মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১:০০ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
লফস’র আয়োজনে খেলার মাঠ,পার্ক ও উম্মুক্ত স্থানের বাজেট বরাদ্দ বিষয়ক আলোচনা সভা সলঙ্গায় ধারালো ছুরির আঘাতে গুরুতর আহত যুবক কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শিক্ষা কার্যক্রম উদ্বধোন  সিংড়ায় সহপাঠীর আঘাতে স্কুলছাত্র নিহত নাটোরের বড়াইগ্রামে বিএসটিআইয়ের অভিযানে দুই বেকারি কারখানাকে জরিমানা লালমনিরহাটে কলেজের অধ্যক্ষ পদ নিয়ে সংঘর্ষ; যুবলীগ নেতা আটক! লালমনিরহাটে ডাকাত দল গ্রেফতার! কাজিপুরে ডেইরি ফার্মে দুর্ধর্ষ ডাকাতি; পুলিশের গড়িমসিতে ভিন্নখাতে প্রবাহিত হওয়ার শংকা সলঙ্গায় খড়ের পালায় আগুন থানায় অভিযোগ ভাষা শহিদদের স্মরণে বেনাপোল বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় কর্মসূচি

পুরো আসনের ভোট বাতিল করতে পারবে না ইসি

রিপোর্টারের নাম : / ৮১ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : শুক্রবার, ১৯ মে, ২০২৩

নির্বাচন চলাকালে কোনো ভোটকেন্দ্রে বড় ধরনের অনিয়ম, কারসাজি ও ভোট প্রক্রিয়ায় বাধা দেয়ার প্রমাণ পেলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সেই কেন্দ্রের ভোট বা ফল বাতিল করে পুনরায় ভোট গ্রহণের নির্দেশ দিতে পারবে। পুরো আসনের ভোট বাতিল করতে পারবে না ইসি। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), ১৯৭২-এ সংক্রান্ত বিধান রেখে সংশোধনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। তবে সংশোধনী প্রস্তাবে ইসি পুরো আসনের নির্বাচন বা ফল বাতিলের ক্ষমতা চেয়েছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন এসব তথ্য জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আরপিও সংশোধনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

এর আগে গত ২৮ মার্চ সংশোধনী প্রস্তাবটি নীতিগত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হয়েছিল। তাতে উল্লেখ ছিল, কোনো ভোটকেন্দ্রে, এমনকি পুরো নির্বাচনী এলাকার (আসন) ভোটে বড় ধরনের অনিয়ম, কারসাজি ও ভোটের প্রক্রিয়ায় বাধা দেয়ার প্রমাণ পেলে গেজেট প্রকাশ স্থগিত এবং ভোট বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্দেশ দিতে পারবে ইসি। সেই প্রস্তাবে সায় দেয়নি মন্ত্রিসভা। প্রস্তাব পুনর্গঠন করা সাপেক্ষে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। নতুন এই সংশোধনীর ফলে এখন আসনের পরিবর্তে কেন্দ্রের ভোট বাতিল করার ক্ষমতা পাবে ইসি। এ বছরের নভেম্বর থেকে আগামী বছরের জানুয়ারিতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগেই আরপিও সংশোধন করা হচ্ছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, শুধু এক বা একাধিক কেন্দ্রের ফলাফল নিয়ে কোনো প্রশ্ন বা অভিযোগ থাকলে শুধু সেই কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল বা স্থগিত করতে পারবে ইসি। কিন্তু পুরো ফলাফল বাতিলের সুযোগ নেই নির্বাচন কমিশনের। পেশিশক্তি বন্ধ করার জন্য বা যেকোনো কারণে নির্বাচন চলাকালে যেকোনো মুহূর্তে এক বা একাধিক কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করা যাবে। এ সময় সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিলেন এর আগে গাইবান্ধায় একটি আসনের উপনির্বাচনে পুরো আসনের নির্বাচন বাতিল করেছিল ইসি। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, আজকের মন্ত্রিসভার আলোচনার বিষয় নিয়েই থাকতে চান। তাতে যে বিধানগুলো গ্রহণ করা হয়েছে সেগুলো নিয়েই থাকতে চান তিনি। নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবগুলোই পর্যালোচনা করে মন্ত্রিসভা যে বিষয়গুলো যৌক্তিক বলে মনে করেছে এবং স্বচ্ছতার সাথে নির্বাচন পরিচালনায় সহায়ক হবে বলে মনে করেছে, সেগুলোই অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

মাহবুব হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন কোনো নির্বাচন চলাকালে বা তাদের যদি মনে হয় কোনো কেন্দ্রের নির্বাচনে সমস্যা হচ্ছে, তখন তারা ওই কেন্দ্রের, সেটি এক বা একাধিক হলে তা বাতিল বা স্থগিত করতে পারবে। কেন্দ্রের সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি। বলা হয়েছে এক বা একাধিক। এখানে পুরো আসনের নির্বাচন বাতিলের ব্যাপারে বলা হয়নি। এক বা একাধিক কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত বা বাতিলের সিদ্ধান্ত ভোট চলাকালে বা ভোট গণনার সময় দ্রুত তদন্ত করে হতে পারে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। আইনটি মন্ত্রিসভায় পাস হলেও সেটি সংসদে উন্মুক্ত আলোচনা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের সদস্যরা যেভাবে মনে করবেন সেভাবে হবে। সংসদীয় গণতন্ত্রের এটাই তো বড় সৌন্দর্য।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জাতীয় নির্বাচনে সংসদীয় আসনভিত্তিক রিটার্নিং কর্মকর্তা রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে একই ব্যক্তি একাধিক আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হতে পারবেন। বিদ্যমান আইনেও এই বিষয় আছে। বিদ্যমান আইনে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন প্রতিটি নির্বাচনী এলাকা থেকে কোনো সদস্য নির্বাচনের উদ্দেশ্যে ওই এলাকার জন্য একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করবে। কোনো ব্যক্তিকে দুই বা ততোধিক নির্বাচনী এলাকার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা যাবে। তবে সাধারণত জাতীয় নির্বাচনগুলোতে প্রতিটি জেলার সব ক’টি নির্বাচনী আসনের জন্য একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা হন। জেলা প্রশাসকেরাই (ডিসি) এই দায়িত্ব পালন করেন।
মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হার ৬৪.৮১ শতাংশ : চলতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত মন্ত্রিসভায় নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৬৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। গতকাল মন্ত্রিসভা বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে ২০২৩ সালের প্রথম ত্রৈমাসিক (জানুয়ারি-মার্চ) প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ছয়টি মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়। এতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ৫৪টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে ৩৫টি, বাস্তবায়নের হার ৬৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। ১৯টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। তিনি আরো জানান, গত তিন মাসে (জানুয়ারি থেকে মার্চ) মন্ত্রিসভা বৈঠকে নীতি বা কর্মকৌশল দু’টি, পাঁচটি চুক্তি বা প্রোটোকল অনুমোদিত হয়েছে। এ সময়ে সংসদে আইন পাস হয়েছে ১০টি।
তবে নীতিগত অনুমোদনের পর পড়ে থাকা আইনের খসড়াগুলো দ্রুত মন্ত্রিসভা বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গত তিন মাসের মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্তের রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয়। সেখানে দেখা গেছে, কয়েকটা মন্ত্রণালয়ের কিছু আইন নীতিগত অনুমোদন করা ছিল; কিন্তু সেগুলো এখনো চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আসেনি। সেগুলো যাতে দ্রুত নিয়ে আসে সে জন্য প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, বিষয়টি দেখার জন্য। আগামী সপ্তাহ থেকেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে বসব। তাদের কিভাবে সাপোর্ট দেয়া যায়, তারা যদি কোনো অসুবিধায় থাকে, সে জন্য আমার সাথে যেন আলোচনা করে। এটার জন্য আমাদের একটা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে আমরা এটা নিয়ে কাজ করব। মাহবুব হোসেন বলেন, বর্তমান সংসদের পঞ্চম বছর চলছে, যে সিদ্ধান্ত এ মন্ত্রিসভা থেকে নেয়া হয়েছে সেই সিদ্ধান্ত এ সরকার থাকা অবস্থায় কিন্তু সংসদে উপস্থাপন করতে হবে। সেগুলো সংসদ পাস করলে পাস হবে আর পাস না করলে পাস হবে না। সংসদের সিদ্ধান্ত আমাদের দরকার। এ জন্য যাতে করে দ্রুত সময়ের মধ্যে এটা উপস্থাপন করে সংসদের সিদ্ধান্ত আমরা নিতে পারি, বলেন তিনি।

অস্থাবর সম্পত্তিতে মিলবে ঋণসুবিধা : মন্ত্রিসভার বৈঠকে সুরক্ষিত লেনদেন (অস্থাবর সম্পত্তি) আইন, ২০২৩-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এই আইন পাস হলে অস্থাবর সম্পত্তির ভিত্তিতেও ঋণ নেয়া যাবে। মোট ১৬ ধরনের বিষয় উল্লেøখ করে দেয়া হয়েছে। যে অস্থাবর সম্পত্তির বিপরীতে ঋণ নেয়া হবে, সেই অস্থাবর সম্পত্তি আগে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের জন্য একটি অথরিটি হবে। সেখান থেকে নিবন্ধন নিয়ে যেকোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়া যাবে। মেধাস্বত্বও এই অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমাদের ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত ঋণ নিয়ে থাকে স্থাবর সম্পত্তির ভিত্তিতে। অস্থাবর যে সম্পত্তি আছে তার আওতায় ঋণ দেয়ার আমাদের কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান কাজ করে; কিন্তু তার আইনগত কোনো ভিত্তি ছিল না। সেই আইনগত ভিত্তি দিতেই আইনটি করা হচ্ছে। আগে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান শেয়ার বা এফডিআরের বিপরীতে ঋণ দিত। এর আইনগত কোনো ভিত্তি ছিল না। এখন এর আইনগত ভিত্তি দেয়া হলো।
গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি আইন ২০২৩-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (সংশোধন) আইন ২০২৩’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
মনোনয়ন গ্রহণ করা হলেও আপিল করা যাবে : বিদ্যমান আইনে শুধু রিটার্নিং কর্মকর্তা কারো মনোনয়নপত্র বাতিল করলে তার বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ আছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে আরপিওর যে খসড়াটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে, তাতে মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা হলেও সে বিষয়ে আপিল করার সুযোগ রাখা হয়েছে। অর্থাৎ, কোনো ব্যক্তির মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা হলো; কিন্তু কেউ মনে করলেন সেটি সঠিক হয়নি, তখন চাইলে সে বিষয়ে আপিল করা যাবে।

মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার আগের দিন ব্যাংকঋণ পরিশোধের সুযোগ : এতদিন প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সাত দিন আগে ব্যাংকঋণ ও বিভিন্ন পরিষেবার বিল পরিশোধের অনুলিপি জমা দিতে হতো। না হলে মনোনয়নপত্র বাতিল বলে গণ্য হতো। আরপিওর প্রস্তাবিত সংশোধনীতে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার আগের দিন পর্যন্ত এসব জমা দেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। আর প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সাথে টিআইএন সনদ এবং কত টাকা আয়কর জমা দেয়া হয়েছে, তার রসিদ জমা দিতে হবে। আগে এগুলো ছিল না। এতে প্রার্থীরা তাদের ব্যাংকঋণ, টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি বা সরকারের সেবা প্রদানকারী কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের বকেয়া বিল দেয়ার সময় অন্তত সাত দিন বেশি পাবেন। কারণ, বিদ্যমান আইনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সাত দিন আগে পরিশোধ করার বিধান আছে। এ ছাড়া নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব (গঠনতন্ত্রসহ) রাখার প্রতিশ্রুতি পূরণের মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে ২০২০ সাল পর্যন্ত আছে। প্রস্তাবিত আরপিও সংশোধনীতে গণমাধ্যমকর্মী ও পর্যবেক্ষকদের কাজে কেউ বাধা দিলে সর্বনিম্ন দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর