সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ০৩:০৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
দেশে দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে কোরআনের আইন চালু করতে হবে- রফিকুল ইসলাম খান সিরাজগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সকল শহীদের স্মরণে কোরআন প্রতিযোগিতা ও ইফতার দোয়া মাহফিল বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে কুড়িগ্রামে সংলাপ শিশু সুরক্ষা এবং শিশু অধিকার সচেতনতা বৃদ্ধির সংবেদনশীলতা সভা অনুষ্ঠিত সুন্দরগঞ্জের মজুমদারহাটে পিকআপ ভর্তি চাল জনতার হাতে আটক লালমনিরহাটে টিনের চালা কেটে দোকানে দুর্ধর্ষ চুরি! কাজিপুরে চাঁদা না দেয়ায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন; পুড়ে ছাই ১৫ লক্ষ টাকার মালামাল অধ্যক্ষ কতৃক শিক্ষার্থীকে কুপ্রস্তাব বিচার চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ লালমনিরহাটে দাদন ব্যবসায়ীর রাতভর নির্যাতন সকালে দিনমজুরের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার! ভালুকায় চাঁদাবাজির প্রতিবাদে মানববন্ধন ও মহাসড়ক অবরোধ

রিজার্ভের অর্থ ফেরতের পথে এক ধাপ অগ্রগতি

রিপোর্টারের নাম : / ১২৬ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৩

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের চুরি হওয়া অর্থ ফেরত পাওয়ার প্রক্রিয়ায় বলার মতো কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক আদালত সেখানে মামলাটি চলার পক্ষে রায় দিয়েছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের করা মামলার বিবাদীদের সঙ্গে মধ্যস্থতার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে গচ্ছিত ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা। সেখান থেকে সাইবার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ৮১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় আন্তর্জাতিক প্রতারকচক্র। অর্থ ফেরত পেতে বাংলাদেশ নিউ ইয়র্ক স্টেট কোর্টে মামলা করে। মামলায় ফিলিপাইনের বেসরকারি খাতের আরসিবিসি ব্যাংক, কিম অংসহ ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আসামি করা হয়।

বিবাদীদের মধ্যে ছয়জন এই মামলা নিউ ইয়র্ক স্টেট আদালতে চলতে পারে না দাবি করে তা বাতিলের জন্য দুটি আবেদন করেছিলেন। আদালত গত ১৩ জানুয়ারি তাঁদের আবেদন খারিজ করে দেন এবং অভিযুক্তদের আগামী ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জবাব দিতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে বাদী ও বিবাদীদের মধ্যে মধ্যস্থতার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

এর মাধ্যমে রিজার্ভের চুরি হওয়া অর্থ ফেরত আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে।

রিজার্ভ চুরির এই মামলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি। এই রায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি গতকাল বলেন, ‘রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে এখন মামলাটি নিউ ইয়র্ক আদালতে চলতে আর কোনো বাধা রইল না। কারণ নিউ ইয়র্কের আদালতের এখতিয়ারকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন আরসিবিসি, কিম অংসহ অভিযুক্তরা। তাঁদের মামলাটি বাতিলের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন নিউ ইয়র্কের সুপ্রিম কোর্ট। তাই এখন আমাদের মামলা চলবে।’

আজমালুল হোসেন কিউসি বলেন, ‘আদালত নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সালিস মীমাংসা (মেডিয়েশন) করার জন্য। এটা সেখানে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এখন যেহেতু মামলার গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাই আমরা মধ্যস্থতায় যাব। দেখব সমঝোতার মাধ্যমে টাকা ফেরত পাওয়া যায় কি না। তা না হলে আমাদের মামলা চলবে। এতে সময় একটু বেশি লাগবে। কিন্তু আমাদের যে সাক্ষ্য-প্রমাণ আছে তাতে আমাদের অবস্থান অনেক শক্তিশালী।’

আজমালুল হোসেন কিউসি বলেন, ‘আমাদের মামলার বিবাদী পক্ষ কিম অং, আরসিবিসি ও আরসিবিসির জড়িত কর্মকর্তাদের সঙ্গে মীমাংসা বৈঠক হবে। যদি তাঁরা আমাদের টাকা দিয়ে দেন তাহলে আমরা মামলা তুলে নেব। তা না হলে আমরা মামলা চালিয়ে যাবে। মূলত আমরা আদালত থেকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সবুজ সংকেত পেয়েছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে এই আইনজীবী বলেন, ‘মেডিয়েশনের মাধ্যমে সমঝোতা হলে খুব দ্রুতই টাকা পাওয়া যাবো। আর যদি আদালতের মাধ্যমে হয় তাতে সময় লাগবে। কিন্তু সেখানে ক্ষতিপূরণসহ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।’

অর্থ উদ্ধারে মামলা যেভাবে : ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে (ফেড) রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ এক হাজার ৬২৩ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১০ কোটি টাকা) চুরির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে দুই কোটি ডলার শ্রীলঙ্কা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি আট কোটি ডলারের বেশি ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংক হয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে চলে যায়। ওই অর্থ এখনো ফেরত পায়নি বাংলাদেশ।

ওই অর্থ উদ্ধারে ২০১৯ সালের ২ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে আরসিবিসিসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে বছরের ৬ মার্চ ফিলিপাইনের সিভিল কোর্টে আরসিবিসি পাল্টা মানহানির মামলা করে।

বিএফআইইউয়ের বিবৃতি : বিএফআইইউ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর দ্য সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউ ইয়র্ক বা ফেডারেল আদালতে ফিলিপাইনের বেসরকারি খাতের ব্যাংক আরসিবিসিসহ ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই মামলা বাতিলে সংশ্লিষ্ট আদালতে আবেদন করে আরসিবিসিসহ ছয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। আইনি প্রক্রিয়া শেষে ফেডারেল আদালত ২০২০ সালের ২০ মার্চ মামলা বাতিলের ওই আবেদন খারিজ করে মামলাটি ফেডারেল আদালতের বদলে স্টেট কোর্টে পরিচালনার নির্দেশ দেন।

ফেডারেল আদালতের ওই নির্দেশনার পর ২০২০ সালের ২৭ মে নিউ ইয়র্কের সুপ্রিম কোর্ট তথা ডিস্ট্রিক্ট আদালতে নতুন করে মামলা করে বাংলাদেশ। নতুন আদালতেও মামলা বাতিলের আবেদন করে আরসিবিসিসহ ছয় আসামি। তাদের ওই আবেদনের ওপর একাধিক দফায় শুনানি হয়।

সর্বশেষ ১৩ জানুয়ারি নিউ ইয়র্ক ডিস্ট্রিক্ট আদালত যে রায় দিয়েছেন তাতে বলা হয়েছে, নিউ ইয়র্কের ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ক্ষেত্রে আরসিবিসির উদ্দেশ্যপ্রণোদিত যোগসাজশ ছিল। আরসিবিসির নিউ ইয়র্কের হিসাব এবং আরসিবিসির ফিলিপাইনের অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের সহযোগিতা না থাকলে নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে ওই অর্থ অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ ছিল না।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, ‘রায় যেহেতু আমাদের পক্ষে এসেছে, তাই আমরা অর্থ ফিরে পাওয়ার ব্যপারে আশাবাদী।’ তিনি আরো বলেন, এখন নিউ ইয়র্কে নিয়োজিত বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনি প্রতিষ্ঠান মধ্যস্থতার বিষয়টি পর্যালোচনা করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে মামলা পরিচালনার দায়িত্ব পায় যুক্তরাষ্ট্রের আইনি প্রতিষ্ঠান কোজেন ও’কনর।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর