শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:১৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
পৌর বিএনপির কাউন্সিলে সভাপতি রফিকুল সম্পাদক, সাইদুল, সাংগঠনিক মোতালেব পাবনায় জন্মদিনে সড়ক দুর্ঘটনা শিশুর মৃত্যু গাজীপুরে নাশকতা ও বাস পোড়ানো মামলায় গ্রেফতার-৩৩ ব্যবসায়ীকে অপহরণ পরে মিথ্যা প্রতরনা মামলায় ফাঁসলেন জয়দেবপুর থানার ওসি হালিম,তদন্ত শুরু শান্তিরহাট জামে মসজিদে চরহাজারী কল্যাণ ফাউন্ডেশনের অনুদান প্রদান গাইবান্ধায় ৬ শিক্ষকের রাজকীয় বিদায় টঙ্গীতে কারখানায় টিফিন খেয়ে অর্ধশতাধিক শ্রমিক অসুস্থ অরক্ষিত রেল ক্রসিংয়ে প্রাণ গেলো দুই মোটরসাইকেল আরোহীর বেড়ায় বন্ধের পথে ক্ষুদ্র বেকারি শিল্প ফুলবাড়ীতে কম্বল বিতরণ করলেন শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম বেবু

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রকে ৩৬৫ দিনই সক্রিয় থাকতে হবে

রিপোর্টারের নাম : / ১৫৭ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : শনিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২২

দেশে প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বগতি। চাল, আটা, ডাল, ডিম, মাছ, গোশত, দুধ, চিনিসহ জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব ধরনের পণ্যের মূল্যের উর্ধ্বগতি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পাগলা ঘোড়ার পাল্লা দিতে পারছে না সাধারণ মানুষ। আয় না বাড়লেও বাজারে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে। কাটছাঁট করেও পরিবারের ব্যয় মেটাতে দিশেহারা দেশের মানুষ। মূল্যবৃদ্ধি মানুষকে অস্থির করে তুলেছে। পাশাপাশি বেড়েছে চিকিৎসা ও শিক্ষাব্যয়। বেড়েছে বাস ও বাড়িভাড়াও। অথচ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাষ্ট্রকে ৩৬৫ দিনই সক্রিয় থাকতে বলেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন। সারা বছর বাজার তদারক করতে বলেছেন। আর পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারসাজির সাথে জড়িত দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।

গত ১৫ মার্চ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রুল জারিসহ এসব আদেশ দেন হাইকোর্ট। আদালত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করা অবৈধ জোটবদ্ধ (সিন্ডিকেশন) ব্যবসা বন্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। সেই সাথে দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করা জোটবদ্ধ (সিন্ডিকেশন) দুষ্কৃতকারীদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনকে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা-ও জানতে চেয়েছেন রুলে। আগামী ২৮ আগস্ট এই রুলের শুনানি ও আদেশের জন্য উঠছে হাইকোর্টে। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চে আগামী রোববার এ বিষয়ে আদেশের জন্য রয়েছে।

এ বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ মহিদুল কবীর জানান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে হাইকোর্ট রুলসহ যেসব নির্দেশনা দিয়েছিলেন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আগামীকাল রোববার এ বিষয়ে শুনানি ও আদেশের জন্য রয়েছে। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা জানায়নি। অপর দিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে তারা ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, মনিটরিং সেল গঠনসহ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে এগুলো কিতাবি। বাস্তবে দ্রব্যমূলের উর্ধ্বগতিতে দিশেহারা দেশের মানুষ।

অন্য দিকে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নির্দেশনা দেয়ার পরও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি অভিযোগ পাওয়া গেছে। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) অভিযোগ সম্প্রতি অসাধু ডিম ব্যবসায়ীদের পকেটে ভোক্তার ৫০০ কোটি টাকা গেছে। বাজারে ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি ডিমের দামে বেশ অস্থিরতা চলছে। আর জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর প্রতি কেজি চালের দাম ৪-৫ টাকা বেড়ে গেছে। এভাবে প্রায় প্রতিটি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে লাগাম ছাড়া।

বাজারে মূল্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ২৮টি টিম নিয়োজিত : বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে আদালতে একটি প্রতিবেদন দিলেও বাস্তবে বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না। এ বিষয়ে আদালতে দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে প্রতিদিন চারটি করে সপ্তাহে মোট ২৮টি টিম ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন বাজারে মূল্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এ লক্ষ্যে মোট ৪২টি টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি টিমে কৃষি মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রতিনিধিসহ মোট ছয়জন করে সদস্য রয়েছেন। বাজার মনিটরিং টিম ঢাকা শহরের বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার নিয়মিতভাবে পরিদর্শন করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর মূল্য, মজুদ ও সরবরাহ পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। কোনোরূপ অস্বাভাবিক অবস্থা, পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হলে বা সরকারনির্ধারিত দামের থেকে বেশি দামে বিক্রি হলে সে সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন প্রদানের মাধ্যমে অবহিত করে থাকে।

অন্য দিকে গতকাল শুক্রবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী কৃক্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করছে উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশে খাদ্যশস্যের কোনো অভাব এবং সারের কোনো সঙ্কট নেই। বর্তমানে ৬ থেকে ৭ লাখ মেট্রিকটন সার মজুদ রয়েছে। এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধকে পুঁজি করে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য বাড়াচ্ছে। এসব অতি মুনাফালোভীদের কারণে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে এবং সাধারণ জনগণকে কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের এখানে ব্যবসায়ীরা একটু বেশি সুযোগ নিচ্ছে। জনগণের যে কষ্ট হচ্ছে সেটা সরকার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী চিন্তা করেন। আমরা ব্যবসায়ীদের নীতিমালার মধ্যে আনতে পারিনি। আমরা চেষ্টা করছি সার্বিকভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য। মানুষের যে ভোগান্তি হচ্ছে তা কমানোর জন্য চেষ্টা করব।

রিটকারী আইনজীবী জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে সরকারনির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করা অবৈধ জোটবদ্ধ (সিন্ডিকেশন) ব্যবসা প্রতিরোধে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা জানিয়ে আগামী ২৬ এপ্রিলের মধ্যে শিল্পসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ও বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যানকে প্রতিবেদন দিতে বলেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া আদালত সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে রেশন কার্ডের মাধ্যমে মুক্ত বাজার বিক্রয় নীতি অবলম্বন করে তেল, পেঁয়াজ, আটা, চাল, গম, চিনি ও ডালসহ সব নিত্যপণ্য সাধারণ জনগণের মধ্যে বিতরণের নির্দেশ দিয়েছেন।

অপর দিকে অবৈধ জোটবদ্ধ (সিন্ডিকেশন) ব্যবসা প্রতিরোধে প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২-এর ২১(১) ধারা অনুযায়ী প্রযোজনীয় প্রবিধান প্রণয়নে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না এবং চাল, ডাল, গম, চিনি, পেঁয়াজ ও ভোজ্যতেলের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির ওএমএস (খোলাবাজারে বিক্রয়) নীতিতে রেশন কার্ডের বিধান অন্তর্ভুক্ত করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, রুলে সে প্রশ্নও রাখা হয়েছে। সেই সাথে ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। বাণিজ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, খাদ্যসচিব, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর মহাপরিচালক, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) চেয়ারম্যান ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির (এফবিসিসিআই) সভাপতিকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ মহিদুল কবীর জানান, হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিছু পদক্ষেপ নেয়ার কথা বললেও অন্য বিবাদিদের প্রতিবেদন পায়নি। রোববার আদালত এ বিষয়ে আদেশ দেবেন।

গত ৬ মার্চ সয়াবিন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে মনিটরিং সেল গঠন এবং নীতিমালা তৈরি করতে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয় হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনির হোসেন, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মহিদুল কবীর ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ উল্লাহ এ রিট দায়ের করেন। এর আগে গত ৩ মার্চ সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনেন এ তিন আইনজীবী।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর