পুলিশের ভুলে জালটাকার অপরাধে ফেঁসে গেল অনার্স পড়ুয়া ৩য় বর্ষের ছাত্র!

লালমনিরহাটে জাল টাকার একটি মামলায় পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তার ভুলে কলেজ ছাত্রের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিলের অভিযোগ উঠেছে।
নিজের সন্তানকে মামলার অপবাদ থেকে রক্ষা করতে পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগি কলেজ ছাত্র জাহিদুল ইসলাম জুয়েলের বাবা আফাজ উদ্দিন। ভুক্তভোগি জাহিদুল ইসলাম জুয়েল লালমনিরহাট পৌরসভার খোচাবাড়ি ডাইলপট্টি এলাকার আফাজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি আদিতমারী সরকারী কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র।
অভিযোগ ও মামলা সুত্রে জানা গেছে, গত ২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর আদিতমারী উপজেলা সাপ্টিবাড়ি বাজারের মুদির দোকানদার রফিকুল ইসলামের দোকানে পন্য কিনতে গিয়ে জাল টাকাসহ এক যুবক আটক হন। এ সময় ওই যুবকের কাছ থেকে একটি এক হাজার ও ৬টি ৫শত টাকার জাল নোটসহ ৪হাজার টাকার জালনোট উদ্ধার করে পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয়রা।
এ ঘটনায় পরদিন ১২ ডিসেম্বর জাল টাকা সরবরাহ আইনে আটক যুবকের বিরুদ্ধে আদিতমারী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন মুদি দোকানদার রফিকুল ইসলাম। এ সময় আটক যুবক নিজের ঠিকানা গোপন করে প্রতিবেশি জাহিদুল ইসলাম জুয়েলের নাম ঠিকানা ব্যবহার করেন। সেক্ষেত্রে আটক যুবক নিজেকে জুয়েল হোসেন (২২), পিতার আফাজ উদ্দিন দাবি করেন।
মামলায় দুই মাস হাজতবাস করে আদালতের জামিনে মুক্তি নিয়ে গা ঢাকা দেন কৌশলী জাল টাকা সরবরাহ চক্রের ওই যুবক। এরই মধ্যে গত ২০২১ সালের ২৯ মার্চ জুয়েল হোসেনের বিরুদ্ধেই আমলি আদালত ২ এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা আদিতমারী থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) ওয়ালিউর রহমান। সেখানে তদন্ত কর্মকর্তা দাবি করেন, অভিযুক্ত জুয়েল হোসেন ভাসমান ভাবে বসবাস করায় স্থায়ী কোন ঠিকানা নেই। অথচ মামলা নথিভুক্তের সময় তার ঠিকানার সঠিকতা যাচাই করে সঠিকতা পেয়ে সদর থানা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পত্র দিয়েছেন বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ দিকে আটক যুবক জামিনে মুক্তি পেয়ে আত্নগোপন থাকায় মামলার নিয়মানুযায়ী আদালতে গড়হাজিরা থাকায় জুয়েল হোসেন নামে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন আদালত। গ্রেফতারী পরোয়ান খবর পেয়ে চমকে উঠেন জাহিদুল ইসলাম জুয়েলের পরিবার। পরবর্তিতে থানা ও আদালতে যোগাযোগ করে মামলার নথি তুলে জুয়েলের বাবা জানতে পারেন তার ছেলের নামে আদিতমারী থানায় গত ২০২০ সালে জাল টাকার মামলা (জিআর ২৩৯) হয়েছে এবং দুই মাস হাজতবাসও করেছেন। খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন প্রতিবেশী যুবক শত্রুতাবশত নিজের দায় অন্যের উপর চাপাতে পুলিশকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছে। পুলিশও সঠিকতা যাচাই না করেই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।
অবশেষে গত ২৫ অক্টোবর নিজের ছেলেকে নির্দোষ দাবি করে ঘটনাটি পুনরায় তদন্ত করে তার কলেজ পড়ুয়া ছেলেকে দায়মুক্ত করতে লালমনিরহাট পুলিশ সুপার বরাবরে আবেদন করেন জুয়েলের বাবা আফাজ উদ্দিন।
এরপর নড়েচড়ে বসে জেলা পুলিশ। পুনরায় তদন্তে নামেন পরিদর্শক পদবির একজন কর্মকর্তা। তারা প্রথম দিকে আটক যুবকের কারাগারে থাকা ছবি সংগ্রহ করে জাল জালিয়াতির বিষয়টি পরিস্কার হয় পুলিশের কাছে। অবশেষে মামলাটিতে নাম ঠিকানা সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু করে জেলা পুলিশ।
ভুক্তভোগী কলেজ ছাত্র জাহিদুল ইসলাম জুয়েল বলেন, মুল অপরাধি যে দুই মাস হাজতে ছিলেন সেই সময় আমি কলেজে নিয়মিত ক্লাশ করেছি। তবে বিষয়টি সংবাদিকদের না জানাতে বলেছে পুলিশ। তারা সংশোধনের দায়িত্ব নিয়েছে। তাই এ নিয়ে আর কিছু বলতে চাই না।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদিতমারী থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) ওয়ালিউর রহমান বলেন, এ মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তার বদলির কারনে আমি দায়িত্ব পাই। সেই সময়ে সদর থানার দেয়া ক্লিয়ারেন্স মুলে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। বিষয়টি সংশোধনযোগ্য এবং সংশোধন করতে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। তবে এটা নিয়ে সংবাদ পরিবেশন না করতেও অনুরোধ করেন তিনি।
লালমনিরহাট পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, জালটাকাসহ আটক যুবকের কারাগারের নম্বর অনুযায়ী ছবি সংগ্রহ করেছি। এটা নিয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে কথা বলেছি। সংশোধন করা হবে। একই সাথে মুল অভিযুক্তের অবস্থান সনাক্তেরও চেষ্টা করছি। একজন নিরাপরাধ ব্যাক্তি যাতে অপরাধির দায় নিয়ে হয়রানী না হয় সে ব্যাপারে আমরা সর্বদায় সজাগ রয়েছি।