রবিবার, ০৯ মার্চ ২০২৫, ০৮:৫২ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
লালমনিরহাটে সংবাদকর্মীদের ওপর হামলা-মামলার ঘটনায় মানববন্ধন প্রতিবাদ সমাবেশ তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ, যুবককে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে দিলো জনতা ওসির অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন, হামলায় পুলিশসহ আহত ৫ জন রংপুরের তারাগঞ্জে সাংবাদিক নাজিমের ওপর সন্ত্রাসী হামলা! লালমনিরহাটের আলোচিত হাসিনার কাটা মাথা উদ্ধার গ্রেপ্তার-১ ‎পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী প্রাইভেট পড়তে এসে শিক্ষক কর্তৃক ধর্ষনের স্বীকার জামিয়া উসমান গণী (রা.) মাদরাসার শিক্ষার্থীদের বিভাগীয় কৃতিত্ব যশোরের চৌগাছায় ছেলের হাতে পিতা খুন ফুলবাড়ীতে অবৈধ ইটভাটার চিমনি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিলো প্রশাসন কাজিপুরে বালু নিংড়ানো পানিতে ডুবে একই পরিবারের দুই শিশুর মৃত্যু 

নীতি সংশোধন: বিদেশিদের ভিসা দিতে কড়াকড়ি

রিপোর্টারের নাম : / ৫৯ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৪

কাজের অনুমতি না নিয়ে কোনো ধরনের বাধা-বিপত্তি ছাড়াই বাংলাদেশে কাজ করে যাচ্ছেন হাজার হাজার বিদেশি নাগরিক। অনেকে আবার জড়াচ্ছেন প্রতারণা ও অর্থসংক্রান্ত অপরাধে। একবার ঢুকে পড়ার পর ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও বছরের পর বছর অবস্থান করছেন অবৈধভাবে। ভিসার শ্রেণি পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে অবস্থান করছেন, এমন বিদেশির সংখ্যাও কম নয়। এ পরিস্থিতিতে অবৈধ অবস্থান ঠেকাতে বিদেশিদের ভিসা প্রদানে কঠোর হচ্ছে সরকার। এ জন্য বিদ্যমান ভিসা নীতিমালায় কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে।

ভিসা নীতিমালা সংশোধনের কাজটি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। জানতে চাইলে সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শাহানারা খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ২০০৬ সালের ভিসা নীতিমালাতেই চলছে। এই নীতিমালায় সংশোধনী চূড়ান্ত হয়েছে। এখন তা আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর করার অপেক্ষায়।’ তবে সরকারি একটি সূত্র বলছে, সর্বশেষ সংশোধিত ভিসা নীতিমালা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে কার্যকর না করা হলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা প্রয়োগ করা হচ্ছে।

ভিসা নীতিমালায় কী সমস্যা ছিল বা এটি পরিবর্তনের প্রয়োজন কেন পড়ল—এমন প্রশ্নে সরকারের এক যুগ্ম সচিব আজকের পত্রিকাকে বলেন, আগে যে কেউ বৈধ পথে দেশে ঢুকে খেয়ালখুশিমতো থাকতে পারতেন এবং কাজ করতেন। ব্যবসা, বিনিয়োগ ভিসা ও পর্যটক ভিসায় এসে কাজ করতেন অনেকে। এ জন্য অনুমতি নেওয়ার কোনো শর্তই ছিল না। এ কারণে অনেকে অনুমতির ধার ধারতেন না।

আবার কেউ কেউ বাংলাদেশে অবস্থান করেও ভিসার মেয়াদ ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে নিয়েছেন। আয়কর ফাঁকি দিতে অনেক বিদেশি নাগরিক এ-থ্রি ভিসা, বি-ভিসা কিংবা ট্যুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে এসে কাজ করছেন। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা এক প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজে এসে অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যাচ্ছেন।

নীতিমালায় কী সংশোধনী আনা হয়েছে, জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলছেন, পুরোনো নীতিমালা অনুযায়ী বাংলাদেশে অবস্থানকালে বিদেশিরা চাইলেই এক ভিসায় ঢুকে পড়ে আবার আবেদন করে ভিসার শ্রেণি পরিবর্তনের সুযোগ পেতেন। এখন এই জায়গাগুলো পরিষ্কার করে সংশোধনীর মাধ্যমে ভিসা কড়াকড়ি করা হচ্ছে। এর বাইরে কাজের জন্য কোনো বিদেশি এলে কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করবেন, কত দিন থাকবেন, কাজের অনুমতি আছে কি না, ভিসা চাওয়ার ধরন কী—সবই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে।

বর্তমানে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অবস্থান করলে ৩০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান আছে। সংশোধিত নীতিমালায় এই জরিমানার অঙ্ক বাড়ানো হচ্ছে। এককথায় ভিসা দেওয়ার এবং মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে আগের চেয়ে শক্ত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে বিদেশিদের।

হিতে বিপরীত হওয়ার শঙ্কা কূটনীতিকদের
স্থানীয় কূটনীতিক ও বিদেশিদের অনেকে মনে করেন, বাংলাদেশের ভিসা ব্যবস্থায় এমনিতেই যথেষ্ট কড়াকড়ি রয়েছে। বর্তমানে বেশির ভাগ বিদেশি রাজনৈতিক ব্যক্তি, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা, মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিকদের জন্য বাংলাদেশের ভিসা পাওয়া বেশ জটিল ও সময়সাপেক্ষ। এই অবস্থায় ভিসা প্রদানে আরও কড়াকড়ি হলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে।

ইউরোপের একটি দেশে বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রদূত বলেন, জনকূটনীতির অংশ হিসেবে বিদেশিদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য প্রায় সব দেশ ভিসাকে একটি ‘রাজনৈতিক পন্থা’ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। ভিসা দেওয়া এবং এর নবায়ন ব্যবস্থা জটিল করা হলে হিতে বিপরীত হওয়ার ঝুঁকি আছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশের ভিসা জটিলতা নিয়ে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং-সিক। গত ২৪ মার্চ রাজধানীর বারিধারায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘ভিসা পাওয়া এবং নবায়নের ক্ষেত্রে বেশ ঝামেলা হয় এমন দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ।’

কোরীয় এই রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘ভিসার মেয়াদ বাড়াতে এখন অনেক কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে। এখানে দুই হাজারের বেশি কোরিয়ার নাগরিক আছেন। কিন্তু তাঁদের ওয়ার্ক পারমিটের সঙ্গে ভিসার সামঞ্জস্য পাওয়া যাচ্ছে না।’

কড়াকড়ি শুরু
গত ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ইমিগ্রেশন শাখায় খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, দেশে কাজ করতে থাকা বিদেশিদের চাহিদার তুলনায় ভিসার মেয়াদ বাড়াচ্ছে না সরকার। তবে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে কাজ করতে আসা নাগরিকদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা গেছে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে অন্তত ৬ হাজার বিদেশি কাজ করছেন। সরকারি এই প্রকল্পে বিদেশিদের ভিসা নিয়ে কাজ করে রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান ‘ট্রেস্ট রোসেম’। সেখানে এই বিদেশিদের ভিসাসংক্রান্ত কাজ করেন ভিসা স্পেশালিস্ট মো. শাহিন। গত ২৮ মার্চ তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, সেদিন ৬৬ জন রাশিয়ার নাগরিক ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছেন। তাঁর দাবি, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমতি, সব নিয়মকানুন মানাতে এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পে বিদেশিদের সব ভিসা ঠিকঠাকমতো পেয়েছেন।

তবে সরকারি এই প্রকল্পের বাইরে ব্যতিক্রমও দেখা গেছে, বাংলাদেশে অবস্থানরত স্যামসাংয়ের ডেপুটি ম্যানেজার কোরিয়ার নাগরিক ইনচু কিমের পক্ষে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করলে তা গ্রহণ করা হয়নি। পরে ওয়ার্ক পারমিট ঠিক করে আবার সেদিন আবেদন করতে আসেন কোম্পানিটির ভিসা দেখভালের দায়িত্বে থাকা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা মতিউর রহমান বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠানের মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসার মেয়াদ বাড়াতে গেলে তা না করে জরিমানা নিয়ে এক্সিট ভিসা দিয়ে বের করে দেওয়া হচ্ছে।

প্রায় একই কথা বলেছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এসিআই গ্রুপের ভিসা সমন্বয়ক মো. তুহিন। এসিআইয়ের মৎস্য ও পশুর খাবারের প্রকল্পে ২০ জন জাপানি, চীনের চিকিৎসকসহ মোট ৬০ জন বিদেশি কাজ করেন। সেদিন তিনি তিনজনের ভিসার শ্রেণির পরিবর্তন করতে এসেছিলেন। তুহিনের দাবি, কয়েক বছর আগেও ভিসার শ্রেণি পরিবর্তন বা ফ্যামিলি ভিসা সহজে করা গেলেও এখন বিষয়গুলো জটিল করে ফেলা হয়েছে। আবেদন করলেও আর ভিসা মিলছে না।

অবশ্য বাংলাদেশে পড়তে আসা ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে কোনো জটিলতায় পড়তে হচ্ছে না। এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা অভিষেক নামের একজন ভারতীয় বলেন, একটানা বেশি সময়ের ভিসা না দিলেও ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে কোনো জটিলতায় পড়তে হয়নি তিনিসহ কয়েকজন সহপাঠীকে।

দেড় লাখ বিদেশিকে ভিসা দিয়েছে সরকার 
বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) ও সুরক্ষা সেবা বিভাগের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থানরত বৈধ বিদেশি নাগরিকদের সংখ্যা ১ লাখ ৭ হাজার ১৬৭ জন। তাঁদের মধ্যে ভারতীয় নাগরিক ৩৭ হাজার ৪৬৪ জন, যা অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি। ভারতের পরে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে চীন। দেশে চীনা নাগরিকের সংখ্যা ১১ হাজার ৪০৪ জন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যবসা ও বিনিয়োগসংক্রান্ত ভিসায় ১০ হাজার ৪৮৫ জন, চাকরিজীবী ভিসায় ১৪ হাজার ৩৯৯ জন, শিক্ষার্থী ভিসায় ৬ হাজার ৮২৭ জন এবং ট্যুরিস্ট ভিসায় আসেন ৭৫ হাজার ৪৫৬ জন।

বৈধ বিদেশি নাগরিকদের হিসাব থাকলেও দেশে অবৈধ বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা অনেক বলে দাবি করছে এসবি। পুলিশের এই শাখার ইমিগ্রেশন বিভাগের পদস্থ এক কর্মকর্তা জানান, দেশে অবৈধ বিদেশির সংখ্যা বৈধ বিদেশির কাছাকাছি। প্রায়ই অভিযান চালিয়ে অবৈধ বিদেশিদের আটক করে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে।

বাংলাদেশে কাজ করতে চাওয়া বিদেশিদের কাজের অনুমতি দেয় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। সংস্থাটির নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, বিদেশিদের ওপর নজর রাখতে সুরক্ষা সেবা বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বিডা, বেপজা, বেজা, হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ, এনজিও বিষয়ক ব্যুরো, এনএসআই, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রবেশযোগ্যতাসম্পন্ন একটি কেন্দ্রীয় অনলাইন ইন্টারঅপারেবল ডেটা সেন্টার তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভিসা নীতির দুর্বলতাগুলো ঠিক করার পাশাপাশি ডেটা সেন্টার ফলো করলে বিদেশি নাগরিকদের ওপর নজর রাখা যাবে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের বর্তমান সভাপতি হুমায়ূন কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ভিসাগুলো সব সময় বিনিয়োগবান্ধব হওয়া উচিত। আর যদি কোনো বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে ভিসা দিয়ে দিই, মেয়াদ বাড়াতে তো সমস্যা নেই। জটিলতাগুলো দূর করে ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা দরকার। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই রাষ্ট্রের স্বার্থ ও উন্নয়নের কথা বিবেচনা করতে হবে। দেশের ক্ষতি করে ভিসা সহজ করার দরকার নেই।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর