সাঘাটা উপজেলা খাদ্য গুদাম সিলগালা
সাঘাটা উপজেলা সরকারি খাদ্য গুদামে রক্ষিত চালের হিসাব দিতে নয়ছয় করছেন খাদ্য গুদামের পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জিয়া। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ ওঠার পর দাপ্তরিক বদলির আদেশ আসলেও নতুন কর্মকর্তাকে হিসাব বুঝে দিচ্ছেন না তিনি।
গুদামে সংরক্ষিত চাল প্রায় ৫০ টন ঘাটতি বলে সূত্রে জানা গেছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গুদাম পরিদর্শন করে উপজেলার ৫টি গুদাম সিলগালা করেছে। সদ্য জয়েন করা (দায়িত্ব বুঝে পাননি এখনো) সাঘাটা উপজেলার খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা পারভেজ হোসেন জানান, গোডাউনে রাখা মালামাল সংক্রান্ত হিসাবে অসঙ্গতির কারণে ৫টি গুদাম সিলগালা করে রাখা হয়েছে। এদিকে চালের হিসাব মেলাতে ব্যর্থ হয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জিয়া ৪ মিল মালিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে থানায়।
মিলাররা বলছে ওই কর্মকর্তা অসৎ উপায়ে দীর্ঘদিন ধরে গুদামের চাল বাইরে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ফলে বদলির সময় হিসাব বুঝে দিতে গিয়ে গুমোর ফাঁস হয়ে গেছে। মিলারদের অভিযোগ ওই কর্মকর্তা বিভিন্ন সময় মিলারদের হয়রানি করেছে। টাকার বিনিময়ে খাওয়ার অযোগ্য চাল গুদামে কিনেছেন।
বিষয়টি নিবিড় ভাবে তদন্ত করছে সাঘাটা উপজেলা প্রশাসন। সাঘাটা উপজেলা মিল মালিক সমিতির সভাপতি ও সোহান চাল কলের মালিক আব্দুল হালিম জানান, সাঘাটা উপজেলার মোট ৫টি খাদ্য গুদামের সবক’টি সিলগালা করেছেন প্রশাসন।
গত বৃহস্পতিবার দিনভর গোডাউনের রাখা চাল হিসাব করলে প্রায় ৫৯ টন চাল কম ছিল। তাই জেলা খাদ্য কর্মকর্তা সব কয়টি গুদাম সিলগালা করেন। ফলে আমাদের গোডাউলে চাল ক্রয়-বিক্রি বন্ধ আছে। লিখন চাল কলের স্বত্বাধিকারী মিলন আহম্মেদ, মোল্লা চাল কলের মালিক শরিফুল ইসলাম শাহিনুর এবং সাঘাটার নাহার চাল কলের আব্দুল মান্নান জানান, সাঘাটা উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জিয়া অফিস চলাকালীন সময়ে অফিসে না বসে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াতো। এজন্য আমরা সময়মতো চাল দিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হই। ওই কর্মকর্তা বদলির আদেশ আসার পরে আমরা জানতে পারি সরকারি ভাবে বরাদ্দকৃত টাকার চেয়ে গোডাউনে চাল কম আছে। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে আমাদের বেশ কয়েকজন মিল মালিকের নামে মামলা দিয়েছে ওই কর্মকর্তা।
তিনি মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, চালকল মালিকদের অগ্রিম টাকা দেয়া হয়েছে। আসলে সরকারি গোডাউনে চাল লেনদেনে অগ্রিম টাকা পরিশোধের কোনো বিধান নেই। সরকারি গোডাউনে আগে চাল দিতে হয়। চাল যাচাই-বাছাই হওয়ার পর ওজন এবং গুণগত মান ঠিক থাকলে পরে টাকা পরিশোধ করে অফিস। তিনি কীভাবে মিলারদের অগ্রিম টাকা পরিশোধ করলেন এটা কারোই মাথায় আসছে না।
মিলাররা অভিযোগ করে বলেন, এই কর্মকর্তা অতিরিক্ত টাকা ছাড়া সরকারি গোডাউনে চাল নিতো না। টাকা দিলে পচা চাল ভালো হিসেবে চালাতেন। আর টাকা না দিলে ভালো চাল খারাপ বলে ফেরত দিতেন। ওই কর্মকর্তার অনিয়মের ফলে বর্তমানে গোডাউন সিলগালা হয়ে বন্ধ আছে। ফলে উপজেলার চালকল মালিক এবং শ্রমিকরা বিপাকে পড়েছেন।
আমরা ওই কর্তকর্তার বিচার চাই এবং মিলারদের নামে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার চাই। শিপন ট্রেডার্সের মালিক মাশিউর রহমান মোল্লা এবং সাইফ চালকলের মোখছেদুর রহমান জানান, খাদ্য কর্মকর্তা নেশাগ্রস্ত। কখন সারাদিন গোডাউনে না থেকে তেলিয়ান বিলের ধারে মাদক সেবন করতেন। আর সারাদিন বহিরাগতদের নিয়ে সরকারি খাদ্য গুদাম কার্যালয়ে আমোদ ফুর্তি করতেন। গত কয়েক মাসে ওই কর্মকর্তা গোডাউনের শ্রমিক সর্দার শহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগসাজশ করে সরকারি চাল বাইরে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
বিষয়টি গোপন থাকলেও কর্মকর্তার বদলির আদেশ আসায় নিজে বাঁচতে মিলারদের নামে মিথ্য মামলা দিয়েছেন। মোকছেদ আরও জানায়, ১৬ই আগস্ট তার ছেলেকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিয়ে যায়। সে এখনো ঢাকাতেই অবস্থান করছেন। আমার সঙ্গে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার কোনো বাকবিতণ্ডা তো দূরের কথা দেখাই হয়নি। উল্টো আমাকে আসামি করা হয়েছে। এই কর্মকর্তা অনিয়ম তদন্তে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
অভিযুক্ত সাঘাটা উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে তিনি ৪ মিলারের নামে মামলায় উল্লেখ করেছেন তাদের সঙ্গে মোট ৫২ টন চাল ক্রয়ের চুক্তি হয়। সে অনুযায়ী ৪৯.২৫ টন চাল মিলাররা গুদামে দিয়েছেন। ওই চালগুলো গুদামে না উঠিয়ে পাশে লেবারদের রুমে রাখেন এবং বিল প্রদান করেন। পরে তিনি দেখতে পান চালগুলো নষ্ট। চালগুলো আবার তাদের ফেরত দেয়া হয়েছে। মূলত সেই চালগুলোই গুদামে হিসাবের চেয়ে ঘাটতি হয়ে আছে।
সদ্য জয়েন করা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা পারভেজ হোসেন জানান, ‘আমি কয়েকদিন আগে সাঘাটার বোনারপাড়া খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা হিসেবে জয়েন করেছি। গত ১৭ তারিখ আমাকে দায়িত্ব বুঝে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমাকে বুঝিয়ে দেয়নি। পরে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উপস্থিতিতে গত ১৮ই আগস্ট আমাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা হলেও খাদ্য গোডাউনে রাখা মালামালের হিসাবে অসঙ্গতির কারণে আমাকে দায়িত্ব বুঝে দেয়া হয়নি। পরে ৫টি গুদাম সিলগলা করে রাখেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এখন আমি প্রতিদিন অফিসে যাতায়াত করি মাত্র। বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তফা শাহীন সরদার এবং গাইবান্ধা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা অন্তরা মল্লিকের সঙ্গে দিনব্যাপী মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তারা কেউই ফোন রিসিভ করেননি। পরে তাদের মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তা দিলেও তাদের পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।