বেতাগীতে ভূয়া বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন দেখিয়ে মাদ্রাসায় নিয়মবহির্ভূত শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগের পায়তারা

বরগুনার বেতগাীতে অনিয়ম তান্ত্রিক ভাবে মাদ্রাসায় শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগের পায়তারা চলছে ফুলতলা মোহাম্মদিয়া আলিম মাদ্রাসায় এমনই অভিযোগ উঠেছে।
এতে একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষানুরাগীদর মাঝে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ ও উত্তেজনা।জানা গেছে, ফুলতলা মোহাম্মাদিয়া আলিম মাদ্রাসায় ২০২০ সালে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে আগ্রহী প্রার্থীদের আবেদন গ্রহন করা হয়। ওইসময় করোনা মহামারির কারনে নিয়োগটি স্থগিত হয়ে যায়, কিন্তু যারা আবেদন করেছিলো তাদের আবেদনের সুযোগ না রেখেই এবং তাদের আবেদনের সাথে পে- অর্ডারের টাকা ফেরত না দিয়ে ১৯-০৯-২০২২ তারিখে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি টি পুনরায় প্রকাশ করা হয়। ঐ সময়ের একাধিক আবেদনকারী অভিযোগ করেন, তাঁদের কি অপরাধ তা তাঁরা জানে না।
নতুন করে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও তাঁদের পে- অর্ডারের টাকা আজও ফেরত না দিয়ে অধ্যক্ষ সেই অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। ২১ জুন ২০২২ তারিখে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর জানিয়েছে যেসব মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন করেনি সেসব প্রতিষ্ঠানের এমপিও, নতুন করে কোনও শিক্ষকের এমপিও, শিক্ষকদের পদোন্নতি, এমনকি নতুন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ এবং উচ্চতর গ্রেড প্রদান, নিয়োগে ডিজির প্রতিনিধি মনোনয়ন সহ যাবতীয়ক্ষেত্রে আবেদন বিবেচনা করবে না মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর। ডিজির প্রতিনিধি মনোনয়ন চাওয়ার আগে গভনিং বডির সভায় দাতা সদস্য সহ আরোকিছু সদস্য প্রস্তাব করেন যে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন করেই ডিজি প্রতিনিধি মনোনয়নের জন্য আবেদন করা হোক।
কিন্তু সভাপতি ও অধ্যক্ষের সাথে সভায় উপস্থিত সভ্যগণ একমত না হওয়ায় তাঁরা রেজুলিউশনে স্বাক্ষর না করেই সভা বয়কট করে চলে যান। কিন্তু পরবর্তীতে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বঙ্গবন্ধু কর্নার তৈরি না করেই অপ কৌশলের আশ্রয় নেয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, কক্ষের সামনে কোন সাইনবোর্ড নেই। মাদ্রাসার মিলনায়তনের ভেতরে বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত একাট ডিজটাল পোস্টার প্রদর্শন করে। ছবি তুলে সেটিকে ভ’য়া বঙ্গবন্ধু কর্নার হিসেবে দেখিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে ভ’য়া প্রত্যয়ন নিয়ে নিয়োগে ডিজির প্রতিনিধি মনোনয়ন চেয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন করেন। ঐ প্রতিষ্ঠানের ক্ষুব্ধ একাধিক শিক্ষক এ ধরনের প্রতারণা ও কারসাজির সরাসরি প্রতিবাদ না করতে পারলেও মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক মানিক অভিযোগ করেন, বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন এটা মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা।
কিন্তু তার বাস্তবায়ন না করে কাগজ কলমে দেখিয়ে দেওয়া একধরনের সরকারি আইন লঙ্ঘন ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে তুচ্ছ, হেয়ালিপনা ও অবমাননা করার করার শামিল এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে ধর্মীয় দৃ্িটতে সম্পূর্ণ অপরাধ। এ ধরনের অনিয়ম ও দূর্ণীতির আশ্রয় নিয়ে নিয়োগ দেওয়া হলে তাঁর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন ও আইনী পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো। স্থানীয়দের অভিযোগ সরকারি নীতিমালা অনুসরন না করেই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মো: মোস্তাফিজুর রহমান ও সভাপতি মো: মাসুম বিশ্বাস তাঁর আপন ভাই, চাচাতো ভাই, বোনের মেয়ে সহ টাকার বিনিময়ে আত্মীয়তা ও স্বজনপ্রীতিকে প্রধান্য দিয়ে নিয়োগ দেওয়ার জন্য আগভাগেই চুড়ান্ত করে রেখেছেন। ফুলতলা মোহাম্মদিয়া আলিম মাদ্রাসার সভাপতি মো: মাসুম বিশ্বাস এসব আভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যথাপোযুক্তভাবেই বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। যে প্রতিষ্ঠানে কোন বঙ্গবন্ধু কর্নার নেই। বঙ্গবন্ধু কর্নার না থাকা সত্বেও কিভাবে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে তা প্রত্যয়ন করে মাদ্রাসা অধিদপ্তরে পাঠানো হলো?
এমন প্রশ্নের জবাবে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,এটা বর্তমান গভঃনিংবডির সভাপতির সাথে আলোচনা করেই করেছি এবং বাস্তবে আমরা খুব শিঘ্রই বঙ্গবন্ধু কর্নার করে নিবো। বেতাগী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শহীদুর রহমান কে প্রত্যয়ন পত্র সরেজমিনে এসে দেখে দিয়েছেন কিনা এমন বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাদ্রাসার অধ্যক্ষের কথার উপর বিশ্বাস করে প্রত্যায়ন পত্র দিয়েছি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কর্নার তৈরি না করে তার কাছ থেকে মিথ্যা বলে কেন প্রত্যয়ন নেওয়া হলো তা পুনরায় তদন্ত করে দেখা হবে এবং অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষানুরাগীরা শিক্ষামন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ করার জোর দাবি করেছেন।