নির্বাচনী সরকারে সংসদের দলগুলো থাকতে পারে

জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল কোনো দলের কেউ যদি নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন, তাহলে তাঁকে বা তাঁদের ওই সরকারে নিতে অসুবিধা নেই। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সোমবার বিকেলে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
জাতীয় সংসদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছাড়া জাতীয় পার্টি (এরশাদ), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, গণফোরাম, জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন রয়েছে। এর বাইরে চারজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রয়েছেন। গত সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মোট আটজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন; এর মধ্যে একজন শপথ নেননি। বাকি সাতজন পরে পদত্যাগ করেন।
আন্দোলন করুক, মানুষ পোড়ালে ছাড়ব না : বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিছু লোক আছে আন্দোলন করেই যাচ্ছে। সরকার হটাবে। আমরা তো তাদের কিছু বলছি না। আমরা যখন বিরোধী দলে ছিলাম আমাদের কি (মাঠে) নামতে দিয়েছে? গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্দোলন করুক কোনো আপত্তি নেই; কিন্তু জ্বালাও-পোড়াও যদি করতে চায়, কোনো মানুষকে যদি আবারও পোড়ায়, তাদের ছাড়ব না। মানুষের ক্ষতি আর করতে দেব না।’
নির্বাচন নিয়ে চাপ আছে কি না—এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন আসছে, ভয় পাব? কেন ভয় পাব? জনগণের জন্য কাজ করেছি। জনগণ যদি ভোট দেয় তাহলে আছি, না দিলে নেই। থাকে লক্ষ্মী, যায় বালাই!’
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আলোচনায় কিসের জন্য ডাকতে যাব? তাদের ডিমান্ডই তো ঠিক নেই। যুক্তরাজ্যে যারা ছিল তখন বৃষ্টি নেমেছিল। আমি ভাবলাম, তারা প্রবাসী, বৃষ্টিতে ভিজবে তার চেয়ে তাদের ডাকি, কী বলতে চায় শুনি। এখন ঢাকায় বা বাংলাদেশে যারা, তাদের যদি বৃষ্টিতে ভেজা শখের মধ্যে থাকে তারা থাকুক।’
যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসের হাতে পদ্মা বহুমুখী সেতুর একটি পেইন্টিং তুলে দেওয়ার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পেইন্টিংটা আমরা এ জন্য নিয়ে গেছি যে আমাদের দেশে যে খুব ভালো পেইন্টার আছেন, তাঁরা খুব চমৎকার পেইন্টিং করতে পারেন, সেটা জানানোর জন্য। বিশ্বের কারো যদি পেইন্টিং প্রয়োজন হয়, আমাদের কাছে চাইতে পারবেন। আর পেইন্টিংয়ের বিষয়বস্তুটা হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে প্রিয় জায়গাটা হলো পদ্মা সেতু। এটাই, আর কিছু নয়।’
মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা নেই : সরকারি চাকরিজীবীদের মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার আলোচনা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। মূল্যস্ফীতি যত বাড়বে তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা একটি পার্সেন্টেজে বেতন বাড়াই। অনেক সুযোগও দিয়েছি, বৈশাখী ভাতা থেকে শুরু করে, ফ্ল্যাট কেনার ভাতা, গাড়ি কেনার লোন ইত্যাদি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেহেতু মুদ্রাস্ফীতি কিছু বৃদ্ধি পেয়েছে, আমরা সেই জায়গায় আবার কতটুকু পর্যন্ত সুযোগ দেওয়া যায়, সেই চিন্তা-ভাবনা করছি। কমিশন করো, এটা করো, সেটা করো, এতে খুব বেশি লাভ হয় না। কিছু লোক বঞ্চিত হয়ে যায়, আর কিছু লোক লাভবান হয়। এ জন্য প্রতিবছরের হিসাব মতো ইনফ্লেশন যত বাড়বে তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা বেতন বাড়াব।’
