দেশে বায়োব্যাংক করবে সরকার
দেশে বায়োব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য কাজও শুরু করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। ২০২১ সালের শেষের দিকে শুরু হওয়া এই উদ্যোগ যদিও এখন পর্যন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, কিন্তু সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, কোনো ধরনের বাধা না পেলে আগামী দু-চার বছরের মধ্যে এটি স্থাপন করা সম্ভব হবে।
বিএসএমএমইউয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বিশ্বমানের গবেষণা পরিচালনা, মহামারীসহ বিবিধ জটিল ও কঠিন রোগের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রাপ্তিতে বায়োব্যাংকের গুরুত্ব অসীম। পরিবেশ ও বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে বিদ্যমান ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার বিষয়ে অতীত ও বর্তমান পরিস্থিতি জানতে বায়োব্যাংকের বিরাট অবদান রয়েছে। বায়োব্যাংকে বিভিন্ন অরগান ও টিস্যু সংরক্ষণ করা হয়।
সর্বশেষ গত সোমবার বাংলাদেশে বায়োব্যাংক প্রতিষ্ঠা শীর্ষক একটি উচ্চপর্যায়ের অনলাইন আলোচনা সভা হয়। সভায় বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক এবং বেলজিয়ামে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিশনের প্রধান মাহবুব হাসান সালেহ অনলাইনে যোগ দেন। গতকাল বুধবার বিএসএমএমইউর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সভায় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক বাংলাদেশে বায়োব্যাংক প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতার অঙ্গীকার করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশে বায়োব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্বমানের গবেষণা পরিচালনার একটি আঞ্চলিক কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তুলতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেন।
সভায় বেলজিয়ামে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিশনের প্রধান মাহবুব হাসান সালেহ বাংলাদেশে বায়োব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট ব্যবস্থাপনা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বিএসএমএমইউয়ের যোগসূত্র স্থাপন এবং তার দূতাবাসের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এ ছাড়া আয়ারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি কলেজ অব ডাবলিনের ডা. আরমান রহমান বায়োব্যাংকের বৈশ্বিক নেতৃত্বের সঙ্গে বিএসএমএমইউয়ের যোগাযোগ স্থাপনে যে সহযোগিতা করছেন, তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনা অনুযায়ী গবেষণায় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের অবস্থান জোরদার করার লক্ষ্যে বেলজিয়ামে বাংলাদেশ দূতাবাস, বিএসএমএমইউর গবেষক দল এবং সমন্বয়কারী ডা. আরমান রহমান বায়োব্যাংক স্থাপনের পরবর্তী ধাপ আরও দ্রুত ফলপ্রসূভাবে শেষ করার লক্ষ্যে একত্রে কাজ করার কর্মপরিকল্পনা করেন। এই লক্ষ্যে অতি দ্রুত বায়োব্যাংকের একটি ধারণাপত্র তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সভায় বেলজিয়ামে বাংলাদেশ দূতাবাসসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সহায়তায় সম্ভাব্য স্বল্পসময়ের মধ্যেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সভা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়।
বায়োব্যাংকে প্রতিষ্ঠার উদ্যোক্তাদের একজন বিএসএমএমইউয়ের অ্যানাটমি বিভাগের চেয়ারম্যানে অধ্যাপক ডা. লায়লা আনজুমান বানু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বায়োব্যাংকের কাজ হলো যাদের প্রাণ আছে, অর্থাৎ মানুষ, প্রাণী ও উদ্ভিদ, মাইক্রো অরগানিজম ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া এসব উপাদান সংরক্ষণ করা। এটার বৈশ্বিক প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব আছে। যেমন যে দেশের জন্য কোনো ড্রাগ তৈরি করা হয়, সেই দেশের মানুষের প্রকৃতি ও রোগব্যাধির তথ্য যদি বৈশ্বিকভাবে সংরক্ষিত না থাকে, তাহলে ওই ড্রাগ সে দেশের মানুষের কাজে নাও লাগতে পারে। টিকা ডেভেলপমেন্টে অন্য দেশে কাজ হয়েছে, কিন্তু আমাদের দেশে হয় না। কারণ আমাদের বায়োলজিক্যাল স্যাম্পল সংরক্ষণ নেই।’
বায়োব্যাংকে শুধু বায়োলজিক্যাল স্যাম্পলই না, দেশে বিভিন্ন রোগের ধরনের তথ্যও সংরক্ষণ করা যায় বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তিনি বলেন, বায়োব্যাংক গবেষকদের কাজে লাগে। তাদের বায়োলজিক্যাল স্যাম্পলের বাইরেও তাদের বিভিন্ন রোগের তথ্য লাগে। কোন রোগ কী ধরনের প্রকৃতিতে হয়, সেটা জানতে বায়োব্যাংক খুবই দরকার।
এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ‘আমরা ২০২১ সালের শেষের দিকে চিন্তা করেছিলাম দেশে একটা বায়োব্যাংক হওয়া দরকার। তারপর আমরা এটা নিয়ে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিকভাবে আলোচনা শুরু করি। অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, ভারত, নেপাল, ভুটান, কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। এখন আমরা যদি এটার জন্য একটা প্রকল্প করি, তাহলে দাতা সংস্থা পেতে পারি, কিংবা প্রকল্প করলে বাংলাদেশও করতে পারে।’
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এখন আমরা খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে আছি। যদি কোথাও বাধাগ্রস্ত না হয়, তাহলে আগামী দু-চার বছরের মধ্যে বায়োব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।’