স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার রূপরেখা থাকছে বাজেটে

ডিজিটাল বাংলাদেশের পর এবার ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেট বক্তৃতার শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’। এতে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজ করার কথা তুলে ধরবেন তিনি।
এছাড়া, স্মার্ট শিক্ষা, স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট কৃষি, স্মার্ট বাণিজ্য ও স্মার্ট পরিবহন ব্যবস্থার কথাও থাকবে। এজন্য ১০০ কোটি টাকার তহবিল রাখা হচ্ছে। এই তহবিল থেকে অর্থায়নের ক্ষেত্রে মূলত উদ্ভাবনী খাতে তরুণ-তরুণীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তবে এই তহবিলের অর্থ অনুদান হিসেবে দেওয়া হবে, নাকি ঋণ হিসেবে বিতরণ করা হবে, তা বাজেট ঘোষণার পর একটি নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে ঠিক করা হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ইতিমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে বছরে অন্তত একটি করে স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাসহায়ক প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ২০২৪ সালের মধ্যে ইউনিভার্সাল ডিজিটাল আইডি, ডিজিটাল কারিকুলাম, স্মার্ট ডিভাইস অ্যাকসেস, স্মার্ট বাংলা ক্যাম্পেইন, স্মার্ট হেলথ কেয়ার, স্মার্ট ট্যাক্স ব্যবস্থা, ডিজিটাল লিডারশিপ অ্যাকাডেমি উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হবে।
এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্য ধরা হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ: ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। নতুন এ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, আর গড় মূল্যস্ফীতি ধরা হচ্ছে ৬ শতাংশ। বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ৫ দশমিক ২ শতাংশের সমান। নতুন অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫ লাখ কোটি টাকা, যার মধ্যে এনবিআরকে আদায় করতে হবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মতো খাতে বরাদ্দের বড় কোনো পরিবর্তন হবে না। তবে ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ বাড়িয়ে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি এবং সুদ পরিশোধের জন্য ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা করা হবে। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ ছিল ৮১ হাজার কোটি টাকা এবং সুদ পরিশোধের জন্য ছিল ৮০ হাজার কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের উচ্চমূল্য এবং টাকার মান কমায় এই দুই খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, কিছু ভর্তুকির বোঝা কমাতে বিদ্যুৎ ও সারের দাম বাড়ানো হয়েছে। তবে বকেয়া পরিশোধ করতে ভর্তুকির জন্য সরকারের এখনো আরো অর্থ প্রয়োজন। তাছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে আগামী অর্থবছরে কৃচ্ছ্রতা অবলম্বন অব্যাহত রাখবে।
রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা : আন্তর্জাতকি মুদ্রা তহিবলের (আইএমএফ) ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ কর্মসূচির শর্ত বিবেচনায় রেখে এবার ৫ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৬৭ হাজার কোটি টাকা বেশি। আইএমএফের শর্ত অনুসারে, এমনভাবে রাজস্ব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যাতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এর আগের অর্থবছরের চেয়ে জিডিপির আরো অতিরিক্ত দশমিক ৫ শতাংশ রাজস্ব আদায় হয়। এজন্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করতে করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর লক্ষ্যে সারা দেশে বেসরকারি এজেন্ট নিয়োগসহ বেশ কয়েকটি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বাজেট ঘাটতি : আগামী বাজেটে সার্বিক ঘাটতি হবে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ। ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংকসহ অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা এবং বিদেশি উৎস থেকে ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।