বেসরকারি খাত বিশেষ করে গণমাধ্যমকর্মীদের বেতন বৃদ্ধি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা তাদের বিষয়। এটা সরকারের ব্যাপার না। বেসরকারি খাত যেন বিপদে না পড়ে সে জন্য করোনাভাইরাসের সময় প্রণোদনা দিয়েছি। তাদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হয়েছে। সেখানে আমরা ভর্তুকিও দিয়েছি। এই ভর্তুকিটা বাজেটকে বিপদে ফেলেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে এমন ভর্তুকি দেয় না। বিদ্যুতে ভর্তুকি দেওয়ায় কে বেশি লাভ পায়? যে সবচেয়ে বেশি এয়ারকন্ডিশন চালায় তার লাভ হয়। গরিব মানুষের তো লাভ হয় না। আসলে লাভবান হচ্ছেন বিত্তশালীরা। এটা টানা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। বিদ্যুৎ যে দামে উৎপাদন হবে, সেই দামে কিনতে হবে। যে যতটুকু পারবেন ততটুকু কিনবেন। সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করে এসব জায়গায় ভর্তুকি দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই।
যারা নিষেধাজ্ঞা দেয় তাদের কাছ থেকে কিছু কিনব না : প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কী কারণে নিষেধাজ্ঞা দেবে? যাদের দিয়ে (র্যাব) আমরা সন্ত্রাস দমন করলাম, জঙ্গিবাদ দমন করলাম। হলি আর্টিজানের পর বাংলাদেশে আর তেমন কোনো বড় ঘটনা ঘটেনি। কারণ আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী গোয়েন্দা নজরদারি এবং আরো কিছু ভালো কাজ করেছে। এর পরও নিষেধাজ্ঞা কেন—সেটাই আমাদের প্রশ্ন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো কেনাকাটার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে বলে দিয়েছি। এখন থেকে আমাদের শর্ত থাকবে, যারা আমাদের স্যাংশন দেবে তাদের থেকে আমরা কোনো কিছু কেনাকাটা করব না। পরিষ্কার কথা। যেটা নিয়ে সমস্যা হয়, সেটা আমরা উৎপাদন করে সমাধান করতে পারি।’ এরই মধ্যে এ বিষয়ে দুটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কথা নাই, বার্তা নাই, নিষেধাজ্ঞার ভয় দেখাবে! আমরা ভয় পেয়ে বসে থাকব কেন? আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ, এটা-সেটা শুনতে হয়। আমাদের দেশেরই কিছু মানুষ দেশের বদনাম করে। তারা যে দুর্নীতিসহ কত অপকর্মের সঙ্গে জড়িত, সেগুলো আমাদের সাংবাদিকরা খুঁজে বের করেন না।’
রিজার্ভ নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই : ডলার সংকটের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডলার সংকট এখন পুরো বিশ্বব্যাপী, এটা শুধু বাংলাদেশে নয়। প্রথম গেল করোনা অতিমারি, আর তারপর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, আর সেই যুদ্ধের সঙ্গে স্যাংশন, কাউন্টার স্যাংশন। যার ফলে আজকে বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে গেছে…। দ্বিতীয় হচ্ছে পরিবহন, পরিচালন ব্যয় বেড়ে গেছে, যার কারণে ডলার সংকটটা এখন সমগ্র বিশ্বেই রয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের রিজার্ভ এখনো যা আছে, তাতে অন্তত এটুকু বলতে পারি, আমাদের এখনো কোনো সংকট সেভাবে নেই। তবে হ্যাঁ, আমরা সব সময় চেষ্টা করি যে রিজার্ভটা যেন আমাদের থাকে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে বর্তমানে ৩১.২২ বিলিয়ন রিজার্ভ রয়েছে। ২০০৬ সালে বিএনপির আমলে ছিল এক বিলিয়নেরও কম। সুতরাং রিজার্ভ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিসভার জ্যেষ্ঠ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।