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপিত রাজশাহীতে ‘গ্রীন প্লাজা’র ষষ্ঠ প্রকল্পের উদ্বোধন কোম্পানীগঞ্জে মাঝিরটেক টি-টেন ক্রিকেট টুর্নামেন্টর ফাইনাল অনুষ্ঠিত ভাঙ্গুড়ায় জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সভা অনুষ্ঠিত 

তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করতে হবে: প্রধান বিচারপতি

রিপোর্টারের নাম : / ৫২ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। তিনি বলেছেন, বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু কেবল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমেই যে দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়িত হয়েছে, এমনটি ভেবে আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নবীন প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি এই বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কীভাবে সম্ভব হলো, তার সঠিক ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। তা না হলে যারা যুদ্ধাপরাধীদের দোসর, তারা ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পথভ্রষ্ট করবে। তাই যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে।

শুক্রবার জাতীয় জাদুঘরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ‘৭১-এর গণহত্যার বিচার: সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি।

প্রয়াত অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর জন্মদিন উপলক্ষে এই সভার আয়োজন করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। সংগঠনের সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অধ্যাপক কবীর চৌধুরী স্মারক বক্তৃতা প্রদান করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের সাম্মানিক সভাপতি নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, শিক্ষাবিদ শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ও ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শহীদসন্তান নাট্যজন আসিফ মুনীর।

প্রধান বিচারপতি বলেন, যে নির্মম সত্য ট্রাইব্যুনালের বিচারের মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে এবং আসছে সেটি তরুণ প্রজন্মকে জানতে হবে। তরুণরা যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে ধারণ করে এগিয়ে যায় এবং এক সুরক্ষিত মানবিক মানবগোষ্ঠী ও মানবিক এক বিশ্বের জন্য এই উচ্চারণে সদা উচ্চকিত থাকে যে– ‘নেভার অ্যাগেইন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে নিজস্ব আইনে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান বিচার কার্যক্রমের এখতিয়ার ও বৈধতা এবং স্বচ্ছতা ও মান প্রশ্নাতীত এবং যেকোনো বিভ্রান্তিমুক্ত। জেনোসাইড ও মানবতাবিরোধী অপরাধ তা বিশ্বের যেখানেই সংঘটিত হোক না কেন সেটির বিচার হতেই হবে। অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতেই হবে।’

অধ্যাপক কবীর চৌধুরী স্মারক বক্তব্যে ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে ৩০টি মামলার কার্যক্রম চলছে ও একটি মামলা রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। তদন্ত সংস্থার কাছে আরও ৫০০ থেকে ৬০০ মামলা তদন্তের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। মামলার আসামি এবং সাক্ষী সকলেই এখন ৭০-ঊর্ধ্ব। প্রাকৃতিক নিয়মেই হয়তো আর তিন চার বছর পর এদের কাউকেই আমরা বিচারের জন্য পাবো না। অথচ ভুক্তভোগীদের বিচার পাওয়ার অধিকার তখনও অপূর্ণ থেকে যাবে।  তাই খুব দ্রুততম সময়ে বিচার প্রক্রিয়া সমাপ্ত করা প্রয়োজন।’

নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর মতো এত অনুবাদ সম্ভবত দেশে কেউ করেননি। তার বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদ গ্রন্থের সংখ্যা অর্ধশতাধিক এবং ইংরেজি থেকে বাংলা গ্রন্থ ৭৫-এর কম নয়। একদিকে যেমন তিনি বাংলাদেশের সাহিত্যকে অনুবাদের মাধ্যমে বিদেশে পরিচিত করিয়েছেন, অপরদিকে বিশ্বসাহিত্যকে বাঙালি পাঠকের কাছে নিয়ে এসেছেন। তিনি চিন্তাশীল প্রবন্ধ রচনা করে গেছেন নিরলসভাবে। বিশেষ উপলক্ষে বিভিন্ন পত্রপত্রিকার অনুরোধে তিনি নিবন্ধ লিখেছেন, সারগর্ভ লিখিত বক্তৃতাও করেছেন অনেক।’

শিক্ষাবিদ শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, ‘কবীর চৌধুরী সমাজকে দেখিয়েছেন সঠিক পথের দিশা। সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গি মৌলবাদ, সন্ত্রাস ও রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের ঘোর বিরোধিতা করেছেন আজীবন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও মৌলবাদ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের দাবিতেও শহীদজননীর পাশে থেকেছেন প্রথম থেকে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গণআদালতের অন্যতম বিচারকও ছিলেন। বিশেষ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির জন্য যত সভা, মিছিল, আন্দোলন, মানববন্ধন হয়েছে সবকিছুই ব্যানার ধরে সম্মুখসারিতে থেকেছেন। সকলের অনুপ্রেরণা ছিলেন তিনি শুধু আন্দোলনই নয় ব্যক্তিগত জীবনাচরণেও।’

অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘কবীর চৌধুরী অসাম্প্রদায়িক সমাজ রাষ্ট্রের জন্য কাজ করে গেছেন, জঙ্গি মৌলবাদ, অগণতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। সারাটা জীবন শিক্ষকতা করেছেন। বাংলাদেশের কয়েক জেনারেশন তার ছাত্র। আমাদের প্রবন্ধ ও অনুবাদ সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। আমাদের এই বিষয়টিই দেখাতে চেয়েছেন, ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালিত করতে হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং জামায়াতে ইসলামীর মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের দাবিতে ৩২ বছর আগে শহীদজননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যে অভূতপূর্ব নাগরিক আন্দোলন সূচিত হয়েছিল এর প্রধান নেতাদের অন্যতম অধ্যাপক কবীর চৌধুরী। তিনি এখন কায়িকভাবে আমাদের সঙ্গে না থাকলেও মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, ধর্মনিরপেক্ষ মানবতার পক্ষে তার রচনাবলী আমাদের ঝড়ের রাতে বাতিঘরের মতো আলো জ্বেলে পথ দেখাচ্ছে। আমরা সেই আলোর পথযাত্রী। আমাদের পথ যত ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ, দুর্গম হোক– আমরা অবশ্যই গন্তব্যে পৌঁছব।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর