সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একক ভর্তি পরীক্ষা আগামী বছর থেকে

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, একক ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের জন্য ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি (এনটিএ) গঠন করা হবে। এ পরীক্ষা আয়োজনে এখন থেকেই সংশ্লিষ্টদের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শিগগিরই এ বিষয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হবে।
কভিড মহামারিতে ভর্তীচ্ছুদের দুর্ভোগ এড়াতে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। শুরুতে ১৯টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তে আসে। পরবর্তী সময়ে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ গুচ্ছে অংশ নেয়। তবে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে গুচ্ছে আসতে রাজি করানো যায়নি।
অন্যদিকে শুরু থেকে গুচ্ছ পদ্ধতির নেতৃত্বে থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এবার এই প্রক্রিয়ায় না থাকার জোর দাবি জানিয়ে আসছেন। তাঁদের ভাষ্য, গুচ্ছ পদ্ধতিতে তাঁরা কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার্থী পাচ্ছেন না। গুচ্ছ থেকে বের হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরুর দাবিতে গতকাল সোমবার মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। মানববন্ধন শেষে কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটি গঠনের লক্ষ্যে উপাচার্যকক্ষে ফ্লোরে বসে অবস্থান নেন শিক্ষকরা। সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে চার শতাধিক শিক্ষক কালোব্যাজ পরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। পরে তাঁরা নিজস্ব ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের দাবিতে উপাচার্যের রুমে অবস্থান নেন।
একক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা, স্বাতন্ত্র্য, স্বায়ত্তশাসন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ভর্তি পরীক্ষা অন্তর্ভুক্তিমূলক করা হবে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তু এর অন্তর্ভুক্ত থাকবে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের স্বার্থে একক ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
ইউজিসি চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে ভর্তি পরীক্ষা হলে স্বল্পসময়ের মধ্যে পাঠদান শুরু করা যাবে। একক ভর্তি পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করা গেলে সবার কাছে এটি গ্রহণযোগ্যতা পাবে। একক ভর্তি পরীক্ষার সফলতা উচ্চশিক্ষায় বিশাল একটি অর্জন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন কমিশনের সদস্য ড. মুহাম্মদ আলমগীর এবং একক ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ড. দিল আফরোজা বেগম।
সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে একক ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠান বিষয়ে একমত পোষণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামাল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য লুত্ফুল হাসান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মশিউর রহমান, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি ও ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. হাবিবুর রহমান।
গুচ্ছে না থাকার দাবি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের : গতকাল মানববন্ধনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতারা বলেন, ‘গুচ্ছ এমন একটি প্রক্রিয়া, যা কোনো গবেষণা ছাড়াই আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই চাপিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা কারো নেই। আর সবচেয়ে লজ্জার বিষয় হলো গত ১৫ মার্চ একাডেমিক কাউন্সিলে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত হয়, সে সিদ্ধান্তগুলো কার্য বিবরণে বিকৃতভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে গুচ্ছে অংশগ্রহণের ফলে আমাদের সেশনজট তৈরি হয়েছে।’
শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি জাকারিয়া মিয়া বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইন আছে সে অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষা নিতে চাই। একাডেমিক কাউন্সিলে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা উপেক্ষা করে যদি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবারও গুচ্ছে যায় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অমান্যের জন্য উচ্চ আদালতে যাওয়ার প্রয়োজন হলে সেখানেই যাব।’