দুই দিনে গ্রেপ্তার ৫৪ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার
বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায় সেনা নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর সমন্বিত অভিযানে গতকাল সোমবার আরো ৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্য। তাঁদের কাছ থেকে সাতটি দেশীয় বন্দুক, ২০টি গুলি, ল্যাপটপ, ইউনিফর্ম, বুটসহ বেশ কিছু অস্ত্র ও সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে দুই দিনের অভিযানে ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো।
পার্বত্য চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার সৈকত শাহিন গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে এ তথ্য দিয়ে বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের সংশ্লিষ্ট থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এর আগে করা মামলাগুলোতে তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংক ডাকাতির পর গত দুই দিনে পাহাড়ে যৌথ বাহিনীর অভিযানে এ পর্যন্ত মোট ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ৪৯ জন এবং গত রবিবার সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত রবিবার বান্দরবান সদর উপজেলার শ্যারনপাড়া এলাকা থেকে কেএনএফের সমন্বয়কারী চেওসিং বমকে দুটি অস্ত্রসহ (দোনলা বন্দুক) গ্রেপ্তার করা হয়। চেওসিং বম কেএনএফ প্রধান নাথান বমের চাচাতো ভাই। পরে রাতে রুমা ও থানচিতে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত একটি জিপ গাড়িসহ (চাঁদের গাড়ি) চালক কফিল উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যে কেএনএফের সামরিক শাখার এক নারীসহ আরো তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তাঁদের মধ্যে একজনকে থানচি ও অন্য তিনজনকে বান্দরবান সদরের রেইসা চেকপোস্ট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন রোয়াংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জিংচুন নুং বমের ছেলে ভাননুন নুয়াম বম, থানচির সিমতলাংপিপাড়ার লালমুন চম বমের মেয়ে জেমিনিউ বম ও ছেলে আমে লমচেউ বম।
থানচি থানার ওসি জসীম উদ্দিন বলেন, কেএনএফ সদস্যরা ব্যাংক ডাকাতিতে দুটি গাড়ি ব্যবহার করেছেন। ওই দুই গাড়ির একটি জব্দ, চালক কফিল উদ্দিনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) পরিচালকের পক্ষ থেকে গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো সহকারী পরিচালক রাশেদুল আলম খান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অস্ত্র-গুলিসহ বান্দরবানের রুমার বেথেলপাড়ায় অভিযান চালিয়ে সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সক্রিয় দুই সদস্যকে আটক করা হয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সূত্র বলছে, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে কেএনএফের দুই সদস্য এবং সোনালী ব্যাংক রুমা শাখার সহকারী ক্যাশিয়ার লাল লিয়েন বমও রয়েছেন।
অভিযানের বিষয়ে কমান্ডার লে. কর্নেল কে এম আরাফাত আমিন জানান, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চলছে। সন্দেহজনক স্থান ও বাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২ ও ৩ এপ্রিল রুমা ও থানচিতে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতি, ব্যাংক ব্যবস্থাপক অপহরণ, টাকা লুট ও পুলিশ-আনসারের ১৪টি অস্ত্র ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। নতুন সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ এসব সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী জানিয়েছে। ঘটনার পর থেকে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার, অস্ত্র ও টাকা উদ্ধারের অভিযানে অংশ নিচ্ছেন সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। অভিযান সমন্বয় করছে সেনাবাহিনী।
র্যাব সূত্র বলছে, পাহাড়ের অভিযানের পর থেকে কেএনএফ সদস্যদের সঙ্গে যারা ঘনিষ্ঠ, তারা মোবাইল ফোন বন্ধ করে গাঢাকা দিয়েছে। কোনো নিরীহ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয়, এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।
বম সোশ্যাল কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক লালথেন বম বলেন, কেএনএফের হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে আজকে পাহাড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকে জরুরি কাজ ছাড়া বাড়ির বাইরে যাচ্ছে না। এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।