মামলা থেকে আসামীদের নাম-বাদ না দেয়ার দাবীতে ভুক্তভোগীদের সংবাদ সম্মেলন!
লালমনিরহাটের আদিতমারীতে বেপরোয়া মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় তারিনি কান্ত রায় নামক একজন কৃষক নিহত হন। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে ৪ জনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করেন। নিহত তারিনি কান্তের মামলায় আসামীদের নাম বাদ না দেয়ার দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তার পরিবার।
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫টায় লালমনিরহাট শহরের আলোরুপা মোড়স্থ “নতুন বাংলার সংবাদ” অফিসে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্টিত হয়। ওই সময় স্থানী সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। নিহত তারিনি কান্ত রায়ের ছেলে মনোরঞ্জন রায় লিখিত বক্তব্যে বলেন, আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী ইউনিয়নের চন্দনপাঠ গ্রামের কৃষক তারিনি কান্ত রায় (৬০)। তিনি প্রতিদিনের ন্যায় কৃষিকাজ শেষে ২১ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় একই এলাকার নিকটস্থ কালীস্থান বাজারে বাজার করতে যান। পথিমধ্যে রাত ৯টায় শ্রী রমেশ চন্দ্রের চায়ের দোকানের সামনে পৌঁছালে চাপারহাট দিক থেকে আসা একটি পালর্সার মোটর সাইকেল বেপরোয়া গতিতে এসে তারিনি কান্ত রায়কে ধাক্কা দিলে অনেকটা দুরে পাকা রাস্তায় ছিটকে পড়ে যায়। ওই সময় তারিনি কান্ত রায় মাথায়, হাতে ও পায়ে গুরুত্বর হাড় ভাঙ্গা আঘাত প্রাপ্ত হন।
পরে স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় তারিনি কান্ত রায়কে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য আদিতমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। ওই সময় পালর্সার মোটরসাইকেলটি যার রেজিষ্ট্রেশন নং- লালমনিরহাট-ল-১১-১৩৭৮ এর চালক আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ী ইউনিয়নের সাপ্টিবাড়ী গ্রামের এন্তাজ আলীর ছেলে নয়ন মিয়া (৩৩) ও আরোহী লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের কিশামত নগরবন্দ গ্রামের আউয়াল মিয়ার ছেলে সোহেল ওরফে সুয়েল বাবু (৩৫) কে স্থানীয় বাজারের জনতারা মোটর সাইকেলটি-সহ তাদের আটক করেন।
পরে ওই দিন রাতে স্থানীয় লোকজনকে ভুলভাল বুঝিয়ে এ মামলার ৩নং আসামী ওই উপজেলার বড় কমলাবাড়ী ইউনিয়নের বড় কমলা বাড়ী গ্রামের মৃত: আসমত আলীর ছেলে ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলাল উদ্দিন (৪০) ও ৪ নং আসামী সাপ্টিবাড়ী ইউনিয়নের সাপ্টিবাড়ী গ্রামের এন্তাজ আলী (৫০) নিজেদের জিম্মায় নিয়ে যায়।
এদিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৪ ঘন্টা চিকিৎসাধীন থাকার পর তারিনি কান্ত মারা যায়। পরে তারিনি কান্ড রায়ের লাশ দাহ শেষে তার পরিবার জিম্মাদারের কাছে কোন সমাধান না পেয়ে আদিতমারী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
থানা পুলিশ উক্ত মামলাটি নথিভুক্ত করতে গড়িমসি করলে তারিনি কান্ত রায়ের ছেলে মনোরঞ্জন রায় বাদী হয়ে উল্লেখিত ৪ জনের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের সড়ক ও পরিবহন আইনে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- সি আর ১৫১/২২। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে আদিতমারী থানার অফিসার ইনচার্জকে তদন্তপূর্ব প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। মনোরঞ্জন রায় লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত তারিনি কান্তের মামলায় ৪ জন আসামীদের মধ্যে ৩ জনের নাম বাদ দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। আমি বিভিন্ন ভাবে খোজখবর নিয়ে জানতে পারি যে, মামলা আসামী সোহেল ওরফে সুয়েল বাবু, সাবেক চেয়ারম্যান আলাল উদ্দিন ও এন্তাজ আলীর নাম বাদ দিয়ে আদিতমারী থানা পুলিশ ওই মামলার চার্জশীট আদালতে দাখিল প্রস্তুতি দিচ্ছেন। কোন ভাবে তাদের নাম বাদ দেয়া হলে আমরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছি।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদিতমারী থানার এসআই গোকুল রায় বলেন, মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়। ২/৩দিনের মধ্যে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
এ ব্যাপারে আদিতমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোকতারুল ইসলাম বলেন, আদালতের নির্দেশে মামলটি তদন্ত শুরু করেছি। যথা সময়ে আদালতে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।