মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫, ০৪:০৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
লালমনিরহাটে মাথা বিহীন মরদেহ উদ্ধার স্বামী ৩ দিনের রিমান্ডে! শ্রীপুরে চার বছরের শিশুর গায়ে সৎ বাবার গরম ছুরির ছ্যাঁকা যশোরের ঝিকরগাছায় জমি দখলকারীদের হামলায় মা-ছেলে জখম বেনাপোলে পাসপোর্টযাত্রীর জাল ভ্রমণকর সরবরাহের অভিযোগে আবারও শামিম আটক দেশব্যাপী নারী নিপীড়নের প্রতিবাদে বেনাপোল কলেজ ছাত্রদলের মানববন্ধন লালমনিরহাটে সংবাদকর্মীদের ওপর হামলা-মামলার ঘটনায় মানববন্ধন প্রতিবাদ সমাবেশ তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ, যুবককে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে দিলো জনতা ওসির অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন, হামলায় পুলিশসহ আহত ৫ জন রংপুরের তারাগঞ্জে সাংবাদিক নাজিমের ওপর সন্ত্রাসী হামলা! লালমনিরহাটের আলোচিত হাসিনার কাটা মাথা উদ্ধার গ্রেপ্তার-১

বহিঃশক্তির আক্রমণ মোকাবিলায় সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াচ্ছি: প্রধানমন্ত্রী

রিপোর্টারের নাম : / ১০৩ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ চাই না। দেশকে একটি শান্তিপূর্ণ দেশে রূপান্তরিত করতে চাই। আমরা বঙ্গবন্ধুর ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাসী। তবে বহিঃশক্তির যে কোনো আক্রমণ মোকাবিলায় সশস্ত্র বাহিনীকে সক্ষম করে গড়ে তুলতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে (ইবিআরসি) ‘ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট’-এর ‘দশম টাইগার্স পুনর্মিলনী’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সব সময় দেশ ও জনগণের পাশে আছে। যে কোনো দুর্যোগে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী তাদের পাশে দাঁড়ায়-শুধু দেশে নয়, বিদেশেও। যখনই বন্ধুপ্রতিম কোনো দেশে দুর্ঘটনা ঘটে, তখনই আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সেখানে যায় এবং উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণ ও সেবা দিয়ে থাকে। পাশাপাশি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে যাচ্ছে। এ সময় তিনি তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট আমার হৃদয়ের খুব কাছের। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শহিদ আমার দুই ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল এবং লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল এই রেজিমেন্টের সদস্য ছিল। তাই এই রেজিমেন্টের পুনর্মিলনীতে যোগ দেওয়া একদিকে আমার জন্য বেদনাদায়ক, অন্যদিকে আনন্দের।’

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে রেজিমেন্টের একটি চৌকশ দল রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। প্রধানমন্ত্রী সালাম গ্রহণ করেন এবং খোলা জিপে চড়ে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। এ সময় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ তার সঙ্গে ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে জাতির পিতা এদেশকে গড়ে তুলেছিলেন। সেসময় তিনি সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলেন এবং এই বাহিনীর আধুনিকায়নের পদক্ষেপ নেন। ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা কুমিল্লা সেনানিবাসে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির শুভ উদ্বোধন করেন এবং কম্বাইন্ড আর্মস স্কুল ও সেনাবাহিনীর প্রতিটি কোরের জন্য স্বতন্ত্র ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। তার শাসনামলে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঘাঁটি স্থাপন হয়। তিনি ভারত ও যুগোশ্লাভিয়া থেকে নৌবাহিনীর জন্য যুদ্ধজাহাজ সংগ্রহ করেন। ১৯৭৩ সালে সেসময়ের অত্যাধুনিক সুপারসনিক মিগ-২১ যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার, পরিবহণ বিমান, এয়ার ডিফেন্স রাডার বিমানবাহিনীতে যুক্ত করেন। তিনি ১৯৭৪ সালেই একটি প্রতিরক্ষানীতি প্রণয়ন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৫ সালে আমাদের বিজয়ের ইতিহাস কলঙ্কলিপ্ত হয়। জাতির পিতাকে হত্যার পর উন্নয়ন অগ্রযাত্রা থেমে যায় এবং আমাদের স্বাধীনতার আদর্শ প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়।’

শেখ হাসিনা বলেন, অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে একাত্তরের পরাজিত শক্তি এবং পঁচাত্তরের ঘাতকরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। এরপর তারা মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা মুছে ফেলতে উঠেপড়ে লাগে। জাতির পিতার ঐতিহাসিক ভাষণ এবং জয় বাংলা স্লোগানও নিষিদ্ধ হয়। একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে মানুষ আবার সেই সত্য ইতিহাস জানার সুযোগ পায়। পাশাপাশি ওই সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে সুপ্রশিক্ষিত এবং শক্তিশালী ও আধুনিকায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

তিনি বলেন, প্রথম মেয়াদে সরকারে থাকার সময় ১৯৯৮ সালে ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ’ এবং ‘মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’, ১৯৯৯ সালে ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং’ এবং ‘আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করি এবং প্রথম মহিলা সৈনিক ভর্তির যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে পুনরায় সরকার গঠনের পর প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন যুগোপযোগী সামরিক বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করছি। আমরা ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর আধুনিকায়ন, সম্প্রসারণ, উন্নয়ন এবং ২০১৬ সালে ‘বাংলাদেশ পিস বিল্ডিং সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করেছি। জাতির পিতা প্রণীত প্রতিরক্ষানীতিকে যুগোপযোগী করে ‘জাতীয় প্রতিরক্ষানীতি, ২০১৮’ প্রণয়ন করেছি। অ্যারোস্পেস ও এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং সিএমএইচগুলোকে অত্যাধুনিক হাসপাতালে রূপান্তরিত করেছি। দেশের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সুদৃঢ় করতে সিলেটে ১৭ পদাতিক ডিভিশন, রামুতে ১০ পদাতিক ডিভিশন এবং বরিশালে ৭ পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। গত ৪ বছরে বিভিন্ন ফরমেশনের অধীনে ৩টি ব্রিগেড এবং ছোট-বড় ৫৮টি ইউনিট প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সম্প্রতি মাওয়া-জাজিরায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শেখ রাসেল সেনানিবাস এবং মিঠামইন, রাজবাড়ী ও ত্রিশালে নতুন সেনানিবাস স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে আর্মি এভিয়েশনের ফরোয়ার্ড বেস এবং লালমনিরহাটে এভিয়েশন স্কুল নির্মাণের কাজও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পাশাপাশি সেনাবাহিনীতে নতুন কম্পোজিট ব্রিগেড ও প্যারা কমান্ডো ব্রিগেড যুক্তকরণ এবং প্রতিটি বাহিনীর জন্য অত্যাধুনিক ও যুগোপযোগী অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সৌম্য, শক্তি, ক্ষিপ্রতা’-এ মূলমন্ত্রে দীক্ষিত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবময় এবং ঐহিত্যপূর্ণ। দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আমাদের এই রেজিমেন্টের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন কাজে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। সেজন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। এ সময় তিনি গৃহহীন-ভূমিহীনকে ঘর করে দেওয়ার আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়ন এবং দেশের অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজে সশস্ত্র বাহিনীর অংশগ্রহণের প্রশংসা করেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর