সিরাজগঞ্জে শিক্ষার্থীকে গুলির ঘটনায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে ২ মামলা
সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে আরাফাত আমিন তমাল নামের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে গুলি করার ঘটনায় শিক্ষক ডাঃ রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা ও অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে দুটি মামলা হয়েছে। তিনি ওই কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক।
অন্য দিকে গুলিবিদ্ধ তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন (তমাল) বগুড়া শহরের নাটাইপাড়া ধানসিঁড়ি এলাকার আবদুল্লাহ আল আমিনের ছেলে।
সোমবার (৪ মার্চ) দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা মোঃ আব্দুল্লাহ আল আমিন বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা করেন। অপরদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলা করা হয়েছে।
অভিযুক্ত শিক্ষক ডাঃ রায়হান শরীফের শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার( ৫ মার্চ) ১১ বেলার দিকে সিরাজগঞ্জ-বগুড়া আঞ্চলিক সড়কে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনের ফলে গাড়ি আটকে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন গাড়িচালক ও পথ যাত্রীরা। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা জানান, রায়হান শরীফ একজন খারাপ চরিত্রের ডাক্তার, তিনি ডাক্তার নামের কলঙ্ক, যতক্ষণ না পর্যন্ত তার বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন সনদ বাতিল না হয় এবং তাকে মেডিকেল কলেজ থেকে প্রত্যাহার করা না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
এদিকে পুলিশ জানিয়েছেন, অস্ত্রের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ ছিল ডাঃ রায়হান শরীফের। তিনি একটি বিদেশি পিস্তল কিনেছিলেন কয়েক লাখ টাকায়। এ সময় পুলিশ রায়হান শরীফের হেফাজত থেকে সেভেন পয়েন্ট ফাইভ সিক্স বোরের অত্যাধুনিক দু’টি বিদেশি পিস্তল, ৮১টি গুলি, চারটি ম্যাগাজিন ও ১২টি বিদেশী চাকু উদ্ধার করেছেন।
মামলায় শিক্ষক রায়হান শরীফকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের পর তার ফোন ঘেঁটে ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করা অত্যাধুনিক বিদেশি পিস্তলের বহু ছবি পাওয়া গেছে। আরও অস্ত্র আছে কি না খোঁজ নিতে সোমবার তাকে নিয়ে তার বি.এ কলেজ রোডের প্রফেসর গার্ডেন নামের বাসায় অভিযান চালানো হয়। তবে বাসা থেকে নতুন কোনো অস্ত্র উদ্ধার হয়নি।
এদিকে শিক্ষক ছাত্রকে গুলি করার ঘটনা তদন্তে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত দল। মঙ্গলবার ১১টার দিকে ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে তদন্ত শুরু করেন তারা।
এ সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডাঃ বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ সাংবাদিকদের জানান, , এখন পর্যন্ত এক পক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, আর অন্য পক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তদন্ত কাজ শেষ হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।
সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে গতকাল রাত ১২টার পর থানায় দুটি মামলা হয়েছে। একটি মামলার বাদী গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী আরাফাত আমিনের বাবা আবদুল্লাহ আল আমিন। এ মামলায় তিনি তার ছেলেকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ এনেছেন।
এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ ডিবির উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুল ওয়াদুদ বাদী হয়ে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে আরেকটি মামলা করেছেন। দুপুরে ওই শিক্ষককে আদালতে পাঠানো হবে।
সোমবার (৪ মার্চ) বিকেলে সিরাজগঞ্জের শহিদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে গুলি করেন কলেজের শিক্ষক ডাঃ রায়হান শরীফ। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার চেয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এর পর সন্ধ্যায় তাকে আটক করে থানায় নেয় পুলিশ।