সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫, ০৬:৪৮ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
যশোরের ঝিকরগাছায় জমি দখলকারীদের হামলায় মা-ছেলে জখম বেনাপোলে পাসপোর্টযাত্রীর জাল ভ্রমণকর সরবরাহের অভিযোগে আবারও শামিম আটক দেশব্যাপী নারী নিপীড়নের প্রতিবাদে বেনাপোল কলেজ ছাত্রদলের মানববন্ধন লালমনিরহাটে সংবাদকর্মীদের ওপর হামলা-মামলার ঘটনায় মানববন্ধন প্রতিবাদ সমাবেশ তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ, যুবককে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে দিলো জনতা ওসির অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন, হামলায় পুলিশসহ আহত ৫ জন রংপুরের তারাগঞ্জে সাংবাদিক নাজিমের ওপর সন্ত্রাসী হামলা! লালমনিরহাটের আলোচিত হাসিনার কাটা মাথা উদ্ধার গ্রেপ্তার-১ ‎পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী প্রাইভেট পড়তে এসে শিক্ষক কর্তৃক ধর্ষনের স্বীকার জামিয়া উসমান গণী (রা.) মাদরাসার শিক্ষার্থীদের বিভাগীয় কৃতিত্ব

‘বাংলা ভাষা অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ফসল’

রিপোর্টারের নাম : / ৬৬ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

বাংলা ভাষা অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ফসল। ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদান অনেকে বিভিন্ন সময়ে বিকৃত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ইতিহাস এখন নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্ব পুঁজিবাদ তৃতীয় বিশ্বের ভাষা পছন্দ করে না। অর্থনৈতিক ভিত শক্ত না হলে বাংলা ভাষা শক্তি লাভ করবে না। জাপান, ফ্রান্স তাদের অর্থনৈতিক শক্তির কারণে ভাষাকে শক্তিশালী করতে পেরেছেন।

শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘আমার ভাষা আমার শক্তি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সামাজিক সংগঠন ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা বিশিষ্ট কবি ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, সাধারণ মানুষের ভাষা থেকে বাংলা ভাষার উদ্ভব হয়েছে এবং তাদের মাধ্যমে এই ভাষা এখনো বেঁচে আছে। বাংলাভাষা অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ফসল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ নামে একটি দেশের জন্ম হয়েছে। তিনি ভাষার জন্যও আন্দোলন করে বহুবার জেল খেটেছেন। তাইতো তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী।

আজ জাতিসত্তার দিক থেকে বাংলাভাষা পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তর ভাষা। বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমাদের লড়তে হবে। বাংলা ভাষাকে আরো উচ্চতায় নিতে হলে বাংলার সব লেখা বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদের দিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে একটি নীতিমালা তৈরি করতে হবে যেন বাংলার ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন সাইনবোর্ডে ইংরেজি লেখার আধিক্য এখনো রয়েছে। আর বাংলা অক্ষরগুলো খুবই ছোট আকারে লেখা থাকে। এটি অবশ্যই দুঃখজনক। কলকাতায় এই অবস্থা আরো ভয়াবহ।

তিনি আরো বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পর বাংলা ভাষাকে আর কেউ ওই স্তরে নিয়ে যেতে পারেননি। শেখ হাসিনার উদ্যোগে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রত্যেক জাতির কাছে মাতৃভাষা তার শক্তি। অসস্প্রদায়িক সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। বাংলা ভাষা অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ফসল।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. পবিত্র সরকার বলেন, বহু আগে থেকেই বাংলা ভাষাকে নিয়ে একটা শ্রেণিভেদ ছিলো। কিন্তু নানান বাঁধার পরও সাধারণ মানুষ এই ভাষাকে টিকেয়ে রেখেছেন। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে স্বীকৃতি অর্জন করায় একটি বৈশ্বিক উপাদান যুক্ত হয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশ তাদের নিজ ভাষায় উচ্চশিক্ষা দেয়। বাংলাকেও উচ্চশিক্ষা দেয়ার পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। বাংলা ভাষাকে ভালবেসে আমাদের শক্তি দিতে হবে। এভাবেই মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে। এক সময় বলা হতো বাংলায় ধর্মগ্রন্থ পড়লে নরকে যাবে। এখনো একটি শ্রেণি বিশেষ ভাষাকে এমন অবস্থানে পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর। তবে ব্যবসায়িক বিশ্বায়নে বাংলাকে তুলে ধরলে শঙ্কা অনেকটাই দূর হবে। অনেক বৈসাদৃশ্যের পরও বাংলাকে পৃথিবী এখন চিনেছে। বাংলা এখনো সেই অবস্থায় যায় নি। এই ভাষাকে ভালোবাসতে হবে।

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, অর্থনৈতিক ভিত শক্ত না হলে বাংলা ভাষা শক্তি লাভ করবে না। জাপান, ফ্রান্স তাদের অর্থনৈতিক শক্তির কারণে ভাষাকে শক্তিশালী করতে পেরেছেন। বাংলাদেশকেও বাংলা ভাষাকে শক্তিশালী করতে হলে অর্থনৈতিক শক্তি বাড়াতে হবে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যদি ১৮৫৭ সালে বাংলায় আইন লিখতে পারে, তাহলে এখন কেন বাংলায় আইন লেখা হচ্ছে না। বাংলাকে কর্মের ও জীবিকার ভাষা করতে হবে, তা না হলে বিশ্বে বাংলা ভাষার মর্যাদা টিকবে না। বাংলা ভাষাকে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তথ্য প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। বিশ্ব পুঁজিবাদ তৃতীয় বিশ্বের ভাষাকে মেনে নিতে চায় না।

আমাদের সুবিধা যে, নিজের টাকায় আমরা পদ্মাসেতু করছি। এ কারণে দেশের মান বেড়েছে বিদেশে। অর্থনীতি শক্তিশালী হলে ভাষার মান এমনিতেই শক্তিশালী হয়, অনেক বেড়ে যায়।

বাংলা ব্যবহারে অনীহার নানান ইস্যু ও কারণ তুলে ধরে প্রথিতযশা এই শিক্ষাবিদ বলেন, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা শিখেছিল। এমনকি তারা বাংলায় অনুবাদও করেছিল। তার মানে ইংরেজরা বাংলাকে গুরুত্ব দিয়েছিল অনেক বছর আগেই। অথচ এখন তার উল্টোটা ঘটছে।

সভাপতির বক্তব্যে সম্প্রীতি বাংলাদেশের সভাপতি পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করেই আজ সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হচ্ছে। বিশ্ব আমাদের কাছ থেকে শিখেছে নিজের ভাষা দিয়ে একটি জাতি কিভাবে মাতৃভাষার মর্যাদা বাড়িয়েছে। শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলা ভাষাকে মর্যাদা দেয়ার জন্য পাকিস্তান গণপরিষদে দাড়িয়ে দাবী তুলেছিলেন। এজন্য তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলন ও ৭১ সালের স্বাধীনতার সংগ্রামে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে আমাদের একটি দেশ দিয়ে গেছেন। বাংলার গুরুত্ব অবশ্যই পৃথিবীতে আছে। নইলে শেখ মুজিব এতো বড় সাহস দেখালেন কি করে? বাংলা ভাষার ওপর সবসময় আঘাত এসেছে। তা আবার উতরাতেও পেরেছে এই বাঙালি। মাটির জন্য যুদ্ধ করা বাঙালি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সভ্যতা রক্ষা করে চলেছে। সুতরাং মাটি সংলগ্ন সভ্যতা অটুট রাখতে বাংলা রক্ষা অনিবার্য হয়ে পড়েছে।

খ্যাতনামা লিভার বিশেষজ্ঞ ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নিল বলেন, পাকিস্তানী শাসনামলে নয়, বাংলা ভাষা শত শত বছর ধরে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এটি হিন্দু না মুসলমানদের ভাষা তা নিয়েও তর্ক ছিলো। মূলত বাংলাই ছিলো সাধারণ মানুষের ভাষা। যা এখনো সাধারণ মানুষের মধ্যে বেঁচে আছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে আরো বক্তব্য রাখেন- বিশিষ্ট কথাকার অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী, সাবেক সচিব নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, শিক্ষাবিদ রেভারেন্ড মার্টিন অধিকারী, বঙ্গবন্ধু গবেষক হাফিজুর রহমান, শারমীন আফরোজ আইরীন প্রমুখ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর